সাঈদীর পুত্রে সঙ্গে আ. লীগ নেতাদের সুসম্পর্ক! অনলাইন ডেস্ক
সংগ্রহীত
যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে পিরোজপুরের জিয়ানগরের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাদের সুসম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় আ. লীগের অনেকে জানান, মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মাসুদ সাঈদীর হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মাননা নেন। ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা হলরুমে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে তাকে (মাসুদ সাঈদী) প্রধান অতিথি করা হয়। মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেকের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারার সুসম্পর্ক থাকায় তিনি এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরেছেন বলে অভিযোগ।
জানাগেছে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জিয়ানগরে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো অনুষ্ঠানেই উপস্থিত ছিলেন মাসুদ সাঈদী। এ অনুষ্ঠানটি এদিন স্থানীয় ভিডিও চ্যানেলে প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতিকে ঘিরে কোনও রকম আপত্তি তোলেননি উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারাসহ আওয়ামী লীগ নেতারাও। আপত্তি না তোলার কারণ হিসেবে মাসুদ সাঈদীর কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেয়ার বিষয়টি দেখছেন অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মৃধার বাড়ির সামনে এডিবি’র অর্থায়নে রাস্তা করে দিয়েছেন মাসুদ সাঈদী। এছাড়া উপজেলায় যে বরাদ্দ আসে তা আওয়ামী লীগ নেতারা মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে মিলে ‘সমবণ্টন’ করেন।
এ বিষয়ে জিয়ানগর উপজেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ইউসুফ জমাদ্দারসহ অনেকের সঙ্গে মাসুদ সাঈদীর ভালো সম্পর্ক। টিআর, কাবিখা’র ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তাদের এই ভালো সম্পর্ক। এ সম্পর্কের কারণে মাসুদ সাঈদী ওইসব অনষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, মাসুদ সাঈদী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কারণে আমি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাইনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন না হলে বিজয় দিবসকে অবমাননা করা হবে। এটা ভেবে আমি প্রতিবাদ করিনি।
তিনি বলেন, আমাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে যে ভালো সম্পর্কের অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সাড়ে ১১টায় পিরোজপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এম মতিউর রহমান দাবি করেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জিয়ানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদ্বোধনী ভাষণ দেন।
পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়ানোর সময় পিছন থেকে হঠাৎ করে মাসুদ সাঈদী পতাকা মঞ্চে উঠেন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য না দিলেও পুরস্কার বিতরণের সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বেলায়েত হোসেন এর পাশে দাঁড়ান এবং পুরস্কার দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মাসুদ সাঈদী তার লোকজনকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ছবি তোলেন এবং পরবর্তীতে ছবিগুলো উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ফেসবুক পেজে দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী এতে জড়িত নয়। মাসুদ সাঈদী পরবর্তীতে এ ধরনের আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকলে তা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিহত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সমীর কুমার দাস বাচ্চুসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির, ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সেলিম প্রমুখ।
জানাগেছে, গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় দিবসের প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন যুদ্ধাপরাধ মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার সাঈদীর ছেলে জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা এবং পুরস্কার তুলে দেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদীও রয়েছেন। এ সময় বিজয় দিবসের প্যারেডে সালাম গ্রহণ মঞ্চে উপস্থিত জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম মিজানুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বাচ্চু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান।
এরপর মাসুদ সাঈদী তার ফেইসবুক আইডি’র টাইমলাইনে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীর পুত্রের অতিথি হওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়াকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধকে অপমান বলে আখ্যায়িত করেছেন সংস্কৃতিক কর্মীরা।
আরো পড়ুন..
জিয়ানগরের ইন্দুরকানীর ওসি প্রত্যাহার
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |