এসএসসি পরীক্ষার্থীকে নির্যাতন রাজাপুরের ইউএনও ও ওসি’র বিরুদ্ধে মামলা উপজেলা প্রতিনিধি, রাজাপুর
ঝালকাঠির রাজাপুরের বড় কৈবর্তখালি গ্রামের এসএসসি পরিক্ষার্থী রাসেল খান (১৫) কে থানায় দুই দিন আটকে রেখে নির্যাতন এবং যৌনহয়রানির অভিযোগে ৬ মাসের কারাদন্ড দেওয়ার ঘটনায় রাজাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুবা আক্তার ও রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলামসহ চার জনের বিরুদ্ধে ঝালকাঠি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় অপর ২ আসামী হল স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী প্রভাবশালী মাসুদ গাজী ও সেলিম হাওলাদার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্র রাসেল খানের মা হেলেনা বেগম বাদি হয়ে ঝালকাঠির সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে ছেলেকে নির্যাতন, ঘুষ গ্রহণ ও দাবির অভিযোগে এ মামলা করেন। আদালতের বিচারক কিরন শঙ্কর হালদার অভিযোগ আমলে নিয়ে বরিশাল দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২৭ মার্চ দিবাগত রাতে কোন মামলা মোকদ্দমা না থাকা সত্ত্বেও রাজাপুরের বড়কৈবর্তখালী গ্রামের রিকশা চালক সাইদুর রহমানের ছোট ছেলে এসএসসি পরিক্ষার্থী রাসেল খান (১৫) কে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নজরুল ইসলাম স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী প্রভাবশালী মাসুদ গাজী ও ভিকটিমের বাবা সেলিম হাওলাদারে প্ররোচণায় আটক করে রাজাপুর থানায় নিয়ে আসে। থানায় আটকে রেখে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে রাসেলের ওপর শারিরীক নির্যাতন চালান ওসি নজরুল ইসলাম। ঘুষের টাকা না পেয়ে ৩০ মার্চ ওসি নজরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মাহবুবা আক্তার পরস্পর যোগসাজষে ১৫ বছর বয়সের রাসেলকে আঠার বছরের দেখিয়ে একটি ইভটিজিং এর ঘটনা সাজিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠান।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী মানিক আচার্য্য মামলার বরাত দিয়ে বলেন, ‘২৭ মার্চ মধ্য রাতে বড় কৈবর্তখালী গ্রামের বাড়ি থেকে রাসেল খানকে বিনা অপরাধে ধরে এনে ৩০ মার্চ বিকাল পর্যন্ত রাজাপুর থানায় আটকে রেখে নির্যাতন চালায় এবং ৪ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে ওসি নজরুল ইসলাম।
পরে দাবি না মানায় ৩০ মার্চ বিকেলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মাহাবুবা আক্তারের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা সাজিয়ে ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
রাসেল খান রড় কৈবর্তখালী গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে ও রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম নির্যাতনসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘৩০ মার্চ দিনমজুর সেলিম হালওদারের মেয়ে কলেজছাত্রী সেলিনাকে যৌনহয়রানি ও শ্লীলতাহানী করেছে বলে তার মা অভিযোগ করলে বখাটে রাসেল খানকে আটক করে বড় কৈবর্তখালির ঘটনাস্থলে বসেই ইউএনও’র ভ্রাম্যমান বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে।
এ বিষয়ে রাজাপুরের ইউএনও মাহাবুবা আক্তারের কাছে একাধিক বার মোবাইলে রিং দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন।
উল্লেখ্য, বড় কৈবর্তখালি গ্রামের সেলিম হাওলাদারের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় দুই দিন থানায় আটকে রেখে রাসেলকে রেখে নির্যাতন করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের কারাদন্ড দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিলো।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মহিদুল ইসলাম জানান, ‘তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এখন ওসির কাছে জবাব চাওয়া হবে, জবাব সন্তোষজনক না হলে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’’।
সম্পাদনা: বরিশাল ডেস্ক |