পার্থর সাথে দ্বন্দ্ব বিজেপি ছাড়লেন নাজিউর পুত্র ড. শান্ত লিটন বাশার
এরশাদের সঙ্গ ছেড়ে বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জু গড়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। তার মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেছিলেন তার দুই ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ও ড. আশিকুর রহমান শান্ত। কিন্তু বড় ভাই পার্থর সাথে মতবিরোধে পিতার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) থেকে নীরবে বিদায় নিলেন তার দ্বিতীয় পুত্র ড. আশিকুর রহমান। তিনি বিজিপি থেকে অনুষ্ঠানিক পদত্যাগ করেন ২৯ নভেম্বর। তবে তিনি নতুন কোন দল গঠন করছেন না বলে জানা গেছে। তার পরিকল্পনা হচ্ছে অহিংস রাজনীতির ধারাকে এগিয়ে নেয়া।
বিজেপি থেকে পদত্যাগের আগে ড. আশিকুর রহমান একটানা দশ দিন পিতার স্মৃতিবিজরিত ভোলায় অবস্থান করেন। এই দশদিন প্রায় পুরো সময়টাই তিনি তার পিতার সঙ্গে রাজনীতি করা নেতা-কর্মী এবং তার সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ঠজনদের সান্নিধ্যে একান্ত সময় কাটিয়েছেন। এ সময় ড. আশিকুর রহমান ১৮ দলীয় জোটের সহিংস রাজনীতির সঙ্গে তার মানসিক বিরোধের কথা তুলে ধরেন। তার অনিবার্য বিদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে অনেকেই হয়ে পড়েন আবেগ প্রবন।
সেই আবেগকে শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ধারণ করে ৩০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর বনানীর বাসায় আমাদের বরিশাল ডটকম-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, ১৮ দলীয় জোটের রাজনীতির সঙ্গে আদর্শিক অমিলের কারণেই নীরবে চলে এসেছি। ‘নীরবে চলে আসা’ প্রসঙ্গে প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, এমন কিছু করা যাবে না যাতে আমার পিতার স্মৃতি ছোট হয়।
এক প্রশ্নে উত্তরে ড. আশিকুর রহমান বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায়ই নতুন দল গঠন করার কোনই পরিকল্পনা নেই। আর নৌকায় বা স্বতন্ত্র হিসেবে দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচন করব না। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেশে রাজনীতির ধারা দু’টি। এর মধ্যে যেটির সঙ্গে অধিকতর আদর্শিক মিল হবে সেই ধারাই যুক্ত হব। ড. আশিকুর রহমান জানান, রাজনৈতিক ধারায় প্রকাশ্যে সক্রিয় হব অন্তত দুই মাস পর; আমার অধৈর্য হবার কিছু নেই! তিনি জোর দিয়ে বলেন, অহিংস রাজনীতি এগিয়ে নেয়ই আমার লক্ষ্য।
এরশাদের জাতীয় পার্টি ভেঙ্গে নাজিউর রহমান পৃথক সংগঠন গড়ে তোলেন। নাজিউর রহমান এর মৃত্যুর পর পার্থই হন হন নতুন চেয়ারম্যান। আর মেজ ছেলে শান্তকে রাখা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করে। বস্তুত তখন থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে মনস্তাত্বিক লড়াই শুরু হয় বলে জানিয়েছে কোন কোন সূত্র।
পরবর্তীতে ৪ দলীয় জোটের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ভাই পার্থ জিতে গেলেও ভোলা -২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও হেরে যান শান্ত।
এরপর কার্যত ‘ওয়ান ম্যান‘ সংগঠনে পরিণত হয় বিজেপি। গত কয়েক বছরে ব্যারিস্টার পার্থ নানাভাবে আলোচনায় থাকলেও ড. শান্ত ছিলেন সব কিছুর অন্তরালে। যদিও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেশ ভালোই যোগাযোগ ছিলোই। কিন্তু বড় ভাই পার্থ’র সঙ্গে দলীয় মতাদর্শ নিয়ে বরাবরই বিদ্যমান শীতল সম্পর্ক ক্রমেই আরো শীতল হয়ে উঠছিলো।
১৮ দলীয় জোটে থাকা না থাকাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের ভেতর তৈরি হওয়া দূরত্ব বাড়ছিলো। জোটে জামায়াতের অন্তর্ভূক্তি ও সহিংস রাজনীতির পথ বেছে নেওয়ায় শান্ত’র সাথে বিরোধ দেখা দেয়। অবশেষে তারই জেরে দল ছাড়ছেন শান্ত। সহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের ভেতর তৈরি হওয়া দূরত্ব বাড়ছিলো। অবশেষে তারই জেরে দল ছাড়ছেন শান্ত।
পিতা নাজিউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠনের মর্যাদার কথা চিন্তা করে তিনি মনোবেদনায় ভূগছেন কিন্ত প্রকাশে মুখ খুলেননি। শেষ পর্যন্ত নিরবেই দলের রাজনীতিতে ইতি টানতে বাধ্য হলেন।
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পদত্যাগ কিনা এমন প্রশ্ন নাকচ করে দিয়ে শান্ত জানান, আগামী দু’মাসের মধ্যে তিনি কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিবেন না।
এমন পরিস্থিতিতে বড় ভাই পার্থ ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আপোস রফার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। কেননা শান্তর পদত্যাগের জন্য তাকেই দুষছেন বিজেপি নেতাকর্মীরা। সূত্রমতে, এমনিতেই ছোট দল। মাত্র এক আসন (পার্থ) নিয়ে বিগত সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে বিজেপি। তাই ছোট ভাই শান্ত’র হঠাৎ পদত্যাগ বড় ভাই পার্থকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। শিগগিরই তিনি ছোট ভাইয়ের মান ভাঙিয়ে দলে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে দলীয় সূত্রে।
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |