এশিয়ার বৃহৎ পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মানে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ নিজস্ব প্রতিবেদক
দিন রাত যন্ত্রপাতির শব্দে মুখোরিত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ চ্যানেলের আন্ধারমানিক নদীর তীরের আশেপাশের গ্রাম। ভাবছেন মানুষ বিরক্ত? একদমেই না, বরং শব্দ না হলেই অস্বস্থি মনে করেন তারা -এমনটাই জানালেন আশেপাশের গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল রহিম জানালেন, পায়রা বন্দর নির্মানে রাত-দিন যান্ত্রপাতির শব্দে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখন ওই শব্দ না শুনলেই বেশি অস্বস্থি হয়। তখন মনে হয়-এই বুঝি কাজ থেমে রইল।
তিনি জানান, বিদেশ থেকে যখন বিশাল জাহাজ এসে নোঙর করল পায়রা বন্দরে। তখন গ্রামবাসিদের মধ্যে উৎসবের উল্লাস। স্থানীয় লোকজন বন্দর ছেড়ে নড়তেই চায় না।
কর্মকর্তারা জানান, পায়রা বন্দর নির্মানের পাশাপাশি ২৫৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যায়ে আধুনিক সুবিধা সংবলিত কংক্রিটের পাঁচ দশমিক ৬০ কিলোমিটার চার লেন রাস্তার নির্মান কাজ। নৌ-বাহিনীর তত্তাবধানে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্নের লক্ষ্য নির্ধারন করে এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। ইতোমধ্যে সড়ক নির্মানের জন্য ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে কাজ চলছে।
নির্মান শ্রমিকরা দিন-রাত অক্লান্ত শ্রম দিয়ে গড়ে তুলছেন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ পায়রা সমুদ্র বন্দর। আর নির্মান ঘিরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, পায়রা বন্দর দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে তৃতীয় এই বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না এমন বড় জাহাজ এই বন্দরে ভিড়তে পারে এমন পরিকল্পনায় নিয়েই এগোচ্ছে নির্মান কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ‘পায়রা’ নামটি বিশ্বের কাছে শান্তির বার্তাই দিবে দক্ষিণাঞ্চল।
সড়ক, নৌ ও রেলপথ পথ ব্যবহার করে দেশ-বিদেশের অর্ধেক আমদানী-রপ্তানীর মাধ্যমে ২০২৩ সালে এ বন্দরটি হবে দক্ষিণ এশিায় বৃহৎ সমুদ্র বন্দর। নেপাল ও ভুটান খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবে বন্দরটি। আর বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোর বিসিআইএমের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে পায়রা বন্দর। এমন মহাপরিকল্পনায় ১০বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ২০১৯ সালে মধ্যম আর ২০২৩ সালে পূর্নাঙ্গ আয়ের লক্ষ্য নির্ধারন করে নির্মান যজ্ঞ চলছে পায়রা বন্দরের।
বন্দর কর্তমর্তারা আরো জানান, পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজকে ১৯টি কম্পোনেন্টে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে এ তিনটি উন্নয়ন কম্পোনেন্টকে বন্দরের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কম্পোনেন্ট তিনটি জি-টু-জি এর আওতায় বাস্তবায়িত হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে এখন চলছে দ্বিতীয় ধাপের কাজ। এলএনজি টার্মিনালসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মানের জন্য লালুয়ায় প্রায় ৭ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্নের পথে।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের মূল অবকাঠামো, তীর রক্ষাবাঁধ, আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের স্থাপনা নির্মাণের জন্য চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোং লি. ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লি. সাথে ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে স্বাক্ষরিত হয়েছে তিনটি সমঝোতা স্মারকপত্র।
এছাড়া ব্রিজ, রাস্তা, বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যক অবকাঠামো, পয়ঃনিষ্কাশন, জলনিষ্কাশন, আন্তঃসড়ক সংযোগ ও রেল যোগাযোগসহ বন্দরের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ করবে সিএইচইসি। আর নদীতীর রক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে নদীতীর রক্ষাবাঁধ, বন্যা প্রতিরোধ, ভূমি ক্ষয়রোধ, আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের স্থাপনা নির্মাণ করবে সিএসসিইসি।
এমএম গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের এমডি মহিউদ্দিন আহম্মেদ মঈন বলেন, চার লেনের সড়কটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও এমএম গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সড়ক নির্মাণ এলাকায় এসেছে। সেই সঙ্গে দ্রুত কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমার প্রতিষ্ঠান শেখ রাসেল সেতু ও শেখ জামাল সেতুর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নামের সড়কটি নির্মাণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ল্যাফটেন্যান্ট জাহাঙ্গীর আলম জানান, জাহাজের নাব্যতা অনুযায়ী পায়রা বন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত আপাতত পাচঁটি পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |