| ‘আব্বা, এনামুল পুইড়া মইরা গেছে’
রাজধানীর চকবাজার এলাকায় রাজ্জাক ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় হাসপাতালে মানুষের ভিড়। স্বজনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী। কেউ ডুকরে কাঁদছেন। কেউ স্বজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের চিত্র এমনই হৃদয়বিদারক। লাশের সংখ্যা বাড়ছে, আর মানুষের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ।
তুহিন নামের একজন কেঁদে মোবাইল ফোনে বলছে, ‘আব্বা, আমি তুহিন, এনামুল পুইড়া মইরা গেছে। আমি আর রাজীব খুঁইজ্যা খুঁইজ্যা ঢাকা মেডিকেল মেডিকেল এসে তাঁকে খুঁইজ্যা পাইছি।’
এনামুলের পুরা নাম কাজী এনামুল হক অভি। তিনি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে সদ্য একাউন্টিংয়ে মাস্টার্স পাস করেছিলেন। রূপালী ইনস্যুরেন্সে ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এনামুলের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ। তিনি ওই এলাকায় থাকতেন। রাতে দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। তুহিন, কাজী আর নিহত এনামুল সমবয়সী। সম্পর্কে তুহিনের ভাতিজা এনামুল।
এনামুল হকের ভাই চকবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কাজী ইউসুফ বলেন, গতকাল রাতেও সেখানে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল সে। হাজী বাল্লু রোডের একটি মেসে থাকতেন এনামুল।
কাজী ইউসুফ বলেন, রাতে খোঁজাখুজি করেছি, পাইনি। ভোরে চলে গিয়েছিলাম। সকালে এসে লাশ খুঁজে পেয়েছি। তারা মরদেহ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। ময়নাতদন্ত হওয়ার পর মরদেহ পটুয়াখালীতে নিয়ে যাবেন।
ঢামেকে ৪১ মরদেহ শনাক্ত: আগুনের ঘটনায় নিহত ৭০ জনের মধ্যে ৪১ মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন নারী, দুই শিশু ও ৩৭জন পুরুষ।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাসপাতালের মর্গে তাদের মরদেহ শনাক্ত করা হয়।
পরিচয় শনাক্ত হওয়া নিহতরা হলেন- রাজু (৩০), তার ভাই মাসুদ রানা (৩৫), সিদ্দিকুল্লাহ (৪৫), আব বকর সিদ্দিক (২৭), আলী মিয়া (৭৫), মোশাররফ হোসেন (৩৮), কামাল হোসেন (৫২), ইয়াসিন খান রনি (৩২), জুম্মন (৬৫), এনামুল হক (২৮), মজিবর হাওলাদার (৪৫), মুফতি ওমর ফারুক (৩৫), মোহাম্মদ আলী (৩২) ও তার ভাই আবু রায়হান (৩১), তার ছেলে আরাফাত (০৩), ইমতিয়াজ ইমরোজ (২৪), হেলাল (৩০), ওয়াফিউল্লাহ (২৫), সোনিয়া (২৮), স্বামী মিঠু (৩৫), তাদের ছেলে শাহিদ (০৩), রহিম দুলাল (৪৫), হিরা, নাসির, মঞ্জু, আনোয়ার, কাওচার, শায়লা খাতুন, আরমান হোসেন রিমন, মামুনুর রশীদ, আবু তাহের, রুবেল হোসেন, সৈয়দ সালাউদ্দিন, মুসা, ইলিয়াস মিয়া, মিজানুর, আসিফ, মো. হোসেন বাবু, খলিলুর রহমান সিরাজ, নূর ইসলাম হানিফ, নবীউল্লাহ খান।
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ | |