একপাশে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা সভা, অন্যপাশে শ্রমিক খুন রহিম রেজা, রাজাপুর থেকে
ঝালকাঠির রাজাপুরের মধ্য বাজার এলাকায় চুরি-ডাকাতি রোধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা মিটিং চলাকালিন সময়েই বাজারের দক্ষিণ প্রান্তেই খলিলুর রহমান মোল্লা (৩৮) নামে এক নির্মান শ্রমিককে মাথায় জখমী আঘাত করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গতকাল শনিবার (২১ এপ্রিল) রাত ১০ দিকে উপজেলা সদরের দক্ষিন বাজার কামারপট্টি এলাকার মিয়া মাহমুদ পাখি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মরদেহ প্রথম প্রতক্ষ্যকারী ওই বাড়ির মালিক মিয়া মাহমুদ পাখিকে আটক করেছে।
৩ সন্তানের জনক খলিলুর উপজেলার পশ্চিম বাদুরতলা এলাকার আমজেদ আলীর মোল্লার ছেল পেশায় নির্মান শ্রমিক। পরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তার মাথায় দাড়ালো অস্ত্রের আঘাতের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে আজ রোববার সকালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
রোববার দুপুরে নিহতের স্ত্রী পিয়ারা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলার দায়ের করেছেন। আটক পাখিকে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
নিহতের ছেলে রবিউল ইসলাম জানায়, কয়েকদিন ধরে সদরের বাজারে স্টল নির্মানের কাজ করছিলো খলিল। সন্ধ্যার পর বাসায় বাজারের ব্যাগ রেখে ডিগ্রি কলেজ এলাকার ভাড়া বাসা থেকে বাইসাইকেল করে বাহিরে বের হন তিনি। এরপরও তাকে মন্দির এলাকার সড়কে যাতায়াত করতে দেখা গেছে তাকে।
স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে তাকে ৩/৪ জন লোকের সাথে কথা বলতেও দেখা গেছে। পরে রাত ১০টার দিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে মিয়া মাহমুদ পাখি ভবনের উত্তর পাশে মাথায় দাড়ালো অস্ত্রের আঘাতের রক্তাক্ত নিথর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্বজনরা।
নিহতের স্ত্রী পিয়ারা বেগম জানান, সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়ার পর তিনি খুব হতাশায় ভুগছিলেন বলে মনে হচ্ছিল। বাজারের ব্যাগ রেখেই বাসায় না বসে সাইকেল নিয়েই আবার বাহিরে বের হন। হত্যাকান্ডোর পাশেই খলিলের ব্যবহৃত বাই সাইকেলটি দাড় করিয়ে রাখা রয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, মোবাইলে ডেকে এনেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলেছে। মোবাইল চেক করলেই হয়তো কোন ক্লু বের হতে পারে। খলিলের দায়ের করা একটি মামলা নিয়ে নিজ এলাকার প্রতিপক্ষদের সাথে বিরোধ থাকলেও বর্তমানে বসবাসরত এলাকায় কোন শত্রু নেই বলে পরিবার জানায়।
স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী ও সস্ত্রাসীদের আখড়া। খলিল হয়তো তাদের কোন ঘটনার বা গোপন কর্মকান্ড জেনে ফেলেছিলো বলেই তাকে হাতুড়ি, অস্ত্র বা কাঠের গুড়ি দিয়ে রাতের অন্ধকারের মধ্যেই একবারে আঘাত করে খুন করে ফেলে। অন্ধকার রাত হওয়ায় ওইবাড়ির লোকজন বা আশপাশের লোকজন কোন কিছুই টের পাননি।
ঘটনার সময় ঘটনার অদূরে মধ্য বাজার এলাকায় রাত সাড়ে ৮ টার থেকেই আইনশৃঙ্খলা মিংটিং করছিলো রাজাপুর থানা পুলিশ। সভার প্রধান অতিথি রাজাপুর থানার ওসির বক্তব্য দেওয়ার মুর্হূতেই রাত ১০ দিকে হত্যাকান্ডের ঘটনা শুনে ওখান থেকেই ওসিসহ অন্য পুলিশ হত্যাকান্ডের স্থলে ছুটে যান।
রাজাপুর থানার ওসি শামসুল আরেফিন আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ের কথা স্বীকার করে জানান, অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে বাসা থেকে ওইখানে ডেকে এনে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা করলে বাড়ির মালিক মিয়া মাহমুদ পাখি গ্রেফতার করা হয়েছে পাখির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরও জানান, মোটরসাইকেল নিয়ে বাসায় ফিরে ভবনের পাশে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে ডাকচিৎকার দিয়ে রুমে গিয়ে স্বজনদের নিয়ে বাহিরে বের হন বলে পুলিশকে জানায় পাখি। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |