![]() আ’লীগ নেতার চিংড়ি ঘের গুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্দ কৃষকরা
২৯ December ২০১১ Thursday ৭:০৬:২৯ PM
গলাচিপা, ২৯ ডিসেম্বর (সাইমুন রহমান এলিট/আমাদের বরিশাল ডটকম): পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা চিংড়িচাষের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। মাঠভর্তি ফসলের ক্ষেতে পানি তোলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্দ কৃষকরা দু’দিন ধরে চর মোন্তাজে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হাজারো নারীপুরুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। বিক্ষুব্দরা আওয়ামী লীগ নেতাসহ ঘের মালিকদের নির্মিত তিনটি স্লুইসগেটের স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। তারা অবশিষ্ট স্থাপনা অপসারণের দাবিতে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছে। এদিকে, ঘের মালিকরা জমিতে পানি ওঠার জন্য খালে বাঁধ নির্মাণ ও নিন্মচাপকে দায়ী করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা অভিযোগ করেছে, কয়েকজন প্রভাবশালী চিংড়িচাষী ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে কাউকে কোন কিছু না বলেই আকস্মিক ভাবে চর বেষ্টিন গ্রামের প্রায় ৫ শ’ একর ফসলী জমি নদী-সাগরের লোনা পানিতে ডুবিয়ে দেয়। এর মধ্যে প্রায় দু’ শ’ একর জমিতে এখনও ‘কালাকোড়া’ এবং ‘মাটির চাক’ নামের স্থানীয় আমনের পাকা ধান রয়েছে। আরও অনেক জমিতে ধান কেটে নেয়ার পরে খড় পড়েছিল। কৃষকরা ধান-খড় ঘরে তুলে নেয়ারও সুযোগ পায়নি। তার আগেই হাটু পরিমান পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে ক্ষেতের ফসল। ২৮ ডিসেম্বর বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠে মাঠভর্তি ধান লোনা পানিতে ডুবে আছে দেখতে পেয়ে কৃষকরা ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন এ সমস্ত জমির অন্তত দু’ হাজার মন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক আনসার মাতবর (৫৭) অভিযোগ জানান, তিনি নিজের তিন একরসহ প্রায় ১২ একর জমি চাষ করেছেন। ঘের মালিকরা ক্ষেতে পানি তোলায় তিনি এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। প্রায় ২০ একর জমির ধান নষ্টের অভিযোগ করে কৃষক সানু মোল্লা (৬৫) জানিয়েছেন, প্রভাবশালী ঘের মালিকরা গত দেড় যুগ ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা এভাবে তাদের ওপর অত্যাচার করে আসছে। তারা প্রতি বছর শ’য়ে শ’য়ে মন ধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেবলমাত্র চর বেষ্টিন গ্রামেই হাতে গোনা তিন-চারজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গায়ের জোরে প্রায় ২ হাজার একর জমি দখল করে ছোট-বড় ১১টি চিংড়ি ঘের গড়ে তুলেছে। অথচ ঘের মালিকদের নিজেদের জমি খুব কম। বাকি সব জমি ক্ষুদ্র কৃষকদের। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি মেম্বার আনোয়ার হাওলাদার জানিয়েছেন, ঘের মালিকরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ কেটে নিজেদের প্রয়োজন মতো ইচ্ছামাফিক বেশ কয়েকটি স্লুইসগেট ও কালভার্ট নির্মাণ করে জমিতে পানি তুলছে। গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম জানান, ঘের মালিকরা বাড়িঘরে হাঁস-মুরগী পর্যন্ত পুষতে দিচ্ছে না। জমির মালিক তারা হলেও সে জমিতে তাদের কোন অধিকার নেই। ফসলভর্তি মাঠে পানি তোলার প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্থ শত শত কৃষক পথে নেমে আসে। ২৮ ডিসেম্বর বুধ ও ২৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তারা দফায় দফায় মিছিল-সমাবেশ করে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্দরা ঘের মালিকদের নির্মিত তিনটি স্লুইসগেটের স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে তা মাটি দিয়ে ভরাট করে দিয়েছে। অবশিষ্ট আরও বেশ কয়েকটি স্লুইসগেট ও কালভার্ট ভাঙ্গার দাবিতে তারা এখনও অনড় রয়েছে। এনিয়ে এলাকায় এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি ও পৌর মেয়র এবং চিংড়ি ঘের মালিক আলহাজ আবদুল ওহাব খলিফা ৰেতে পানি তোলার অভিযোগ অস্বীকার এবং চরবেষ্টিন-চর মানিকার মধ্যবর্তী রামনাবাদ নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণকে দায়ী করে জানান, ঠিকাদাররা ওই বাধেঁর অংশ হিসাবে গাজীর খালে বাঁধ নির্মাণ করেছে। এতে নিন্মচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়ে গাজীর খালের বাধেঁর ওপর দিয়ে পানিতে ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গাজীর খালে বাধঁ না হলে কৃষকদের ক্ষতি হতো না। তিনি আরও জানান, এর আগে এ ধরনের ঘটনা কখনই ঘটেনি। আরেক ঘের মালিক বাহাউদ্দিন খলিফা জানান, তারা ক্ষেতে পানি তোলেন নি। নিন্মচাপের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তাদেরকে মিথ্যে দোষারোপ করা হচ্ছে। – সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। |
||
