দশমিনা উপজেলার আন্তঃজেলা সীমানা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিরোধপূর্ণ এলাকার আমন ধানে সোনালী রং ধরার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিদস্যুদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। একাধিক স্বার্থান্বেষী মহল মৌসুমী লাঠিয়ালদের সহায়তায় পেশিশক্তি প্রয়োগ করে এ উপজেলার প্রান্তিক চাষিদের ধান লুটে নেয়। প্রতি বছর ভূমিদস্যুদের আনাগোনা দেখে আতঙ্কে পড়েন দশমিনার তিন চরের প্রায় ১০ হাজার কৃষক। কৃষকরা চাষকৃত খেতের ধান ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বেগ আর আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করেন। যুগের পর যুগ কেটে গেলেও সীমানা জটিলতার অবসান হয় না।
অন্যদিকে ধান কাটার মৌসুমে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতি বছর হামলা-সংঘর্ষে আহত হন কয়েকশ মানুষ। জমি নিয়ে মামলা জটিলতার অবসান না হওয়া ও জমি বিরোধের সঠিক সমাধান না হওয়ায় ধান কাটার মৌসুমে উপজেলাজুড়ে ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির মতো ঘটনা।
জানা যায়, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি ভূমিদস্যুদের উসকানির কারণে প্রায় ৮১ বছরের আন্তঃজেলা বিরোধ মীমাংসা হয়নি। তেঁতুলিয়া নদীর ঠিক মাঝখানে অবস্থিত চরবোরহান ইউনিয়নের সঙ্গে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর ইউনিয়নের চর মোতাহার মৌজার সীমানা বিরোধ লেগে আছে যুগ যুগ ধরে।
এছাড়া দশমিনা সদর ইউনিয়নের চরহাদী মৌজার সঙ্গে লালমোহন উপজেলার চর কচুখালীর সীমানা বিরোধ রয়েছে। একই চর দুই নামে পরিচিত। পূর্ব প্রান্ত চর কচুয়াখালী আর পশ্চিম প্রান্ত চরহাদী। এসব চরের ভুক্তভোগীরা বলেন, সিএস ম্যাপে গুরুত্ব না দিয়ে ভোলার ভূমিদস্যুরা আরএস ম্যাপ ও বুড়াগৌরাঙ্গ দোনের অবস্থিত অনুসারে দাবি করে আসছে।
অথচ কাগজপত্রে দোন বলতে কিছু নেই।
চরবোরহান ইউপি চেয়ারম্যান নজির সরদার বলেন, ১৯৪০-৪২ সালে তৈরি আরএস ম্যাপের লাইন অনুসারে আন্তঃজেলা সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু চরফ্যাশনের ভূমিদস্যুরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যাতে দশমিনার চরশাহজালালের বিশাল অংশ তারা দাবি করে আসছে দীর্ঘ বছর ধরে।
অথচ এ দাবি প্রায় শত বছরের আগের সিএস ম্যাপের পরিপন্থী। চরবোরহান ও চরশাহজালালের শত শত পরিবার বিভিন্ন সময়ে চরের জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বসবাস করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি তারা কয়েকজন (ভোলার) চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থানীয়ভাবে বিরোধ কিছুটা সমাধান করেছেন। তবে, সরকারিভাবে আন্তঃজেলা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।
এদিকে দশমিনা সদর ইউনিয়নের চরহাদির সঙ্গে লালমোহন উপজেলার চরকচুয়াখালীর সীমানা বিরোধে ২০০০ সালে লালমোহনের ভূমিদস্যুরা দশমিনার চরহাদি অংশের আমন ধান লুট করে নেওয়ার সময় ভূমিহীন কৃষক নজির দেওয়ান বাধা দেওয়ায় খুন হন। ওই সময় দুই জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সমঝোতা বৈঠকে ৫০ একর জমির মধ্যে ভোলার চর কচুয়াখালীর ৩০ একর ও দশমিনার চরহাদির অংশ ২০ একর জমি পৃথক ভোগদখলে থাকবে ডিআরএস জরিপ না হওয়া পর্যন্ত। ওই সমঝোতায় দুই জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর রয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর শান্তিপূর্ণভাবে থাকলেও ২০১৮ সালে চরহাদির ৫-৭ একর জমি অবৈধভাবে দখল করেন চরকচুয়াখালীর লোকজন আশ্রায়ণ প্রকল্প নির্মাণ করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাফর আহমেদ বলেন, চলতি বছর এ উপজেলায় সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, ধান কাটার মৌসুমে সীমানাসহ নানা বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ হয়। আন্তঃজেলা বিরোধসহ সব সমস্যাই কৃষকদের স্বার্থে দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি।
থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করবে আদালত। আর চরে যদি আগে পুলিশ ক্যাম্প (বিগত বছরগুলোতে) করা হয়ে থাকে তাহলে এ বছর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হবে।
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
বরিশাল-২ আসনের সাবেক এমপি শাহে আলম আটক
শেখ হাসিনার নতুন ফোনালাপ ফাঁস, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি
ঝালকাঠিতে আমুসহ ৪১ জনের নামে দ্রুতবিচার আইনে মামলা
তিন ভাই ও ভাগ্নেসহ বরিশাল-২ আসনের সাবেক এমপি শাহে আলমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যা চেষ্টার মামলা
বরিশালে পোস্টাল আবাসিক এলাকা থেকে অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার