শিশুদের আঁকড়ে রেখেছে ‘আঁচল’
সাইদুল ইসলাম মন্টু, বেতাগী (বরগুনা) থেকে::: শিশুদের সুরক্ষার জন্য সাঁতার কেন্দ্রের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপদ দিবাযত্ন কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে আঁচল। আঁচল শিশুদের নিরাপদে রাখতে তাদের বেঁচে থাকা ও বিকাশে একটি সমন্বিত কার্যকরি কৌশল। যেখানে শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক তত্বাবাধন করা হয়।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ৭টি ইউনিয়নে ১২০টি আঁচল কেন্দ্র রয়েছে। ১ থেকে ৫ বছরের শিশুকে এসব কেন্দ্রে রেখে সুরক্ষা দেওয়া এবং সচেতন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কেন্দ্র পরিচালনায় যিনি এ কাজ করেন তাঁকে ‘আঁচল মা’ বলা হয়। তাঁর সঙ্গে একজন সহকর্মী থাকেন।
আঁচল মা হিসেবে যাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যারা ছড়াগান, গল্পবলা, কবিতা আবৃত্তি এসব সকাজে পারদর্শী এবং হাঁসি মূখি, প্রানবন্ত ও উচ্ছল ধরনের যাদের অনেকেই নারী। প্রতিটি আঁচলে প্রশিক্ষিত ‘আঁচল মা’ (যতœকারী) সপ্তাহে ৬ দিন শিশুদের ছড়া, ছড়াগান, আবৃত্তি, গল্প বলা, ছবি আঁকা শিখিয়ে থাকেন। শিশুদের রং-পেনসিল খাতা দেওয়া হয়।
এর ব্যতিরেকে প্রত্যেক শিশুর জন্য আঁচল কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ যেমন- টিফিন বক্স, পানির জগ, গ্লাস, মগ, সাবান, তোয়ালে এবং শিশুদের জন্য নানা ধরনের খেলার সামগ্রী। আয়োজনও করা হয় খেলাধুলা। ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করা, খাবারের আগে সাবান দিয়ে হাতধোয়াসহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও শিশুদের শেখানো হয়।
‘আঁচল মা’ শিশুর প্রারাম্ভিক বিকাশের সুরক্ষার কাজটি পরম মাতৃ¯েœহে করে থাকেন। দুপুর ১ টার পরে কেন্দ্র থেকে বাবা-মা এসে শিশুদের নিয়ে যায়। বেতাগী পৌর এলাকার একজন ‘আঁচল মা’ মন্দিরা বলেন, সাধারণত সকাল ৯ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত সময়ে বাবা- মা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ সময় এ অঞ্চলে শিশু পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে থকে। আমরা ওই হিসাব করে শিশু সুরক্ষায় এরকম উদ্যোগ গ্রহন করেছি।’ মোকামিয়ার সামিয়া (৭), আহম্মেদ জুবায়ের (৮), মো: কামাল (৭), মো: সানা উল্লা (৭), কাজিরাবাদের অলি উল্লাহ (১০), মোমেনা (১০), সুরাইয়া (৯) সিয়ম (৮) এসব শিশুদের শারীরিক, বুদ্ধির, সামাজিক , আবেগীয় এবং নৈতিকতা ও মূল্যেবোধের বিকাশ হয়েছে। ভাষাগত দক্ষতাও অর্জন করছে।
এ কার্যক্রম বাস্তাবয়ন করছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিচার্স, বাংলাদেশ ( সিআইপিআরবি) নামের একটি বেসরকারি সংগঠন। অস্টেলিয়ার দ্যা জজ ইনষ্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের কারিগরি সহায়তায় এতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের দ্য রয়াল ন্যাশনাল লাইফবোর্ট ইনস্টিটিউশন।
জানা গেছে, সব বয়েসী মানুষের মধ্যে ১ থেকে ৪ বছর বয়সের শিশুদের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে ৫ থেকে ৯ বছরের শিশুদের তুলনামূলক কম ঝুঁকি। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমেছে। সকাল ৯ টা থেকে ১টা পর্যন্ত কেটে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, সাপের কামড়, বিষপান, পানিতে ডুবে যাওয়া এসব দুর্ঘটনা থেকে শিশুরা রক্ষা পাচ্ছে। মায়েরাও স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, পাশাপাশি তাদের মাঝে পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধসহ নানা বিষয় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষভাবে পানিতে ডুবে যাওয়া জনিত দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাচ্ছে। শিশু তাহরাতের মা মোসা: ফারজানা আক্তার বলেন, শিশুরা দীর্ঘ সময় আঁচল কেন্দ্রে অবস্থানের কারনে আমি নিশ্চিন্তভাবে সাংসারিক কাজ করতে পারছি। শিশুরাও অনেক কিছু শিখতে পারছে। বিবিচিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওয়াব হোসেন নয়ন। তিনি জানান, এখানকার শিশুরা আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। আরো বেশি শিশুকে আঁচল কেন্দ্রে আনার জন্য আরো আঁচল কেন্দ্র স্থাপনের দাবি ।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিচার্স, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) আঞ্চলিক সন্বয়কারী মো: মোতাহের হোসাইন জানান, শিশুদের জন্য ইনজুরি ঝুঁকিমুক্ত ও আনন্দমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করা আঁচল কর্মসূচির লক্ষ্য। যাতে শিশুদের শারীরিক বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ, ভাষার বিকাশ, সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশ, নৈতিকতা ও মূল্যেবোধের সার্বিক বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |