হিরণের বর্ণিল রাজনৈতিক জীবন বিশেষ প্রতিবেদক
 ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের কন্টোল রুম থেকে বেড়িয়ে ভি চিহ্ন দেখাচ্ছেন শওকত হোসেন হিরন
বর্ণিল কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়টা প্রায় সবারই জানা। পেশায় তিনি ছিলেন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী।
১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর বরিশালের আলেকান্দা এলাকায় নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শওকত হোসেন হিরণ৷ তার পিতা মৃত আবুল হাশেম মিয়া ও মাতা মৃত জয়নব বেগম।
হিরণ নগরীর নুরিয়া হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং সরকারী ব্রজমোহন (বি.এম) কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও স্নাতক পাস করেন। পরে বরিশাল ল’কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে তিনি বরিশাল আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করে।
কলেজ জীবন থেকেই হিরণ রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। প্রথমে তিনি বরিশাল জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান মোস্তফার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তার সহযোগী হিসাবে ১৯৭৩ সাল থেকেই বরিশালে জাসদ ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হন হিরণ।
পরে ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথমে জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক দল (জাগদল) -এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে ছাত্রদল, যুবদল হয়ে বিএনপিতে আসেন তিনি।
১৯৮২ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর শওকত হোসেন হিরণ জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
১৯৮৮ সালের প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন সে সময়ের সর্বকনিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান।
এরশাদের জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৯৮ সালে একটি উপ-নির্বাচনে তিনি বরিশাল সদর আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে তিনি তৎকালীন চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাত ধরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যোগাদন করেন। ২০০৩ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক মনোনীত হন তিনি।
২০০৮ সালের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।
২০১৩ সালের ১৫ জুন বিসিসি’র নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন।
২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।
পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সাংসদ নির্বাচিত হন।
তার কর্মজীবন শুরু ঠিকাদারী দিয়ে। পরে তিনি সড়ক পরিবহন ব্যবসায়ের সাথে জড়িত হন। শওকত হোসেন হিরণ সাউথ এ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল লিমিটেড, বেলস লিমিটেড, বেলস ফার্মা ইউনানি প্রাইভেট লিমিটেড, অ্যাভান্স এসোসিয়েট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান, এইচ.পি.এল ও এইচ.পি.এল শিপিং এবং সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী, সাউথ এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড ও বেলভিউ মেডিক্যাল সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালকসহ অন্তত ১১ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।
শওকত হোসেনের এক ছেলে ও এক মেয়ে। কিছুদিন আগে সুইডেনে পড়াশুনা’রত বড় মেয়ে রোশনী হোসেন তৃণার বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ছোট ছেলে সাজিদ হোসেন রাফসান ঢাকার বি এ এফ শাহিন কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। হিরণের স্ত্রী জীবুন্নেছা আফরোজ একজন সমাজ সেবক। নগরীর রিফুজী কলোনী এলাকার ডেঙ্গু সরদার রোডের ওহাব বাড়ির ‘হিরন পয়েন্ট’ নামের বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |