আগুনে নিহত অন্তত ৪১, আরো লাশের খোঁজ চলছে
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে বহুতল একটি বাড়িসহ কয়েকটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক লাশ। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে হাসপাতালের বাতাস।
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৫২ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডস্থলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাঁটানো এক বোর্ডে ৪১ মরদেহ উদ্ধারের তথ্য দেওয়া হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ বা আহত হয়ে ৪১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক (অপারেশন, মেনটেন্যান্স) দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মরদেহ মিলেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে উদ্ধারকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর নিহতের সঠিক তথ্য জানা যাবে বলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ।
এদিকে আগুন নেভাতে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছেটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন। বুধবার দিবাগত রাত সোয়া চারটার দিকে তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে ৩টা ৪৮ মিনিটে পানি নিয়ে হেলিকপ্টার দুটি ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেয়। এরপর আকাশ থেকে পানি ছেটানো হয়।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ জানান, বুধবার রাত ৩টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সাড়ে ৩টার দিকে ৪টিসহ মোট ১৫টি ব্যাগে ভরে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনও ব্যাগে একাধিক লাশও আছে।
ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন রাত আড়াইটার পর সাংবাদিকদের বলেন, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে।
স্বজনদের খুঁজছেন অনেকে: অগ্নিকাণ্ডের পর খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করছেন পুড়ে যাওয়া ভবনগুলোর আতঙ্কিত বাসিন্দারা। ঘটনাটির পর পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আবার হঠাৎ জ্বলে উঠতে দেখা গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর বাসা থেকে বেরিয়ে আসা মোহাম্মদ কাজী তানভীর অপেক্ষা করছেন ঘটনাস্থলে। তিনি কখন আগুন নিভে গিয়ে সব স্বাভাবিক হবে তার অপেক্ষায়। তানভীর বলেন, ঘটনাস্থলে দু’টি কার দাঁড়িয়ে ছিল। সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এখন। সব পুড়ে ছাই। আশেপাশে বাসায় যারা ছিল অনেকে লাফ দিয়ে আবার অনেকে স্বাভাবিকভাবে নেমেছে। তবে আমাদের স্বজনদের অনেকেরই খোঁজ পাচ্ছি না। জানি না তারা কোথায়।
একই এলাকার রাসেল আহমেদ বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে একযোগে আগুন নেভাতে কাজ করে যাচ্ছে এলাকাবাসী, তবু আগুন নিভছে না। আমি এখানে যে হোটেলটিতে কাজ করতাম সেটিও পুড়ে ছাই। আমার সঙ্গে কাজ করা অন্যদের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ঠিক কখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে বুঝতে পারছি না। একটু আগেই সবকিছুই ঠিক ছিল। এখন সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে।
পরিবারের সদস্যদের পাগলের মত খুঁজেছেন হোসনে আরা নামের এক নারী। তিনি
যাকে পাচ্ছেন তাকে জিজ্ঞেস করছেন ১৩ বছরের ছেলে সোহেলের কথা। কিন্তু তার
ছেলের কোনো হদিস মিলছে না। আগুনের ঘটনার সময় একসঙ্গে নেমে এসেছিলেন ভবন
থেকে।
অগ্নিকাণ্ড নেভানোর তদারকি করতে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে সব কিছু তুলে ধরা হবে।
ঢামেকে ভিড়: আগুনে দগ্ধসহ আহত কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ
(ওসি) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রাজধানী চকবাজার থানার চুরিহাট্টা নামক
স্থানে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণে দগ্ধ ১৫ জন বার্ন ইউনিটে এবং
জরুরি বিভাগে ২৬ জন রোগীকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক হোসাইন ইমাম মিডিয়াকে ব্রিফ করে জানান, দগ্ধ ১০ জন হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
হাসপাতালে রয়েছেন আলামিন (২৫), রিমন (২৮), সিয়াম (২৩), রেজাউল (২১), বাবুল (২৮), শহিদ (৫২), শহিদুল্লাহ (৫০), করিম (৫০), শামীমুর রহমান (৪২), সাইফুল (৩৫), সালাউদ্দিন (২৬), জাকির হোসেন (৫০), মাহমুদ (৫০), লামিম (১২), আনোয়ার (৫৫), সালাউদ্দিন (৩৫), পীর মোহাম্মদ (৪৭), কাউছার (৪৫), সোহেল (৩৫), পলাশ (৩৫), জাহাঙ্গীর (৩৫), সালাম (৩৫), রবিউল (২৭), মন্জুরুল আলম (৪৫), জিয়াউদ্দিন (২৪)।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশে একটি কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। সন্ধ্যা থেকে সেখানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সময় ওই কমিউনিটি সেন্টারে যাচ্ছিল বরযাত্রী। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রিকশায় থাকা এক নারী ও তার সন্তান দগ্ধ হন। তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান বলেও খবর ছড়িয়েছে। তবে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি। এদিকে অনেক মানুষ আহত ও ঘটনাস্থলে একাধিক লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে বলেও দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ, বাংলা নিউজ, বাংলা ট্রিবিউন
|