AmaderBarisal.com Logo

শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট
আমাদেরবরিশাল.কম

১৮ আগস্ট ২০১৫ মঙ্গলবার ৫:১৪:৪৭ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাবে বিএনপিপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আপত্তি নেই বিএনপির। তবে সংলাপের মাধ্যমে গঠন করতে হবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, যে সরকারের নির্বাচন পরিচালনা ছাড়া সব ক্ষমতা সীমিত থাকবে।

 

সংসদ ভেঙে পুনর্গঠন করতে হবে নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিএনপিকে দেয়া যেতে পারে-এমনই মত দিয়েছেন বিএনপির দাবিকৃত ‘নিরপেক্ষ সরকারে’র রূপরেখা তৈরির বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, যিনি বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের সংগঠন শত নাগরিকের আহ্বায়কও।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আলাপে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপির পরিকল্পনা, নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে এমাজউদ্দীন বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চূড়ান্ত অবমাননাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা অনিশ্চতায় ভরা, অগণতান্ত্রিক। দেশে আইনের শাসন নেই। ব্যক্তিস্বাধীনতা শেষ করে দেয়া হয়েছে। যে নির্বাচনের ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন দল শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করছে, তা ভয়ঙ্কর প্রশ্নবিদ্ধ। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, নির্বাচন কমিশন ভয়ঙ্কর দুর্বল। মেজরিটি অব দ্য মেম্বারস অব পার্লামেন্ট, যেভাবে নির্বাচিত হয়েছেন এটা কে নির্বাচন বলা যায় না। নির্বাচন কমিশন এটাকে নির্বাচন হিসেবে কেন গণ্য করল? সরকারের নির্দেশেই এই কাজগুলো তারা করেছেন। কোথাও কোনো প্রতিবাদও করেননি।

 

একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে প্রাণবন্ত করার জন্য, গতিশীল করার জন্য যে ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের রাখা উচিত ছিল তা করা হয়নি। বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি। সরকারকে বোঝানো হয়নি যে, এভাবে নির্বাচন হয় না। এভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। এ ধরনের কাজ নির্বাচন কমিশন করেনি। বরং অতীতে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্জিত হয়েছিল তা বিধ্বস্ত হয়ে গেল।

 

বর্তমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একেবারেই সম্ভাবনা নেই। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর আত্মমর্যাদাবোধ থাকলে তখনই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত ছিল। আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, এই দেশে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আত্মমর্যাদাবোধ একেবারে নেই বললেই চলে।

 

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সার্থক সুন্দর একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার হয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়ও সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার হয়। নির্বাচন বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধী দল অর্থাৎ বিএনপির সঙ্গে একটা অর্থপূর্ণ আলোচনা হওয়া দরকার, সংলাপ যেটা বলে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও কাদের দ্বারা এ কাজটি সম্পন্ন হতে পারে তার জন্যও একমত হওয়া দরকার। আলাপ-আলোচনার পর পাঁচজন মেম্বরও দরকার নেই। তিনজনই যথেষ্ট হতে পারে। উভয় দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ হওয়া উচিত। তাদের সহায়তা করার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ২ হাজার বা ৫ হাজার লোককে তখন পিকআপ করা। যাতে কেউ অন্যায় করে কোনো ভোট রিগিং করতে না পারে। সুতরাং এভাবে হতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দাবি নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক এমাজউদ্দীন আহমেদ ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের নির্বাচনকালীন সরকারের উদাহরণ টেনে বলেন, সংসদ ভেঙে নতুন সংসদ নির্বাচন করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এ ধরনের সরকার বিশ্বময় স্বীকৃত। আউটগোয়িং প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা থাকলেও আপত্তি নই।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা থাকলেও বিএনপি নির্বাচন করবে। কিন্তু এই সরকারের ব্যবহার হতে হবে একেবারেই নিরপেক্ষ। নির্বাচনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। যতক্ষণ সরকারি বাড়িতে থাকবেন তার ভাড়াটাও তিনি দিয়ে দিবেন যাওয়ার সময়। প্রয়োজনবোধে এটাকে নিরপেক্ষ করার জন্য যে স্বরাষ্ট্র অথবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিরোধী দলের (বিএনপি) কারো হাতেও দিয়ে দেয়া যেতে পারে। এর আগে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলকে মিলে একটা খোলামেলা আলোচনায় আসতে হবে। এ ব্যাপারে একমত হলে সমস্যা থাকবে না। দিস ইজ এ বেসিক থিম। এটা না হলে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হলেও অন্যদল যাবে না।

 

বিএনপির পক্ষে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় সম্ভব কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সম্ভব না হওয়ার কারণ নেই। তবে এটা জোর করে আদায় করার বিষয় নয়। ছিনিয়ে নেয়ার ব্যাপারও নয়। এটা মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রত্যেক দল, ক্ষমতাসীন দল তাদেরও প্রয়োজন। সুতরাং খালেদা জিয়া বা বিএনপিকে এককভাবে ফাইট করতে হবে কেন? সুনীতি যদি এই সরকারের মূলনীতি হতো তাহলে বহু আগেই ক্ষমতাসীন সরকারই একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করত।

 

