বরিশাল কেন্দ্রীয় কারা ফটক থেকে আটক গম নিয়ে লুকোচুরি
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক থেকে আটক গম নিয়ে পুলিশ ও কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলছে লুকোচুরি। আটকের দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই গম নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি পুলিশ। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই গম রেশনের। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসেই কারারক্ষীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণে গম নগরীর হাটখোলার একটি দোকানে কারাগারের জেলার ইউনুস জামানের নির্দেশে বিক্রি করা হয়। কারাগারের রেশন গোডাউনের দায়িত্বে থাকা মামুন মিনা নামে এক কারারক্ষীর মাধ্যমেই এই গম পাচার করা হয় বাইরে। শনিবারও প্রতি মাসের মতো এ মাসের গম বাইরে বিক্রির উদ্দেশে নেয়া হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ কারা ফটকের সামনে অবস্থান নেয় এবং সংবাদ অনুযায়ী
তারা হাটখোলা এলাকা থেকে দুটি ভ্যানে বোঝাই ২২ বস্তা গম জব্দ করেন। অপর
একটি ভ্যানে বোঝাই ১১ বস্তা গম একই সঙ্গে পুলিশ জব্দ করলেও কারারক্ষীরা ওই
গম নিয়ে পুলিশের সঙ্গে টানাহ্যাঁচড়া করে। আর সেই ছবি তুলতে গিয়ে যুগান্তরের
ফটো সাংবাদিক শামীম আহম্মেদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় ৮-১০ জন
কারারক্ষী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, জেলার ইউনুস জামানের নির্দেশেই শামীম আহম্মেদকে
নির্যাতন করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষ আইওয়াশের জন্য ৫ জনকে বরখাস্ত করলেও এ
হামলার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
এমনকি সাংবাদিক শামীম আহম্মেদেরও অভিযোগ ছিল জেলার ইউনুস জামানের নির্দেশেই
তার ওপর এ হামলা চালানো হয়েছিল। যে বিষয়টি সিনিয়র জেল সুপার ও ডিআইজি
প্রিজনও অবগত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শামীম আহম্মেদ। তবে গম চুরি ও আটকের
বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কয়েকজন কারারক্ষী এ প্রতিবেদককে জানান, এ কারাগারে প্রায় ২৮০ জন কারারক্ষীর
জন্য সরকার থেকে দেয়া ভালো মানের রেশন এসে থাকে। দীর্ঘদিন রেশন গোডাউনের
দায়িত্বে থাকা মামুন মিনা তার কয়েকজন সহচরী সঙ্গে নিয়ে নিুমানের গম কিনে
এনে কারাগারের রেশন গোডাউনে রাখে। এই রেশনের মান নিুমানের হওয়ায় কেউই নিতে
রাজি হয় না। পরে এসব বাইরে বিক্রি করে দেয় মামুন মিনা। যার ভাগ নিতে ভোলেন
না জেলার ইউনুস জামান। এসব কর্মকাণ্ডের সহযোগী হিসেবে রয়েছে কারাগারের
গোয়েন্দা নিরাপত্তা রক্ষী জুয়েল মিঞা।
গম বাইরে বের হওয়ার বিষয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ইউনুস জামান
জানান, এ গমগুলো রেশনের। তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। এসব কর্মকাণ্ডে
সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন অভিযুক্ত মামুন মিনা ও জুয়েল মিঞা। তারা
বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের এসআই মাইনুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত জব্দকৃত গমের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। গম জব্দের সময় কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তারা। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ রয়েছে। তা এখনও আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি।-যুগান্তর
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |