জমি দখল করে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের মার্কেট, উদ্বোধন করলেন মেয়র নিজস্ব প্রতিবেদক
জমি দখল করে মার্কেট নির্মান:: জমির অন্যতম মালিক মোঃ ছালামকে মারতে উদ্যত ও হুমকি দিচ্ছে ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার (লাল বৃত্ত চিহ্নিত) ও তার সহযোগীরা (ছবিঃ আমাদের বরিশাল ডটকম)
বরিশাল :: বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জেলা পরিষদ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন মোট ২৪ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ‘সেন্টার পয়েন্ট সুপার মার্কেট’ নির্মান করছে ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার ও তার সহযোগীরা। সম্প্রতি বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে মার্কেট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন।
দখল করা জমিতে মার্কেট নির্মানের কাজ মেয়র নিজে উদ্বোধন করায় বিষয়টি নিয়ে বরিশালের সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এদিকে মেয়রের উদ্বোধনের কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে সে জমির মালিকের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও মালামাল লুট করেছে।
আর এসময় বিসিসি’র এক প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দখলে সাহায্য ও সমর্থন দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জমির মালিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা গেছে, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে বরিশাল নগরীর নথুলাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জেলা পরিষদের ও ব্যক্তি মালিকানার জমি জোরপূর্বক দখল করে বহুতল ‘সেন্টার পয়েন্ট সুপার মার্কেট’ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার ও তার সহযোগীরা। আর এ দখলে মেয়রের পরোক্ষ সমর্থন আছে- জমির প্রকৃত মলিকদের এমন ধারণা দিতেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা মার্কেট নির্মান কাজ মেয়রকে দিয়ে উদ্বোধন করান বলে জানা গেছে।
এদিকে নিজেদের জমি রক্ষার জন্য দোকান মালিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছেন। যার পরিপেক্ষিতে আদালত ওই জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করে সব কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এরপরও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঐ জমিতে মার্কেট নির্মান কাজ চালাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
সেখানকার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির অন্যতম অংশীদার বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ঈমান আলী শরীফ আমাদের বরিশাল ডটকমকে বলেন, কাশিপুর চহুতপুর মৌজার ১২৫৬ দাগে তার ৩ শতক জমিসহ অন্য মালিকদের ২৪ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমির পাশে আছে জেলা পরিষদের জমি। ব্যক্তিমালিকানা ও জেলা পরিষদের জমি মিলিয়ে মোট ২৫ শতাংশ জমিতে মার্কেট নির্মাণ করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা।
মোঃ হাকিম নামে আরেকজন জমি মালিক জানান, নথুল্লাবাদ বাঘিয়া সড়কে তিনিসহ আরো ৩ জন অংশিদার মিলে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে সেখানে মেসার্স শামীম হার্ডওয়ার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তারা। সম্প্রতি বিসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবিরের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাত তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এসময় ভাংচুর ও লুটের কারন জিজ্ঞাসা করলে সন্ত্রাসী তুষার তাদের হুমকি দেয় ও মারতে উদ্যত হয়। এ জমিতে স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে উচ্চাদালতের নির্দেশ থাকলেও তা উপেক্ষা করেই ছাত্রলীগ নামধারী এ ক্যাডাররা জমি দখল করে ষ্টল নির্মান করছে বলে জানান তিনি।
শামীম হার্ডওয়ারের অন্যতম মালিক মোঃ ছালাম জানান, এ ঘটনায় তিনি ও অন্যান্য জমির মালিকরা বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন, সাধারন ডায়েরীও করেছেন। তবুও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরঞ্চ জেলা পরিষদ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে উচ্চাদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই সেখানে ষ্টল নির্মান করছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এস,আই) সাইদুল হক জানান, ‘দখলের খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে সেখানে পাইনি।’
এদিকে জমি দখলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার দাবী করেন, ‘ওই জমির প্রকৃত মালিক জেলা পরিষদ। ব্যক্তিমালিকানাধীন কোন জমি সেখানে নেই, রয়েছে বাসস্ট্যান্ড কর্তৃপক্ষের জমি। সিটি করপোরেশন জেলা পরিষদ থেকে জমি ইজারা নিয়ে সেখানে মার্কেট নির্মান করছে। আমারও সেখানে একটি ষ্টল থাকায় সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।’
অপরদিকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মকবুল হোসেন আমাদের বরিশাল ডটকমকে জানান, ‘নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকার জেলা পরিষদের জমি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়নি।’ এরপরও কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদের জমিতে স্থাপনা নির্মান অব্যাহত রাখলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিসিসিকে জড়িয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষারের বক্তব্য প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঐ জমিতে বরিশাল সিটি করপোরেশণ কোন মার্কেট নির্মান করছে না।
জমি দখলের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার অভিযোগের ব্যাপারে বিসিসি’র নির্বাহি প্রকৌশলী হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |