Current Bangladesh Time
Saturday December ১৪, ২০২৪ ১১:২৩ PM
Barisal News
Latest News
Home » রাজাপুর » রিপোর্টারের ডায়েরি » সংবাদ শিরোনাম » জাসদ পরিবেশিত শেখ কামালের সেই ব্যাংক ডাকাতির কল্পকাহিনি
৭ August ২০২৩ Monday ১২:৪২:২৩ PM
Print this E-mail this

জাসদ পরিবেশিত শেখ কামালের সেই ব্যাংক ডাকাতির কল্পকাহিনি


সোহেল সানি:

বিশ্বখ্যাত লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফের স্বনামধন্য সাংবাদিক পিটার হেজেল হার্স্ট বলেছিলেন- “প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাংক ডাকাতির দরকার হয় না। টাকা চাইলে তো ব্যাংকের ম্যানেজাররাই বাসায় পৌঁছে দেবেন। “

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পুত্র শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত মর্মে তথ্য সরবরাহ করা হলে বিদেশি সাংবাদিক পিটার উপর্যুক্ত মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশি সোর্সের প্রতিত্তোরে।

বিদেশি সাংবাদিককে টোপ গেলানো না গেলেও এদেশীয় পত্রিকা দৈনিক গণকণ্ঠ ও হককথা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭৩ বিজয় দিবসে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করতে জাতির পিতার পুত্রকেই মঞ্চস্থ করলো ব্যাংক ডাকাত বানিয়ে দিয়ে।

পত্রিকা দু’টোর পুরো ব্যানারজুড়ে শিরোনাম ছিল- “প্রধানমন্ত্রীর পুত্র শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত। ” সিরাজ শিকদারের নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টি বিজয় দিবসকে ‘কালো দিবস’ ঘোষণা করে জাতীয় কর্মসূচি ভণ্ডুলের প্রকাশ্য ঘোষণা করেছিল সারাদেশে লিফলেট ছড়িয়ে। জাসদ তাদের কর্মসূচিকে গোপনে সমর্থন দিয়ে সশস্ত্র সহায়তা করেছিল। সিরাজুল আলম খানের মন্ত্রতন্ত্রে জাসদের সভাপতি মেজর (অব.) এম এ জলিল সাধারণ সম্পাদক আসম আব্দুর রব যুগ্ম সম্পাদক শাজাহান সিরাজ।

জাসদের গণবাহিনীর প্রধানই কেবল নয়- পরবর্তীতে হাসানুল হক ইনু নিজেই স্বীকার করেছেন যে – ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিপ্লবের উপপ্রধান ছিলেন তিনি। কর্নেল (অব.) আবু তাহের বীর উত্তম ছিলেন সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের গোপন সংগঠন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার প্রধান। উল্লেখ্য, জাসদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের লোভে জেনারেল জিয়ার উত্থান ঘটালেও সে স্বপ্ন ভেস্তে যায়। জেনারেল জিয়াই ক্ষমতা দখল করে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেন এবং জলিলকে যাবজ্জীবন- সিরাজুল আলম খান-আসম  রবকে দশ ও ইনুকে সাত বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন।

ছাত্রলীগকে দ্বিখণ্ডিত করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান- কাজী আরেফ আহমেদ – এম এ আউয়াল-আসম রব – শাজাহান সিরাজ – শরীফ নূরুল আম্বিয়া- হাসানুল হক ইনু জাসদ গঠন করেন। জাসদ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেন- আফম মাহবুবুল হক-মাহমুদুর রহমান মান্না -আখতারুজ্জামান – শিরীন আক্তারের হাতে।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ঘোষণা দিয়ে ১৯৭২ সালে অক্টোবরে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ। দলটির মুখপাত্র ছিল দৈনিক গণকণ্ঠ। যার সম্পাদক ছিলেন কবি আল মাহমুদ।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের মুখপাত্র ছিল হককথা। দৈনিক গণকণ্ঠ ও হককথা বঙ্গবন্ধু সরকারকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল শেখ কামালের বিরুদ্ধে এরকম ভয়ঙ্কর মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে।

আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রাণপুরুষ শেখ কামাল সম্পর্কে জনমানসের দৃষ্টি ফেরাতে চাই সেদিনের প্রকৃত ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ সাল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বিজয় দিবস। কিন্তু মানে না এ বিজয় দিবস সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি। বিজয় দিবসের জাতীয় কর্মসূচি প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় তারা। বিজয় দিবসকে “কালো দিবস” ঘোষণা করে ওদিনই হরতাল ডেকে বসে সর্বহারা পার্টি। পার্টির ঔদ্ধত্য হুঙ্কার এতোটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল যে, তারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অস্তিত্ব অস্বীকার করে পার্টির নামকরণ করে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি। রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করে। বিভিন্ন হ্যান্ডবিলের মাধ্যমে তারা ঘোষণা করে জাতীয় প্রেসক্লাব, পত্রিকা অফিস, কমলাপুর রেলস্টেশন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ বোমা মেড়ে উড়িয়ে দেয়ার।

ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম এর ভাষ্যমতে, রাজধানীতে তখন মোটে আটটি থানা। প্রতিটি থানায় ২৪ জন করে পুলিশ সদস্য ছিল। পুলিশ লাইনেও অস্ত্রধারী পুলিশের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন দুরূহ বিষয় ছিল। “কালো দিবস” এর লিফলেট প্রচারের পর পুলিশকে সাহায্য করতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও লাল বাহিনীসহ আওয়ামী লীগের কর্মীরা মাঠে নামে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন নম্বর এবং স্ব স্ব নাম লিপিবদ্ধ করে পুলিশের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের সঙ্গে সহঅবস্থান নেয় তারা। ১৫ ডিসেম্বর বিকাল থেকে এ তৎপরতা জোরেশোরে চলতে থাকে। শেখ কামাল সেদিন রাতে ঢাকা কলেজের সামনে ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ছিলেন। তিনি সর্বহারা পার্টির অপতৎপরতারোধে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর একটি মাইক্রোবাসে ওঠেন। শেখ কামালের সঙ্গে ছিলেন কাজী সিরাজ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাহেদ রেজা, আনোয়ারুল হক তারেক, রুহুল আমিন খোকা, শাহীন চৌধুরী, রেজাউল কবির, বরকত-ই-খোদা, তারেক, শাহান, সানি, বরকত, মনির প্রমুখ। আরেকটি জিপ গাড়িতে ছিলেন শেখ রফিকসহ আরও কয়েকজন। শেখ কামালকে নিয়ে মাইক্রোবাসটি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় এবং একপর্যায়ে গাড়ি থামিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন চিটাগং হোটেল থেকে খাওয়ার জন্য বিরিয়ানি নিয়ে নেয়। বের হওয়ার আগে শেখ কামাল ও তার সঙ্গীরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের খাতায় তাদের নাম এবং গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন নম্বর লিখে না রাখায় বিপত্তির আশঙ্কা দেখা দেয়। টহলরত পুলিশের ম্যাসেজ চলে যায় কন্ট্রোল রুমে। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করতে থাকে যে, লোকজনভরা একটি মাইক্রোবাস। সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছে।

এদিকে জাসদ ও সর্বহারা পার্টি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ড করতে মাঠে নামে। একটি টয়োটা গাড়ি করে যাচ্ছিলেন সার্জেন্ট শামীম কিবরিয়া। তিনি ফাঁড়িতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সব আলো নিভিয়ে দেয়া হয়। সবাইকে পজিশন নিতে নির্দেশ দিলেন ওয়াকিটকির মাধ্যমে। পুলিশ একটু ভড়কে গিয়ে ফাঁড়ির দিকে ছুটে। শেখ কামালের গাড়িও পিছে পিছে যাচ্ছিল। হঠাৎ সামনের গাড়িটা স্টার্ট বন্ধ করে দিয়ে ওয়াকিটকির মাধ্যমে সবাইকে জানায় যে, পেছনে দু’টো গাড়ি আছে এবং নিশ্চয়ই সেই গাড়ি দু’টো সন্ত্রাসীদের হবে। অথবা সর্বহারা পার্টির হবে। হঠাৎ লাইট বন্ধ করে এলোপাতাড়ি গুলি করা শুরু করে। চারদিক থেকে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলের গুলি। অজস্র ধারায় গুলি। তাতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। একজনের তিনটি আঙুল উড়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দরজা খুলে শেখ কামাল দৌড়ে ভেতরে চিৎকার করে বলতে থাকে, “আমি শেখ কামাল, আমি শেখ কামাল। ” সার্জেন্ট শামীম কিবরিয়া ও এসআই নিয়ামত আলী গুলি করা বন্ধ করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। এবং শেখ কামালকে বলেন -স্যার ভুল হয়ে গেছে, আমরা ভেবেছি সন্ত্রাসীদের গাড়ি।

প্রকৃতপক্ষে সার্জেন্ট কিবরিয়া দ্রুত ফাঁড়িতে ঢুকে চিৎকার করে বলে ওঠেন, পেছনের দু’টো গাড়ির সন্ত্রাসীরা আমাদের আক্রমণ করেছে। তখনই গুলিবর্ষণ করা হয়।

গুরুতর জখম অবস্থায় শেখ কামাল ও একে একে সবাইকে মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে পুলিশ তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কামালের কাঁধ থেকে দু’টি গুলি বের করা হয়। আরেকটি গুলি পরবর্তীতে বের করা হয় মস্কোতে। এসআই মতিন ও তার সহকর্মীরাও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাজির হয়। শেখ কামালের গুলিবিদ্ধ হওয়ায় স্থানটি ছিল মতিঝিল শাপলা চত্বরের উত্তর দিকে জনতা ব্যাংক ও পেট্রোল পাম্পের বিপরীত দিকে জেনারেল আইয়ুব খানের বাণিজ্য মন্ত্রী ওহিদুজ্জামানের বাড়ি হতে একশ’ গজ উত্তরে কালভার্টের ওপরে। শেখ কামালের সঙ্গীরা কমলাপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন চিটাগং হোটেল থেকে যখন বিরিয়ানি নিচ্ছিলো তখন আজম খান (পপ সম্রাট), মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল মেসবাহউদ্দিন সাবু, বরিশালের বাহাউদ্দীন, হিলু, ইকবাল, জহুর ও মুসলেউদ্দীন ও সরফুদ্দিন সান্টুসহ ৭/৮ জন যুবক আড্ডা দিচ্ছিল। ওইদিন আজম খান ও বাহাউদ্দীন পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে গালগল্প করছিলেন। তারা শেখ কামালের চিৎকার শুনে মাইক্রোবাসের দিকে এগিয়ে গিয়ে যান। মতিঝিল ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট রউফ ও কন্ট্রোল রুমের সার্জেন্ট সুলতানও তখন উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ টিমের পুলিশ সদস্যরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রমনা থানায় হাজির হয়ে প্রাণভিক্ষা প্রার্থনা করেন। তাদের তাৎক্ষণিক ক্লোজ করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার এবং ডিএসপি মোল্লা তৈয়বুর রহমান তাদের থানাতেই আটকে রাখেন।

এ বিষয়ে ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম আমাকে বলেন, সেদিন শেখ কামালের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই পুলিশ সদস্যদের রমনা থানায় ক্লোজ করি এবং হাসপাতালে ছুটে যাই। ততক্ষণে শেখ কামালকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে।

কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, “আউট অব ডেঞ্জার, ভয় নেই, গুলি ভাইটাল অর্গানে বিদ্ধ হয়নি। ” সেদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে শেখ কামালের সুচিকিৎসা ও অপারেশনের ব্যবস্থা করে বাসায় ফিরি, তখন প্রায় রাত ভোর হয়ে গেছে। তিনি বলেন, পরদিন সাতসকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বলি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন জীবনাশঙ্কা নেই। বঙ্গবন্ধুকে বলি, আমার পুলিশ অফিসাররা কামালকে গুলি ছুঁড়ে আহত করেছে বিধায় দায় আমার। এ ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির জন্য হয়েছে। যদি দোষ হয়ে থাকে সবটাই আমার, যদি শাস্তি কাউকে দিতে হয়, সবার আগে আমাকে দেবেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুই যা, ভালো মতো খোঁজখবর নে। যদি কোনো ষড়যন্ত্র থাকে আমাকে বলবি।

এসপি মাহবুব বললেন, বঙ্গবন্ধু প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে গেলেন আমাকে। কুচকাওয়াজের ফাঁকে কানে কানে বললেন, তোর ভাবী শুনলে ভীষণ চটে যাবে। যারা গুলি করেছে তাদের আপাতত ক্লোজ করে রাখ। ছাত্রলীগের কাছ থেকে যেনো ওরা দূরে থাকে। ক’টা দিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এরপর আইজিপি নূরুল ইসলামের পরামর্শে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মনসুর আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধুকে তুমি যখন বলেছো, তখন চিন্তা বেশি করো না। আমি দেখব।

পরের দিন বঙ্গবন্ধু আমায় ডেকে পাঠালেন। বললেন হাসপাতালে যাব গোপনে, তুই সঙ্গে যাবি। আমি সন্ধ্যার পর গাড়ি নিয়ে বাড়ির পেছনে উপস্থিত হলাম। বঙ্গবন্ধু গাড়িতে বসলেন। বললেন, চালা, দেখিস তোর ভাবি তোর ওপর রাগ করতে পারে, কিছু মনে করিস না। কেবিনে ঢুকলেন বঙ্গবন্ধু, আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভাবী বেদনা ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বেশ জোরেশোরে বললেন, তোমার রাজত্বে তোমার ছেলে তোমার পুলিশের গুলি খায়। আমি আর এ দেশে থাকব না। আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিদেশ চলে যাব। বঙ্গবন্ধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা আইজিপি কাউকেই কোনো নির্দেশনা দেননি। ফলে পুলিশ ও প্রশাসনের কোনো তেমন তৎপরতা ছিল না।

মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেন, তৎকালীন সিটি এডিশনাল এসপি আব্দুস সালাম এবং আমি উভয়ই তদন্ত করেছি। ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার হিসেবে বলছি বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকাতি করতে হলে হাজার টন বোমা ফেলে ব্যাংকের ভল্টে ঢোকা যাবে না। রাস্তা হতে ব্যাংকের ভল্টে পৌঁছতে হলে অনেকগুলো দরজা ভাঙতে হবে, বড় বড় তালা খুলতে হবে এবং শক্তিশালী দরজা ভাঙতে হলে হেভি মর্টার ফায়ার করতে হবে। সুতরাং ব্যাংক ডাকাতির প্রপাগাণ্ডা যারা ছড়িয়েছে তারা জ্ঞানপাপী, অপশক্তি। ডাকাতি করতে হলে ডাকাতির সরঞ্জাম কই? নিদেনপক্ষে তালা ভাঙার যন্ত্র কিংবা গুচ্ছ গুচ্ছ চাবি! অথবা লোহার শিকের দরজা ভাঙা শাবল কিংবা গাইত! বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকে গার্ড পাহারাদার? কই কারো আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার খবর তো ছিল না।

প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু সরকারকে অস্ত্র বলে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চেয়েছিল জাসদ এবং সর্বহারা পার্টি। তারা তা না পারলেও বঙ্গবন্ধু শুধু নয় তাঁর পরিবারেরও হত্যার পথ ঠিকই প্রশস্ত করেছিল।

শেখ কামাল ছিলেন দীর্ঘ ও ঋজু দেহের অধিকারী শৌর্যবীর্যে ঠাসা এক সুপুরুষ। ঠোঁটের ওপর ঘনগোঁফ, চোখে কালো ফ্রেমের মোটা কাঁচের চশমা শেখ কামালকে পরিণত করেছিলো ছাত্র যুবসমাজের আইকন রূপে। আগস্টেই তার জন্মমৃত্যু, ১৯৪৯ এর ৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এই ছাব্বিসটি বছর তার জীবনকাল। একুশ বছর বয়সেই মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তার পদ ছেড়ে দেন। নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সক্রিয় সংগঠক শেখ কামাল বাকশাল ভুক্ত জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। স্বাধীনচেতা মুক্তবুদ্ধি ও প্রতিভা উদীপ্ত এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
বরিশাল শহীদ মিনার কেন্দ্রিক দুই চেতন‍া মুখোমূখি, জারী হতে পারে ১৪৪ ধারা
বরিশালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল 
দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে বাড়ছে মাদকের পাচার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে তালতলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস
Recent: Mayor Hiron Barisal
Recent: Barisal B M College
Recent: Tender Terror
Kuakata News

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
আমাদের বরিশাল ২০০৬-২০২০

প্রকাশক ও নির্বাহী সম্পাদক: মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্নু, সম্পাদক: রাহাত খান
৪৬১ আগরপুর রোড (নীচ তলা), বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, ই-মেইল: hello@amaderbarisal.com