ভেস্তে যাচ্ছে বরিশালের ফোরলেন সড়কের ২৫ কোটি টাকা নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশাল নগরীর মধ্য দিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে নির্মীত ফোর লেন সড়কের দুই পাশ দখল করে যানবাহন পার্কিং, নির্মান সামগ্রী ফেলে রাখা ও ভাসমান দোকান গড়ে উঠেছে। এর ফলে ফোর লেনের ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনেকাংশে ভেস্তে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
নগরীর সিএন্ডবি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফোরলেনের অধিকাংশ স্থান অব্যবহৃত থাকছে। ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের নগরীর আমতলার মোড় থেকে কাশিপুর সুরভী পেট্টোল পাম্প পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের কোথাও করে যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস।
আবার কোথাও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ী নির্মানের জন্য নির্মান সামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। আর একটি চক্র যানবাহন চলাচল না করা সড়কের বিভিন্ন স্পট দখল করে গড়ে তুলেছেন ভাসমান দোকান। সড়কের সিএন্ডবি ১ নম্বর পুল এলাকায় ফ্রেস কোম্পানীর বেশ কয়েকটি গাড়ী সড়কই সব সময় পার্কিং করা থাকে। তবে দেখার কেই নেই।
থানা কাউন্সিলর এলাকার আতিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, অনেক টাকায় ফোরলেন সড়ক করেছে। কিন্তু আমরা এ সড়ক ব্যবহার করছি না। কারণ একটু পথ গেলেই ফের কালভার্ট। আর সেখানে আগের মত এক লেন। ফলে কেই ফোরলেন ব্যবহার করছে না।
বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: জাহাঙ্গির হোসেন জানান, ফোর লেন সড়ক ব্যবহার উপযোগি নয়। এ সড়ক কারো উপকারে আসেনি। না চালানো যাচ্ছে যানবাহন আর না জনগনের কোন উপকারে আসছে। বিসিসি পরিকল্পনা ছাড়াই এ সড়ক করার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ প্রকল্পের ২৫ কোটি টাকাই ভেস্তে গেছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
জনসার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মো: মানওয়ারুল ইসলাম অলি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দর চালু হয়ে গেছে। অতি শীঘ্রই পদ্ম সেতু নির্মান হবে। তখন বরিশাল ঢাকা মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ন একটি সড়কে পরিনত হবে। কিন্তু বিসিসি যে সড়ক করেছে বা সড়ক ও জনপথ বিভাগ যে সড়কগুলো নির্মান করছে তার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে মাত্র ১০ টন। কিন্তু যখন ১০ চাকাওয়ালা গাড়ী চলবে তখন ৩০-৩৫ টন ওজন নিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। এ বিষয়টি মাথায় না রেখেই কাজ করা হচ্ছে যা সঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন।
বিসিসির প্রধান প্রকৌশলী ও তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেস্টা করার পরও তাদের পাওয়া যায়নি।
তবে বিসিসির নিবার্হী প্রকৌশলী মু. আনিসুজ্জামান জানান, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের নগরীর আমতলার মোড় থেকে কাশিপুর সুরভী পেট্টোল পাম্প পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কে ফোর লেন সড়ক নির্মানের কাজ শুরু করা হয়। ২৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে এর বিলও পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ এ সড়কের কোন সুফল পাচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন। তবে বর্তমানে কি অবস্থায় আছে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মো: খালেদ শাহেদ জানান, ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের মুল সড়কের সঙ্গে বিসিসি ফোরলেন করেছে। যা এখনো অকার্যকর। জনগণের উপকারে আসছে না। তাদের টানা এ ৪ কিলোমিটার সড়কে বেশ কয়েকটি কালর্ভাট রয়েছে। যার কোনটিতে কালর্ভাট সম্প্রসারণ করা হয়েছে আর কোনটিতে করা হয়নি। ফলে গাড়ী চালানো যাচ্ছে না ওই সড়ক থেকে।
তিনি বলেন, বিসিসির উচিৎ কালর্ভাটগুলো সম্প্রসারণ করে ছোট আকারের যানবাহন ফোর লেন ব্যবহারে বাধ্য করা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, ফোর লেনটি জন বান্দব করার জন্য তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে যৌথভাবে প্রকল্প নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ফোর লেন কাজ এখনো চলমান রয়েছে। সড়ক ব্যবহার উপযোগি করার লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া পায়রা সমুদ্র বন্দর ও পদ্ম সেতু হলে এখানকার সড়কের উপর বড় ধরনের চাপের সৃস্টি হবে। যে বিষয়ে তারা কাজ করছেন সড়ক ও জনপথের সাথে।
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |