আমার মেয়ে শ্রীময়ি
কৃষ্ণ কর্মকারঃ
শ্রীময়ি কর্মকার কঙ্কা। ওর আজ এক বছর পূর্ণ হলো। গত ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর এই দিনটি ছিল দুর্যোগপূর্ণ দিন। প্রলংকারী ঝড় বুলবুল বয়ে গিয়েছিল বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে। অনেকেই বলছিলেন, মেয়ের নাম রাখুন বুলবুলি। কিন্তু পরিবারের সকল মতেই নামরাখা হয় শ্রীময়ি কর্মকার কঙ্কা। এর আগে চিকিৎসক ডা. গৌরি কিশোর চক্রবর্তী (জি কে চক্রবর্তী) প্রথম জানিয়ে ছিলেন, আপনার স্ত্রীর সিজার হবে ৭ই নভেম্বর। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তান সম্ভাবনা স্ত্রী পুজাকে নিয়ে এর আগেই আমি চলে যাই নির্ধারিত বরিশালের বেলভিউ ক্লিনিকে। গিয়েই পড়ি ঝড় বুলবুলের কবলে। ঝড়ের প্রভাবে সপ্তাহ জুড়ে ছিল বৃষ্টি আর বাতাস। ৬ নভেম্বর ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক বন্ধুবর বাবুর কাছে জানতে পারি জরুরী কাছে জি কে চক্রবর্তী স্যার ঢাকায় রয়েছেন। ৭ই নভেম্বর কোন সিজার হবে না।
দিনের পড় দিন আবহাওয়া চরম বৈরী হওয়া শুরু করলো। অপেক্ষা আর উৎকন্ঠা। এক পর্যায়ে জানতে পারলাম বিমানসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। অবিরাম ঝড়বৃষ্টির কারনে শহড় জুড়ে পানি আর পানি। প্রলংকারী বুলবুল আঘাত হানলো ১০ নভেম্বর। ঝড়ের খবরা খবর রাখতে পত্রিকাসহ টিভি চ্যানেলে চোখ রাখ সারা দিন রাত। অনেক বেদনার খবরের মধ্যেও কিছু আনন্দের খবর চোখে পড়ার মতন ছিল। সে খবর টি হলো যে খবরটির অপেক্ষায় আমিই রয়েছি। অনেক মায়ের কোলেই সেদিন আলো করে এসেছে নতুন অতিথী। প্রতিটা সংবাদ যেন আমাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমি স্বপ্ন দেখছি।
আবহাওয়া দুপুরের দিকেই একটু স্বাভাবিক হতে চলছে। এর মধ্যে ক্লিনিকের চিকিৎসক জানালেন ১১ তারিখ আপনার স্ত্রীর সিজার হবে। দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পেলাম পুজার রক্তের গ্রুপ ও প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এবিএম মিজানুর রহমান ও বিজয় টিভির বাউফল প্রতিনিধি উত্তম কুমারের গ্রুপ এক।
কিন্তু কিভাবে ওরা বাউফল থেকে বরিশাল আসবে।যানবাহনের সাথে সাথে ফেরি চলাচলও বন্ধ। সকল বাঁধাই উপক্ষো করে নিজ নিজ মটারসাইকেল যোগে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ওরা দুইজনই বরিশাল এসে পৌছে রক্ত দেন। সাথে থেকে যান আমার ভাই মিজানুর রহমান।
১১ নভেম্বর সকালে আবহাওয়া খুব একটা ভালো না হলেও প্লেন চলাচলের অনুমতি দিলে সকালে ঢাকা থেকে প্লেন যোগে বরিশাল আসেন জি কে চক্রবর্তী। আমার সেই স্বপ্ন পুরনের দিন আজ। চিকিৎসক জানালেন, সকালেই সিজার করা হবে। পুজাকে নিয়ে যাওয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে। কান পেতে বসে আছি থিয়েটারের সামনে। আমার পাশেই বসে আছে আমার প্রিয় ভাই মিজান।
কিছু সময় বাদেই কানে আসলো এক শিশুর কান্না। মিজান হাসি মুখে বলতে ছিল। দাদার তোর মেয়ের কান্না। খানিক বাদেই ডাক পড়লো মেয়ের বাবার। বাবা হাসিমুখে খুব ভাবের সহিত ভিতরে প্রবেশ করতেই র্নাস শিশুটিকে কোলে তুলে দিলেন। আমার মনে হলো পুথিবীর সকল সুখ, আনন্দ, ঐশ্বর্য্য আমার কোলটি জুড়ে। আজও সেই আনন্দ,সুুখ ও ঐশ্বর্য্য আমাদের পুরো একান্নবর্তী পরিবার আলো করে থাকে। আজ সেই সুখের অতিথীর শ্রীময়ির প্রথম জন্মদিন।
এইতো মিজান আর আমি এক সাথে বসে গল্প করছি। এক পর্যায়ে মিজানের সদ্যজাত কন্যা সন্তানের প্রসঙ্গ উঠলে, মিজান অনেক আবেগ মাখা কন্ঠে বললো, দাদারে আমার অনেক বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে। শুধু আমার সন্তানদের জন্য।পৃৃথিবীর সকল পিতার বাঁচার আকুতি তার সন্তানদের জন্য। পৃথিবীর সকল পিতারা বেঁচে থাকুক।বেঁচে থাকুক তার সন্তানরা। এই দোয়াই করি। আমারা সকলে সকলের জন্য।
লেখকঃসাংবাদিক ও শ্রীময়ি’র পিতা।
|