AmaderBarisal.com Logo

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ভোলার মুহিতের ‘লাকপা রির চূড়া’ জয়

অনলাইন ডেস্ক
আমাদেরবরিশাল.কম

২২ মে ২০১৮ মঙ্গলবার ৬:৩৭:৩১ অপরাহ্ন

লাকপা রির চূড়ায় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা ওড়ালেন ভোলার মুহিতলাকপা রি—হিমালয় পর্বতমালার একটি শৃঙ্গ। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের প্রতিবেশী হিসেবে লাকপা রির পরিচিতি রয়েছে। এভারেস্টের শৃঙ্গে উঠে উত্তর-পূর্ব দিকে তাকালেই লাকপা রিকে দেখা যায়। তবে উচ্চতায় এভারেস্টের চেয়ে ১৮০৩ মিটার ছোট এই পর্বতশৃঙ্গ।

কিন্তু ছোট হলে কী হবে, ৭০৪৫ মিটার উঁচু লাকপা রি পর্বতের আচরণ এভারেস্টের মতোই। এর শৃঙ্গে পা ফেলতে হলেও এভারেস্টের পথ ধরে যেতে হয়। তবে এভারেস্ট জয় করলেও লাকপা রির চূড়ায় কখনো ওড়েনি বাংলাদেশের পতাকা।

সেই কাজ করলেন এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী ভোলা জেলার বোরহাউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুরের এম এ মুহিত। ১৭ মে বিকেলে তিনি লাকপা রি পর্বত জয় করেন। এ নিয়ে মুহিত হিমালয়ের ১১টি শৃঙ্গ জয় করলেন।

লাকপা রি অভিযানে মুহিতের সঙ্গে আরও ছিলেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী শায়লা পারভিন, কাজী বাহালুল মজনু এবং তিনজন শেরপা।

আজ মঙ্গলবার (২২ মে) প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, লাকপা রির শৃঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে কিছু সময় অবস্থান করেন মুহিত, শায়লা ও মজনু। এরপর ২১ মে কাঠমান্ডু ফিরে আসেন তাঁরা।

প্রথম আলোকে মুহিত বলেন, বাংলাদেশ থেকে ২৯ এপ্রিল নেপালে রওনা দেন তাঁরা তিনজন। চার দিন কাঠমান্ডু থাকার পর লাকপা রির মিশন শুরু করেন। এ জন্য তিব্বতের দিকে যেতে হবে। অনুমতিও নিতে হবে চায়না-তিব্বত মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিএমএ) কাছ থেকে। তিব্বত দিয়ে যাওয়া ভীষণ কষ্টের। কারণ সেখানে নেপালের চেয়ে বেশি ঠান্ডা থাকে। বাতাসের গতিও বেশি। অক্সিজেনের অভাবও কিছুটা বেশি থাকে।

সিপিএমএর অনুমতি নিয়ে ৩ ও ৪ মে তিব্বতের কেরুং শহরে থাকেন মুহিত বাহিনী। শহরটি বেশ ঠান্ডা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরটির অবস্থান ৯০০০ ফুট উঁচুতে। কেরুং শহরে থেকে মুহিত তাঁর দলবল নিয়ে চলে যান তিং রি শহরে। এই শহরে ঠান্ডা আরও বেশি। কারণ শহরটি ১৪ হাজার ২০০ ফুট উঁচুতে।

তিং রি থেকে ৭ মে শুরু হয় লাকপা রি জয়ে চূড়ান্ত অভিযান। এদিন চলে আসেন তাঁরা এভারেস্টে বেসক্যাম্পে। বেসক্যাম্প থেকে মিডল ক্যাম্প হয়ে আসেন এভারেস্টের অ্যাডভান্সড ক্যাম্পে। এটি ২১ হাজার ফুট উঁচুতে। বেসক্যাম্পে আসতে আসতে ১৬ মে চলে আসে। এখান থেকে ১৬ মে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মুহিত, শায়লা, মজনু আর তিনজন শেরপা যেতে থাকেন লাকপা রি পর্বত চূড়ায়। তাঁদের পাশাপাশি ইউরোপ থেকে আসা আরও দুটি দল লাকপা রি রওনা দেয়।

কিন্তু শুরু হয় বিপত্তি। বৈরী আচরণ শুরু করে তুষার রাজ্য। ইউরোপের দল দুটি এই আচরণে টিকতে না পেরে ফিরে যায়। তবে এগিয়ে যেতে থাকেন মুহিতরা। রাত গড়িয়ে ভোরে সূর্যের আলো ছড়াতে শুরু করে তুষারের ওপর। চোখের সামনে লাকপা রি। কিন্তু এর চূড়া আরও বহু দূর। একজন আরেকজনের সঙ্গে দড়ি বেঁধে চূড়ার দিকে এগোতে থাকেন।

এর মধ্যে আরেক দফা বিপত্তি। শক্ত বরফের পথ দিয়ে চলার সময় বড় ফাটলের মধ্যে পড়ে যান শায়লা পারভিন। টেনে তুলতে তুলতে দুপুর হয়ে আসে। এরপর আবারও যাত্রা। অবশেষে বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া তিনটায় লাকপা রির শৃঙ্গে পা ফেলেন মুহিত, শায়লা ও মজনু। মেলে ধরেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুরে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি জন্ম তাঁর। বাবা মনোয়ার হোসেন মিয়া ও মা আনোয়ারা বেগম। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। পরিবারে তাঁরা ৪ বোন ও ৩ ভাই। বড় বোনের নাম জাকিয়া বেগম আঁখি। পুরান ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে এসএসসি (১৯৮৫), নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি (১৯৮৭), এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বি.কম. (১৯৮৯) পাস করেন। পেশা জীবনে তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।

পর্বতারোহণ: ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে বন্ধুদের সাথে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বন্ধুদের মধ্যে প্রথম ১৮০০ ফুট উচ্চতায় উঠে পর্বতারোহণ নেশায় মগ্ন হন তিনি। সেই নেশাই প্রেরণা দেয় তাঁকে। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ও কালাপাথার ট্রেকিংয়ে অংশ নেন এবং ভারতের দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এছাড়াও প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন সময় হিমালয়ের চুলু ওয়েস্ট (মে ২০০৭), মেরা (সেপ্টেম্বর ২০০৭), বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলুর (মে ২০০৮), সিংগু, ও লবুজে শৃঙ্গে আরোহণ করেন তিনি।



সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ


প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার    সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০। ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।