শীতের মধু ‘খেজুর রস’ আহরণে ব্যস্ত উপকূলের গাছিরা রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী থেকে

হালকা কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় উপকূলে এখন শীতের আমেজ চলছে। শীত মৌসুম শুরুর সাথে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে উপকূলীয় পিরোজপুর জেলার কাউখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুরু হয়েছে শীত মধু খেজুর রস আহরণের মৌসুম।
রস আহরণে গাছিরা এখন খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। এ মৌসুমে আবহমান বাংলায় খেজুর রস আহরণ,খেজুর গুড় আর নবান্নের উৎসব একটি প্রাচীন ঐতিহ্য । আর খেজুর রসের পিঠা পায়েস বাংলার উপাদেয় খাদ্য তালিকায় এখনও জনপ্রিয়।
কৃষকরা জানান,বছরজুড়ে অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতকালে উপকূলের চাষিদের কাছে খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। কারণ এ গাছ দিচ্ছে শীত মৌসুম জুড়ে আহরিত হয় সুমিষ্ট রস। আর এ রস জ্বালিয়ে ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়।
খেজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার মৌতানো স্বাদ ও ঘ্রাণ সর্ম্পূণ ভিন্ন। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে। শীতের সকালে খেজুর রস পান শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দেয়। খেজুর গুড় আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। খেজুরের নলেন গুড় ছাড়া শীত মৌসুমের পিঠা খাওয়া জমেনা। খেজুর রস গ্রাম বাংলায় শীত উদযাপনের সাথে মিলে মিশে আছে।
পিরোজপুরের উপকূলে কৃষকরা নতুন ধান সংগ্রহের পাশাপাশি খেজুর রস আহরেণর প্রস্তুতি শুরু করেছে। এখন চলছে খেজুর গাছের ডগা চাছার কাজ। এরপর চাছা ডগায় বাশের তৈরি বিশেষ নল লাগিয়ে সংগ্রহ করা হবে ফোটায় ফোটায় রস। মাটির হাড়িতে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। তবে আজকাল প্লাস্টিকের বোতলেও খেজুর রস আহরণ করে চাষিরা। শীতের পুরো মৌসুম জুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি,পায়েস খাওয়ার পালা। আর কিছুদিন পর নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রাম-বাংলা।
পিরোজপুরের কাউখালীর জয়কুল এলাকার গাছি জাহিদ মিয়া(৫৫) জানান, গাছের ডগা চেছে বাশের খিল লাগানোর কাজ চলছে। অল্পদিনের মথ্যেই রস আহরণ শুরু হবে।
কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী আজিম শরীফ বলেন,খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর পরিকল্পিত আবাদ তেমন নেই। উপরন্তু নির্বিচারে খেজুর গাছ উৎার করা হচ্ছে। যা পল্লী বাংলার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্ট রস,গুড় আহরণে কেবল আমদের রসনা তৃপ্তির জন্য নয় আমাদের পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির ভারসাম্য সুরক্ষায় খেজুর গাছের আবাদ সম্প্রসারণ জরুরী।
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |