খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম বরিশালে বিভিন্ন নদীর ২৬ স্থানে ভাঙন সাইফ আমীন
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে বরিশাল জেলার বিভিন্ন নদীর ২৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বিলীন হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, গাছপালা, ও ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
হুমকির মুখে রয়েছে জেলার নদী তীরবর্তি এলাকার হাজার হাজার পরিবার। এরই মধ্যে ভাঙনে ভিটে বাড়ি হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক পরিবার। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভাঙন কবলিত এলাকায় দেখা যায়নি, বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে কয়েক দিনের ভাঙনে টনক নড়েছে জেলা প্রশাসনের। ভাঙন কবলিতদের ক্ষয়-ক্ষতির খবরাখবর জানতে ও জানাতে আজ থেকে (২৭ জুন শনিবার) কন্ট্রোল রুম খোলা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শহিদুল আলম।
সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন, চরআবদানী ও চরকাউয়া এলাকায় ভাঙন অব্যহত রয়েছে। শুক্রবার রাতেও সদর উপজেলার লামছড়ির বিস্তৃর্ণ এলাকা কীর্তনখোলা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে সিংহেরকাঠী, বেলতলা ফেরিঘাট, সুন্দরবন সহ কয়েকটি ডক ইয়ার্ড, বরফকল, সিটি কর্পোরেশনের সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সহ বিশাল এলাকা।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একটি রাইস মিল, একটি স্ব-মিল এবং দুইটি বসত ঘর। ভাঙনের মুখে রয়েছে উপজেলার চাদপাশা ইউনিয়নের রাফিয়াদি এলাকার নদী তীরবর্তি শতাধিক পরিবার।
স্থানীয়রা জানায়, আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে রুহুল আমিনের রাইস মিলর মালি,জসিম উদ্দিন সিকদারের স্ব-মিল ও মনির সিকদার এবং সালাম সিকদারের বসত ঘর বিলীন হয়ে গেছে। নদীর তীর জুড়ে বড় বড় ফাটল ধরায় হুমকির মুখে রয়েছে শতাধিক পরিবার। যে যার মত পারছে আসবাব পত্র সহ বসত বাড়ি ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, প্রতি বছর বর্ষা আসলে তাদের ভাঙনের মুখে পড়তে হয়। আগে থেকে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন।
এছাড়া উপজেলার রাকুদিয়ার আবুল কালাম ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা পারভীনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তাকে কেউ কিছু জানায়নি। এখন শুনলেন। ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কারখানা নদীতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার লক্ষীপাশা, দুর্গাপাশা ও কবাই এলাকার শত শত পরিবার ভাঙন অতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে।
অপরদিকে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. মুনসুর আহম্মেদ আমাদের বরিশাল ডটকম’কে জানান, তার এলাকার মেঘনা, তেতুলিয়া, ইলিশা , মাছকাটা, কালাবদর নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে কালীগঞ্জ লঞ্চঘাট ও পাতারহাট স্টীমার ঘাট এলাকায়। ভাঙন প্রতিরোধে আশু পদক্ষেপ গ্রহনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিস্ট মন্ত্রনালয়কে অবহিত করেছেন বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নদী ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু আমাদের বরিশাল ডটকম’কে জানান, এ বছর নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সব কিছু শেষ করে ফেলছে ভাঙনে। শুক্রবার রাতেও লামছড়ির বিস্তৃর্ন এলাকা কীর্তনখোলা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে হয়ে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে মানুষ অসহায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাঙন রোধে এ এলাকায় তিন কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে সংশ্লিস্ট দফতরকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরউদ্দিন আহম্মেদ আমাদের বরিশাল ডটকম’কে জানান, বরিশালের ১০ উপজেলার বিভিন্ন নদীর ২৬ টি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে আগেই ৪০০ কোটি টাকার ছোট বড় মিলিয়ে কয়েকটি কাজের প্রকল্প সংশ্লিস্ট মন্ত্রনালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদন না হওয়ায় ভাঙন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল আলম আমাদের বরিশাল ডটকম’কে জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে জেলা প্রশাসন। ভাঙন কবলিতদের ক্ষয়-ক্ষতির খবরা খবর জানতে ও জানাতে শনিবার (২৭ জুন) কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসন প্রস্তত রয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্পাদনা: বরিশাল ডেস্ক |