আপনি সংলাপের কথা বলেছেন কিন্তু সরকার বিএনপিকে তো পাত্তা দিচ্ছে না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা সময় আসবে তখন পাত্তা দিতে হবে। পাত্তা না দিলে তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা এখানে অচল হয়ে যাবে। দিস ইজ নট ডেমোক্রেটিক ফরমেট, দিস ইজ নট ডেমোক্রেটিক অর্ডার। এটাতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই না।

 

বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বিলম্ব কেন-প্রশ্ন করা হলে এমাজউদ্দীন বলেন, এ ব্যাপারে কাজতো চলছে। সোজাসুজি যে কোনো আন্দোলন নিয়মতান্ত্রিক হওয়া দরকার। এজন্য দলকে শক্তিশালী করা দরকার। শক্তিশালী হতে হলে দলের তরুণদের ইনভলভ করা, মোটিভেশন করা, দেশের যুবশক্তি যারা দলে সংশ্লিষ্ট আছে তাদের আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। লেবার ফোর্স যেটা আছে, নারী যারা আছেন তাদের অর্থাৎ দেশে যারা আছেন সমর্থক গোষ্ঠী তাদের নতুনভাবে সাজানো গোছানো। এ কাজটা হচ্ছে এবং হয়তো একদিন দেখা যাবে বিএনপি নতুনভাবে জেগে উঠেছে।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে কি ধরনের পরিবর্তন আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, ঐরকম পরিবর্তন নয়। স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে আমি উদাহরণ দিচ্ছি, স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যারা মেম্বর আছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন বৃদ্ধ। তাদের কাজ করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু তারা সারা জীবন না হলেও অন্তত জীবনের মূল্যবান সময়টুকু দলের জন্য দিয়েছেন। তাই তাদের জন্য একটা সম্মানজনক পজিশন করে দেয়ার জন্য ছোট্ট একটা ইউনিট ‘কাউন্সিল অফ এল্ডারস’ করা দরকার। যেখানে তারা সম্মানে থাকতে পারেন এবং প্রয়োজনে যদি মনে করেন কোনো ব্যাপারে খালেদা জিয়াকে উপদেশ দিতে পারেন। স্ট্যান্ডিং কমিটির শূন্যপদে তরুণ গতিশীল ব্যক্তিকে নেয়া যেতে পারে। পরিবর্তনটা এভাবে আসতে পারে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমেদকে বিএনপিতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে এবং খন্দকার মাহবুব হোসেনকে খালেদা জিয়া এই দায়িত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। শিগগিরই একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।

 

বিএনপি কেন জামায়াত ছাড়ছে না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিএনপি কেন জামায়াত ছেড়ে দিচ্ছে না তার আগে তোমাকে আর একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। যখন ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো, ব্যক্তি সম্পর্কে যেমন মন্তব্য আছে তেমনি দলের সম্পর্কেও মন্তব্য আছে। মানে জামায়াতের সম্পর্কেও মন্তব্য আছে। এই ক্ষমতাসীন দল ওই মন্তব্যের ভিত্তিতে জামায়াতকে কেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। কোন উদ্দেশ্যে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে না। সব চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। যেখানে নিজেদের হাতে অস্ত্র আছে। তারা রেজিস্ট্রেশনটা না দিলেই দল আর থাকে না। এটাতো তারা পারে। সেটা না করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানো হয়েছে।

জামায়াতকে রাখা হয়েছে কেন? এদের রাখার কারণ এরা দীর্ঘদিন ধরে আছে। হয়তো এই মুহূর্তে কিছু না হলেও যদি তারা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করে তখন এ প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হতে পারে। এখন জামায়াতকে নিয়ে ভাববার সময় বিএনপির নেই। সরকারি দলই পারে রেজিস্ট্রেশনটা বাতিল করে দিতে। তারা ব্যক্তিকে ফাঁসি দিতে পারছে আর দলকে বাতিল করতে পারছে না, এটাতো হয় না। এই চিন্তাটা স্পষ্ট না।

 

অভিযোগ রয়েছে, জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিএনপি সরে এসেছে। এর কারণ জানতে চাইলে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, সরে যাবে কোথায়? জিয়াউর রহমানের যে জাতীয়তাবাদী চিন্তা ছিল খালেদা জিয়ারও সেই চিন্তা আছে। হয়তো কোনো ক্ষেত্রে দুর্বল হয়েছে। যেমন তরুণদের আরো একটু ইনভলভ করা দরকার ছিল। এটাকে গ্যাপ বলতে পারো। কিন্তু আদর্শ থেকে সরে গেছে বিএনপি এই কথাটি ঠিক নয়। একজন পুরুষ আর একজন নারীতে তো তফাত আছে। তবে আদর্শ থেকে সরে গেছে এ রকম অভিযোগ তোলা ঠিক না।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ২০ দলীয় জোটভুক্ত করার পরিকল্পনা আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, এরশাদ জাতীয়তাবাদী চিন্তা-ভাবনার লোক নন। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন। সকালে এক কথা বললে বিকালে অন্য কথা বলেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই তো তার মধ্যে নেই।

সূত্র- আজকের পত্রিকা, প্রতিবেদক-নূরুজ্জামান মামুন ।



সম্পাদনা: জপ / বরিশাল ডেস্ক


প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার    সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০। ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।