AmaderBarisal.com Logo

নেছারাবাদ দরবার শরীফে মাহফিল শুরু

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি
আমাদেরবরিশাল.কম

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার ১০:১৪:১৩ অপরাহ্ন

নেছারাবাদ দরবার শরীফে মাহফিল শুরু‘মুমিনের জীবনে লক্ষ্য দুনিয়া হতে পারে না, লক্ষ্য হবে আখেরাত; তবে দুনিয়াকে সে বর্জন করবে না বরং আখেরাতের পরিপূরক হিসেবে গ্রহণ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শয়তান ও নফসে আম্মারার মতো আত্মিক শক্তি ও শত্রুর কবলে নিপতিত হয়ে মুমিন তার মাওলাকে চিনতে ব্যর্থ হয় এবং জীবনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।

মনে রাখতে হবে, দুনিয়া একটি স্টেজ মাত্র, তারপরেই রয়েছে অন্তহীন জীবন। মুমিন যদি এই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জীবনভর আমল করেও কোনো ফায়দা হবে না। লক্ষ্য যদি হয় দুনিয়া, উদ্দেশ্য যদি হয় মান-সম্মান, ধ্যান-জ্ঞান যদি হয় পদ-পদবী; তাহলে তাই হবে পরিণতি। অর্থাৎ কেউ যদি সুযোগ-সুবিধাকেই উদ্দেশ্য ধরে নেয়, তাহলে এই নেছারাবাদ কেন, বেহেশ্তেও যদি তাকে পাঠানো হয় সেখানেও তার উদ্দেশ্য অটুট থাকবে।

অর্থাৎ সে যদি শোনে, সুযোগ-সুবিধা জাহান্নামে বেশি, তাহলে বেহেশত বাদ দিয়ে সে জাহান্নামে যেতেও রাজি হবে! প্রকৃত লক্ষ্য স্থির করতে না পারলে এভাবে বাচ্চাদের মতোই হবে তার লক্ষ্যের নমুনা ও পরিসমাপ্তি। সুতরাং যতোক্ষণ পর্যন্ত মাওলার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা না আসে এবং লক্ষ স্থির না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিনের কর্তব্য হচ্ছেÑআত্মিক শত্রুর সর্বাত্মক মোকাবেলায় অব্যাহত মাওলা পাকের যেকের করা।’

আজ বৃহস্পতিবার (২২শে ফেব্রুয়ারি) ঝালকাঠির ঐতিহ্যবাহী নেছারাবাদ দরবার শরীফের ০২দিনব্যাপী বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ-মাহফিলের ০১ম দিন বাদ-মাগরিব হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.-এর একমাত্র ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর তাঁর নসীহত ও সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন।

নেছারাবাদী হুজুর আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ ফেকের ও আন্তরিকতাই হচ্ছে এখলাস এবং সর্বোচ্চ মানসিক সাধনা ও সর্বোচ্চ নিবেদনই হচ্ছে খুলুসিয়াত। কোনো মুমিন এবাদত করছে, এটা তার দায়িত্ব কিন্তু তার এখলাস ও খুলুসিয়াত যে পরিমাণ হবে, আল্লাহ তায়ালার দরবারে ঐ এবাদতের কবুলিয়াতও হবে সেই পরিমাণ। আল্লাহ আমার কাছে কী চান, আমি তা সর্বোচ্চ খুলুসিয়াতের সাথে করতে পারছি কি-না এবং কোন্ উসীলায় করছি তা নিশ্চিত করতে হবে।

একজন মুমিন সে যে দলের, যে মতের, যে ঘরানারই হোক না কেন, যদি তার ঈমানে বিকৃতি না ঘটে এবং আকীদায় বিভ্রান্তি না ঘটে তবে সে কামেল মুসলমান হিসেবে তৈরী হওয়ার যাবতীয় রসদ হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.-এর বিদ্যমান কর্মধারায় পাবে। যদি আপনি আপনার লক্ষ্য স্থির করতে পারেন এবং নিজেকে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হন তাহলে এখান থেকেই আপনি আল্লাহর কুতুবে পরিণত হতে পারবেন। দাড়ি-টুপি-জোব্বা যতোটাই আন্তরিক ও নিবেদিত হবে, ততোটাটাই আল্লাহর দরবারে গৃহিত হবে; বাতেনী মুজাহাদাই হচ্ছে জাহেরী মুজাহাদার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠী।

মনে রাখতে হবে, যে পরিবর্তনের জন্য তৈরি না, যে গোমরাহীর ওপর দৃঢ়চিত্ত; আল্লাহ তার ভাগ্যের পরিবর্তন করেন না। সুতরাং আবু জাহেলের দিল নিয়ে নবীর চাচা হওয়া সত্ত্বেও ঈমান নসীব হয় না, পক্ষান্তরে বেলালের মতো হাবশীরও নিবেদিত দিল নিয়ে হেদায়েত নসীব হয়।’

নেছারাবাদী হুজুর বলেন, ‘আমরা নিজেদের দায়িত্বহীনতাকে আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা নির্দোষ থাকার চেষ্টা করছি, এতে আল্লাহ পাকের কিছু হয়নি, ইসলামেরও কিছু যায়-আসেনি; বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা নিজেরাই। মুমিনের যে জীবন আল্লাহ তায়ালা তাবলীগে দ্বীন ও এক্বামতে দ্বীনের জন্য জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন, আমরা সেই জীবন আওলিয়ায়ে কেরাম, সলফে-সালেহীন, তাবে-তাবেয়ীন, তাবেয়ীন এবং সাহাবায়ে আজমায়ীনের অনুসৃত পথে ব্যয় না করে ইফরাত কিংবা তাফরীতের ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করে অবশেষে ইসলামই খুজে পাচ্ছি না! আফসোস এই চেষ্টা-সাধনার জন্য!! সাধনা, কষ্ট ও ত্যাগ যেই পরিমাণ হবে, সফলতা ও সার্থকতাও হবে সেই পরিমাণ; কিন্তু সেই ত্যাগ, কষ্ট ও সাধনা যদি সঠিক পথে না হয় তাহলে সবটাই হবে অর্থহীন। সুতরাং জীবনের লক্ষ্য স্থির করে সাধনা করুন।

মনে রাখবেন, যে বুযর্গ হওয়ার জন্য বুযর্গী করে সে বুযর্গ হয় না বরং যে মাওলাকে পাওয়ার জন্য বুযর্গী অবলম্বন করে, মাওলা তার অজান্তেই তার দ্বারা বুযর্গীয়াত প্রকাশ করে দেন। হযরত শাহজালাল ইয়ামনী রহ.-এর জায়নামাযের কোনো বুযর্গী নেই বরং এক্বামতে দ্বীন ও তাবলীগে দ্বীনের নিমিত্ত মাওলার জন্য নিবেদিত হওয়ায় মাওলা তার প্রয়োজনেই শাহাজালাল ইয়ামনী রহ.-এর এই ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে জায়নামাযকে নৌকার শক্তিতে পরিণত করেছেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার তৌফীক দান করুন। আমীন!’

প্রকাশ থাকে যে, উপমহাদেশের অন্যতম বুযর্গ-ওলী, দার্শনিক ও মুজাদ্দেদ হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠিত নেছারাবাদ দরবারের এই মাহফিলকে কেন্দ্র করে শুধু ঝালকাঠি নয়, পুরো দক্ষিণাঞ্চলব্যাপী এখন সাজ-সাজ রব বিরাজ করছে।

ইতোমধ্যেই দেশের নানান প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই মাহফিলে এসে হাজির হয়েছেন। এর আগে মুসল্লীদের থাকা-খাওয়া এবং প্রশাসনের সহায়তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানসহ চিকিৎসা, যোগাযোগ ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

বরাবরের মত এবারেও দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, মুহাক্কেক ওলামায়ে কেরাম গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের মাহফিলে ০৫লক্ষাধিক মেহমান আ’মলী জিন্দেগী গঠনের জন্য ইছলাহী বয়ান, বাস্তব তা’লীম ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিমিত্ত অংশ গ্রহণ করবেন।



সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ


প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার    সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০। ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।