বরিশাল সদর ৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক। সোমবার (২০ নভেম্বর) তিনি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে বরিশাল সদর ৫ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার।
এর আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজধানী ঢাকা-১৩ আসনের মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করেন। তিনি বিগত সময়ে ওই আসনের এমপিও ছিলেন।
দাপুটে এই রাজনীতিবিদ এবার ঢাকার পাশাপাশি তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে বর্তমান এমপি জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ,মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ,বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু এবং প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকিরসহ অন্তত অর্ধডজন রাজনৈতিক মনোনয়ন ফর্ম তুলেছেন, তাদের কেউ কেউ তা ফিলাপ করে আবার জমাও করেছেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল এবং রাজধানীর দুটি আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানক মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। তবে তাকে ঢাকা বা বরিশালের একটি আসনে অংশগ্রহণের সবুজ সংকতে পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি ঢাকা-১৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ইতিপূর্বে একাধিকবার এমনও খবর ছড়িয়েছিল যে হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ নেতা নানক বরিশালের রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন। এবং তিনিই বরিশাল সদর ৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হবেন। এনিয়ে তখন পত্র-পত্রিকায় শিরোনাম হয়। কিন্তু নানক বরিশালে এসে রাজনীতিতে শুরু না করলেও ভেতরে ভেতরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন।
এক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে, তিনটি কারনে তিনি বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়ন ফর্ম কিনতে পারেন। তারমধ্যে হতে পারে প্রথমত: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো সবুজ সংকেত পেয়েই নানক বরিশাল সদর আসনের মনোনয়ন তুলেছেন।
দ্বিতীয়ত বরিশালের রাজনীতি সম্পর্কে যারা খোজ খবর রাখেন তাদের মধ্যে অনেকের ধারনা জাহাঙ্গীর কবীর নানক প্রকাশ্যে নাহলেও মানষিকভাবে সেরনিয়াবাত সাদিক আবফুল্লাহ্ বা তাদের সেরনিয়াবাত পরিবারের রাজনীতির বিপক্ষের ঘরানার শক্তিকে পিছন থেকে সাহস যুগিয়ে থাকেন। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি খোকন-জাহিদ বলয়ের পক্ষে কথা বলার জন্যই বরিশাল -৫ আসনে প্রার্থী হয়েছেন।কারন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ্’র সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত এবং ইতিমধ্যেই বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা ছাত্রলীগ,সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ এবং ৩০ টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ,উপজেলা চেয়ারম্যান সহ দশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানদের মধ্যে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ জন সাদিক আব্দুল্লাহ’র প্রার্থীতার প্রতি সমর্থন দিয়ে রেজুলেশন করে মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।এ ছাড়াও তার পিতার অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগ এবং সদর উপজেলার ইউনিয়ন কমিটির সমর্থন সাদিক আব্দুল্লাহ’র পক্ষে থাকবে। এই সকল কারনে জাহাঙ্গীর কবীর নানক প্রার্থী হয়েছেন ,যাতে তিনি নিজের অবস্থান থেকে কর্নেল(অব:) জাহিদ ফারুক শামিম কে সমর্থন করতে পারেন।
তৃতীয়ত: কারন হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাহাঙ্গীর কবীর নানক ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারেন। বর্তমান সংসদ সদস্য সাদেক খান মোহাম্মদপুর আদাবর এলাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং আদি বাসিন্দা হওয়ায় জনপ্রিয় বটে। জাহাঙ্গীর কবীর নানক ২০০৮ এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তখন তার এপিএস মিজানুর রহুমান মিজান এবং তৎকালীন কাউন্সিলর পাগলা মিজান এর বিতর্কিত কর্মকান্ডের ফলে তিনি ঢাকা-১৩ আসনে জনপ্রিয়তা হারান ফলে সাদেক খান মনোনয়ন লাভ করেন। এবারো নানক সেইসব নেতিবাচক কারনে হয়তো ঢাকা-১৩ তে মনোনয়ন লাভে সন্দিহান হয়ে বরিশাল -৫ এ প্রার্থী হয়েছেন আর সাদিক আব্দুল্লাহ এবং জাহিদ ফারুক শামিম এই দুই প্রার্থীর মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক আর সেই পারস্পারিক বিরোধিতাও নানকের জন্য তৃতীয় পক্ষ হিসেবে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন। পাশাপাশি ঢাকা-১৩ আসনের মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করেছেন তিনি।
নানক ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পছন্দের দুটি আসনের একটিতে নানককে প্রার্থী হিসেবে রাখতে পারে আওয়ামী লীগ। অবশ্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা শেখ হাসিনার হাতে। এখন প্রধানমন্ত্রী কি সিদ্ধান্ত দেন সেটাই দেখার জন্য বরিশালবাসী অপেক্ষায় আছে।
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)