AmaderBarisal.com Logo

এক যে ছিল রুদ্র: রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ২৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী


আমাদেরবরিশাল.কম

২১ জুন ২০২০ রবিবার ৫:০১:৫৮ অপরাহ্ন

ভালো আছি ভালো থেকো/আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো… এই অত্যন্ত জনপ্রিয় গানের স্রষ্ঠা রুদ্র কি এখন ভালো আছেন? আপন মানুষেরা কি তাঁকে চিঠি লিখছেন আকাশের ঠিকানায়? উত্তরগুলো জানার কোনও উপায় নেই। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে কবিতার খাতা ফেলে চলে গেছেন মৃত্যুলোকের ওপারে। মৃত্যুদিনে এই অকাল প্রয়াত কবির জন্য অফুরন্ত প্রার্থনা।

এম,এইচ,চুন্নু।।আমাদের বরিশাল।

তাঁর লেখা বিখ্যাত একটি গান আছে- ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো দিও তোমার মালাখানি বাউলের এই মনটারে ভিতর-বাহিরে অন্তরে-অন্তরে, আছো তুমি হৃদয় জুড়ে পুষে রাখে যেমন ঝিনুক, খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ তেমনি তোমার নিবিড় চলা, ভিতরেরই বন্দরে আমার ভিতর-বাহিরে অন্তরে-অন্তরে, আছো তুমি হৃদয় জুড়ে ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাঁপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম তেমনি তোমার নিবিড় ছোঁয়া, গভীরেরই বন্দরে আমার ভিতর-বাহিরে অন্তরে-অন্তরে, আছো তুমি হৃদয় জুড়ে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সত্তর দশকের অন্যতম জনপ্রিয় কবি। প্রতিশ্রুতিশীল এই কবির প্রতিভা পূর্ণ বিকশিত হওয়ার আগেই মাত্র পঁয়ত্রিশ বয়সে মৃত্যু বরন করেন ১৯৯১ সালের ২১ জুন তারিখে।আজ সেই বাঙালীর হ্নদয় জুড়ে থাকা প্রিয় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসভবনে আকস্মিক হ্নদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মূলত কবি হলেও কাব্য চর্চার পাশাপাশি সঙ্গীত, নাটক, ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও ছিলেন সমান উৎসাহী। রুদ্র চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। ফলে ব্যক্তি রুদ্র ও কবি রুদ্রের সমগ্র শিল্প সাধনা ছিল দেশ, মানুষ ও মানুষ্যত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে। রুদ্রের মায়ের নাম শিরিয়া বেগম, বাবার নাম শেখ ওয়ালীউল্লাহ। তাদের স্থায়ী নিবাস বাগেরহাট জেলার মংলা থানার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে, তবে পিতার কর্মস্থল ছিল বরিশাল। তাঁর বাবা পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। দশ ভাই বোনের মাঝে তিনিই ছিলেন সকলের বড়। বাড়ির পাশেই ছিল নানা বাড়ি, তাই ছোটবেলার অধিংকাশ সময়টাই কবি তাঁর নানাবাড়িতে কাটিয়েছেন। আর সেই নানাবাড়ির পাঠশালাতেই তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। এমনকি লেখালেখির আগ্রহও সৃষ্টি ঐ নানাবাড়ি থেকেই। নানাবাড়িতে সেসময় ‘বেগম’ আর কলকাতার ‘শিশুভারতী’ পত্রিকা আসত নিয়মিত। বলাই বাহুল্য যে শিশুমনে তৈরি হয়ে গিয়েছিল সাহিত্য প্রেমী একটা সত্ত্বার। ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এমএ পাস করেন রুদ্রের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সাতটি। এরমধ্যে রয়েছে উপদ্রুত উপকূল, ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম, মানুষের মানচিত্র, মৌলিক মুখোশ, ছোবল ইত্যাদি। রুদ্র কিছু গল্প আর গানও লিখেছেন। রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্মসম্পাদক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ সংগীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রকাশনা সচিব। বিগত স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে রুদ্র সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। ১৯৮০ সালে তিনি পেয়েছিলেন মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিখ্যাত ও বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন ১৯৮১ সালে। কিন্তু তাঁদের এই দাম্পত্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না ১৯৮৬ সালে ঘটে বিবাহ বিচ্ছেদ। এবং কয়েক বছর পর ১৯৯১ সালে মারা যান রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

 ছাত্রজীবনেই রুদ্রর দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়, ‘উপদ্রুত উপকূল’ আর ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’। প্রথম বইটির প্রকাশক ছিলেন আহমদ ছফা। দুটি বইয়ের জন্যেই রুদ্র যথাক্রমে ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে সংস্কৃতি সংসদ প্রবর্তিত মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। রুদ্র ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা-যুগ্ম সম্পাদক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রকাশনা সচিব।

দাম্পত্য ও বিচ্ছেদ পরবর্তী জীবনঃ

রুদ্র বিয়ে করেন ২৯ জানুয়ারি, ১৯৮১ সালে। স্ত্রীর নাম লীমা নাসরিন। পরবর্তীকালে তিনি তসলিমা নাসরিন নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন ও নিজের বিতর্কিত লেখালেখির জন্য আলোচিত হন। তসলিমা মূলত ছিলেন চিকিৎসক। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। রুদ্র ও তসলিমার পরিচয় লেখালেখির সূত্র ধরে। পরিচয় ক্রমে রূপ নেয় প্রণয়ে। এ সময় তাদের সঙ্গী ছিলেন কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী। কবি হিসেবে রুদ্র তখন মোটামুটি পরিচিত। তসলিমাও তখন মেডিকেল ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চায় অগ্রণী; সম্পাদনা করেন ‘সেঁজুতি’ নামে একটি অনিয়মত সাহিত্যপত্র। রুদ্র বিয়ে করেছিলেন সামাজিক প্রথা ভেঙে, অভিভাবকের অমতে। রুদ্র-তসলিমার দাম্পত্য জীবন ভালোই কাটছিল। রুদ্রের উৎসাহ ও প্রেরণায় তসলিমাও পুরোপুরি জড়িয়ে যান লেখার জগতের সাথে। এই অবদানকে তসলিমা অস্বীকার করেননি। তার ভাষ্যে-

“রুদ্রকে আমি আমার সতেরো বছর বয়স থেকে চিনি। সেই সতেরো বছর বয়স থেকে রুদ্র আমার সমস্ত চেতনা জুড়ে ছিল। আমাকে যে মানুষ অল্প অল্প করে জীবন চিনিয়েছে, জগৎ চিনিয়েছে- সে রুদ্র। আমাকে যে মানুষ একটি একটি অক্ষর জড়ো করে কবিতা শিখিয়েছে- সে রুদ্র।”

কিন্তু রুদ্র-তসলিমার এই সুখের সংসার স্থায়ী হয়নি। ছয় বছর দাম্পত্য জীবন শেষে তারা আলাদা হয়ে যান। ১৯৮৬ সালে উভয়ের সম্মতিতে তালাক হয়। বিচ্ছেদের পর রুদ্রর বিরুদ্ধে তসলিমা নানারকম অভিযোগ তুলেছেন। এক পর্যায়ে গোটা পুরুষজাতির বিরুদ্ধেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার কলম। এ সময় ‘পূর্বাভাস’ পত্রিকায় রুদ্র একটি চিঠি লেখেন-

আর্ত আবেদন

আশির দশকের তরুণ লিখিয়েদের মধ্যে তসলিমা নাসরিন ইতিমধ্যে তরুণ কবি হিসেবে নিজেকে স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপিত করতে পেরেছেন। অগভীর ছুঁইয়ে যাওয়া হলেও তার ভাষা মেদহীন এবং বেশ জোরালো। মোটেই মেয়েলি গন্ধ নেই।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন পত্রিকায় তার কলাম-বন্দী রচনাগুলোর ভেতর পুরুষ-বিকারগ্রস্ততা লক্ষ্য করছি। লেখাগুলো ঝগড়াটে মেজাজের।
অগ্রজ লেখক হিসেবে আমার, তার সম্ভাবনার প্রতি একধরনের দুর্বলতা রয়েছে। আমরা সবাই জানি তার দাম্পত্য জীবন সংঘাতময়। তার জন্য প্রথমত দায়ী রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে আমি মোটামুটি সকল পুরুষদের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রচন্ড ধিক্কার জানাচ্ছি।
আশা করছি, এরপর আপনার ক্ষুরধার লেখনি থেকে পুরুষেরা রেহাই পাবে। আপনি বরং সৃজনশীল লেখার ব্যাপারে সিরিয়াস হন।                                       
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
ঢাকা

পত্রিকায় প্রকাশিত চিঠিতে রুদ্র আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেননি কিংবা তসলিমার উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের জবাবও দেননি। বিচ্ছেদ তাকে কষ্ট দিয়েছে, সে কথা বিভিন্ন সময় নানাভাবে তিনি বলেছেন। রুদ্রের একটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সাংবাদিক শিহাব মাহমুদের করা একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়- রুদ্র ছিলেন বরাবরই উড়নচণ্ডী স্বভাবের ও যাবতীয় নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধ শিবিরবাসী। তিনি ভেবেছিলেন তসলিমাও তারই মতো। প্রচলিত নিয়ম-নীতির প্রতি একধরনের অবজ্ঞা তিনি তসলিমার মাঝেও দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি আবিষ্কার করেন, তসলিমার ভেতর, তার ভাষ্যমতে, এক গোঁড়া, সংকীর্ণ রমণীর বসবাস। তিনি নাকি তার মতো করে গড়ে নিতে চেয়েছিলেন রুদ্রকে। তাই সংঘাতটা অনিবার্যই ছিল।

বিচ্ছেদ ঘটার পরেও রুদ্র মেয়েদের ঢালাওভাবে দোষারোপ করতে চাননি, যদিও জীবন সম্পর্কে মেয়েদের ধারণা খুবই সংকীর্ণ বলে তার মনে হয়েছে। আসলে তিনি চেয়েছিলেন প্রচলিত দাম্পত্য সম্পর্কের বিপরীতে একধরনের মুক্ত দাম্পত্য সম্পর্ক পালন করতে। কিন্তু তসলিমা তা মেনে নিতে পারেননি। এই দাম্পত্য টিকিয়ে রাখতে অবশ্য দুজনেই চেষ্টা করেছিলেন। ভেবেছিলেন একটা সন্তান এলে হয়তো সংসারটা টিকে যাবে। কিন্তু সে আশাও পূরণ হয়নি। রুদ্র বলেন, “জানি না কার ত্রুটি। কারণ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়নি।” নব্বইয়ের দশকে এসে অবশ্য রুদ্র ও তসলিমা আবারও ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। যতই ক্ষোভ আর অভিযোগ থাক, রুদ্রর মৃত্যুর পরে ‘রুদ্র ফিরে আসুক’ শীর্ষক লেখায় তসলিমা লিখেন-

“যৌথজীবন আমরা যাপন করতে পারিনি। কিন্তু যত দূরেই থাকি, আমরা পরস্পরের কল্যাণকামী ছিলাম। রুদ্রের সামান্য স্খলন আমি একদিনও মেনে নিইনি, রুদ্রের দু’চারটে অন্যায়ের সঙ্গে আমি আপোস করিনি- পরে সময়ের স্রোতে ভেসে আরো জীবন ছেনে, জীবন ঘেঁটে আমি দেখেছি, রুদ্র অনেকের চেয়ে অনেক বড় ছিল, বড় ছিল হৃদয়ে, বিশ্বাসে। রুদ্রের ঔদার্য, রুদ্রের প্রাণময়তা, রুদ্রের অকৃত্রিমতার সামনে যে কাউকে দাঁড় করানো যায় না।”

শেষ জীবন

রুদ্রর জীবন নিয়ন্ত্রিত ছিল না। শরীরের উপর যথেষ্ট অত্যাচার করতেন। তুখোড় ধূমপান ও মদ্যপান, খাবারে অনিয়ম সব মিলিয়ে বাঁধিয়েছিলেন পাকস্থলীর আলসার। পায়ের আঙুলে হয়েছিল বার্জার্স ডিজিজ। গুরুত্ব তিনি কখনোই দেননি এসবকে। অসুস্থতা নিয়েও তিনি ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা পড়তে যেতেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি নিয়মিত আসতেন নীলক্ষেত-বাবুপুরায় কবি অসীম সাহার ‘ইত্যাদি’-তে। এ সময়টায় তিনি অনেক নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেছেন-

“কেউ তাকে সামান্য আশ্রয় দেয়নি। কেবল অসীম সাহা দিয়েছিল, নীলক্ষেতে তার টেবিলের বাঁ-পাশে রুদ্রকে একটা চেয়ার দিয়েছিল বসবার জন্য। রুদ্র সকাল, দুপুর, বিকেল ঐ একটি চেয়ারে নিমগ্ন বসে জীবন পার করতো।”

বিকেলে অসীম সাহার প্রেসের আড্ডাটি জমে উঠতো। এখানে যোগ দিতেন কবি মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, সাহিত্যিক আহমদ ছফা, চিত্রকর সমর মজুমদার, সঙ্গীতশিল্পী কিরণচন্দ্র রায়, কবি কাজলেন্দু দে প্রমুখ। একদিন এই আড্ডাতে রুদ্রকে আর উপস্থিত পাওয়া যায়নি। অসীম সাহার কাছ থেকেই সবাই জানতে পারেন রুদ্র পেপটিক আলসার বাঁধিয়ে হাসপাতালে। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ২৩১ নাম্বার কেবিনে অসুস্থ রুদ্রকে দেখতে যান অনেকেই। হাসপাতালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিক আবু মাসুম মাসিক নান্দনিক পত্রিকায় লিখেন-

“আমার হাতে রজনীগন্ধার ডাঁটি দেখে রুদ্রর চোখজোড়া ভীষণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। দেখি, পাশে বসে আছেন আহমদ ছফা। রুদ্রর এক হাত জড়িয়ে রেখেছেন তার হাতে। কথা বলছিল অল্প অল্প, মৃদুস্বরে। আহমদ ছফা বেরুনোর সময় রুদ্রর মাথায় হাত রেখে বললেন- তুমি তো ভালো হয়ে গেছো। আমি আবার আসবো। যাওয়ার সময় আহমদ ছফা একটা ইনভেলাপ রেখে গেলেন রুদ্রর বালিশের নিচে।”

হাসপাতালে সপ্তাহখানেক থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ২০ জুন রুদ্র বাসায় ফেরেন। পরের দিন ২১ জুন, ১৯৯১ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করতে কবি বেসিনে দাঁড়ান। হঠাৎ মুখ থুবড়ে বেসিনের উপরেই পড়ে যান। সিরামিকের বেসিন কবির ভার বইতে না পেরে গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। কবির ভাই ডক্টর মুহম্মদ সাইফুল্লাহ জানান, সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

রুদ্রর মৃত্যু সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মুষড়ে পড়েন দেশে ও দেশের বাইরে থাকা কবির বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা। পরদিন ২২ জুন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ চলে যান অন্তিমশয়ানে তার চিরচেনা, শৈশবের স্মৃতিধন্য, মংলার মিঠেখালিতে।

বাংলার আরও অনেক প্রতিভাময় কবি ও সাহিত্যিকের মতো আমাদের রুদ্রও চলে যান খুব কম বয়সে। এই স্বল্প সময়েই তিনি রেখে গেছেন তার ছাপ, করে গেছেন ঋণী, বেঁধে গেছেন অমোঘ মায়ার বন্ধনে। তাই তার সেই পঙক্তিগুলোই বারবার রোমন্থন করে বাঙালি-

“চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে।”
প্রকাশিত গ্রন্থ তালিকা

কবিতা- উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯) ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ১৯৮২ মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪) ছোবল (১৯৮৬) গল্প (১৯৮৭) দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮) মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)[৬] ছোটগল্প- সোনালি শিশির নাট্যকাব্য- বিষ বিরিক্ষের বীজ ভালো আছি ভালো থেকো/আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো… এই অত্যন্ত জনপ্রিয় গানের স্রষ্ঠা রুদ্র কি এখন ভালো আছেন? আপন মানুষেরা কি তাঁকে চিঠি লিখছেন আকাশের ঠিকানায়? উত্তরগুলো জানার কোনও উপায় নেই। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে কবিতার খাতা ফেলে চলে গেছেন মৃত্যুলোকের ওপারে। মৃত্যুদিনে এই অকাল প্রয়াত কবির জন্য অফুরন্ত প্রার্থনা।





প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার    সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০। ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।