Current Bangladesh Time
Saturday May ১৮, ২০২৪ ১১:১৪ AM
Barisal News
Latest News
Home » চরফ্যাশন » বিশেষ প্রতিবেদন » ভোলা » চরফ্যাশনে মাছি চাষ করে সফল মিজানুর রহমান
৩ May ২০২৪ Friday ৯:১৮:৫৪ PM
Print this E-mail this

চরফ্যাশনে মাছি চাষ করে সফল মিজানুর রহমান


চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধিঃ

মাছি চাষ করে সফল ভোলার চরফ্যাশনে এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান। প্রতি মাসে মাছও চাষ করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। ইউটিউব দেখে ব্লাক সোলজার ফ্লাই নামক এক ধরনের মাছি চাষ করার মতো অদ্ভুত একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তিনি। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে, গবেষনা করেন এই মাছি চাষ নিয়ে।অবশেষে মাছি চাষ করে আজ সফল এক উদ্যোগক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি।

২০২৩ সালের পুরোটা সময় মাছি চাষ নিয়ে নানা গভেষনা করেন এই মিজানুর রহমান।তারপর গবেষনায় ভালো ফলাফল পেয়ে বাণিজ্যিক ভাবে ২০২৪ সালে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড উত্তর ফ্যাশনে গড়ে তুলেছেন ব্লাক সোলজার ফ্লাই মাছির খামার।খামার গড়ে তোলার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তাকে।প্রতি মাসে মাছির লার্ভা মাছের উৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে বিক্রি করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা।একই সাথে ওই এলাকায় এ খামারটি গড়ে তোলায় সৃষ্টি হয়েছে নানা বেকার যুবকের কর্মসংস্থান।এতে এলাকার লোকজন ও ব্যাপক খুশি।

অদ্ভুত এ চাষের বিষয় নিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা মিজানুর রহমানের সাথে।তিনি জানান,মাছ চাষ করার প্রবল ইচ্ছে অনেক আগে থেকেই ছিলো তার। এমন ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প পরিসরে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি।এদিকে ফেসবুক, ইউটিউব দেখে মিজানুর রহমান জানতে পারলেন সারা পৃথিবীতে মাছের খাবারের বিকল্প হিসেবে ব্লাক সোলজার ফ্লাই মাছির লার্ভা ব্যবহার হচ্ছে।এবং যার খরচ বর্তমানে মাছের খাবার হিসেবে যে খাবার ব্যবহার করা হচ্ছে তার চেয়ে কম । অন্যদিকে খাবারটাও প্রাকৃতিক এবং মাছের বৃদ্ধি ও ভালো হয়।এটা জানার পর ২০২৩ সালের পুরোটা সময় মাছি চাষ নিয়ে গভীরভাবে গভেষনা করেন তিনি । গভেষনার সময় তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ব্লাক সোলজার ফ্লাই মাছির লার্ভা তেলা পিয়া,পাঙ্গাস সহ বিভিন্ন ধরনের মাছকে খাওয়ান । কিছুদিন পর মাছের বৃদ্ধি দেখে বুঝতে বাকি নেই এই লার্ভার গুরুত্ব কতটা । এরপরে তিনি ভাবলেন এই খাবার দিয়ে অধিক লাভ করা যায় এমন মাছের কথা । তখন তিনি শোল ও কোরাল মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন । আর তার এই মাছের খাবার জোগানের লক্ষ নিয়েই ২০২৪ সালে এই ব্লাক সোলজার ফ্লাই মাছির খামার গড়ে তোলা।

তিনি এ মাছি চাষে সম্পর্কে আরো বলেন,একদম শুরুতে নরসিংদী থেকে ব্লাক সোলজার ফ্লাই মাছির লার্ভা সংগ্রহ করেন তিনি।তারপর পচনশীল খাবার খাইয়ে লার্ভাগুলো কে বড় করে তোলেন। লার্ভাগুলো যখন কালো বর্ণ ধারন করে তখন সেটি কয়েকদিনের মধ্যে মাছিতে পরিনত হয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ব্লাক সোলজার ফ্লাই মাছি গুলোকে রাখার জন্য আলাদা একটি ঘরে মশারী দিয়ে ঘিরে একটি স্থান তৈরি করা হয়েছে । যা লাভ কেজ নামে পরিচিত । সেই লাভ কেজে মাছি গুলো প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে একে অপরে ভালোবাসায় মিলিত হয়। কিছুদিন পর তারা ডিম দেয় । ডিম দেয়ার স্থান বড়ই অদ্ভুত । একটা বালতি তার উপর দুইপাশে থাকে থাকে সাজানো কাঠের টুকরো । ওই কাঠের টুকরোর ফাকে ফাকে গিয়ে মাছি ডিম পেড়ে জমিয়ে রাখে । সেখান থেকে খামারের লোকজন ধারালো ছুরি দিয়ে ডিম সংরক্ষণ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষন করেন। ২-৩ দিনের মধ্যে সেই ডিম থেকে ছোট লার্ভা বের হয়।

পরবর্তীতে সেই লার্ভাগুলোকে খামারের অন্য একটি ঘরে নিয়ে রাখা হয়।ওই ঘরটা মূলত লার্ভাগুলোর খাবারের ঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।

সেই ঘরে সারি সারি ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরি চতুর্ভূজ আকৃতির বেশ কিছু স্থানে রয়েছে।সেই স্থানে প্রতিদিন বাজার থেকে সংগ্রহ করা পচনশীল খবার যেমন, সব ধরনের শাক সবজি,মাছ, ফল ইত্যাদি এ ধরনের খাবার দেয়া থাকে।আর ছোট লার্ভাগুলো মূলত সেই পচনশীল খাবারের মধ্যে রাখা হয়। সেখানের খাবার খেয়ে প্রি পিউপা এবং পিউপা তে পরিনত হয়। তারপর আবার সেগুলোকে লাভ কেজে নিয়ে রাখা হয়।কয়েকদিন পরে সেটি পরিপূর্ণ একটি মাছিতে রূপান্তরিত হয়।

মিজানুর রহমান বলেন,এই মাছিটিকে বন্ধু মাছি ও বলা হয়। পরিবেশের বর্জগুলো খেয়ে প্রোটিনে কনভার্ট করা এই মাছির কাজ।এতে পরিবেশ ভালো রাখা সম্ভব।

তিনি আরো জানান,এই মাছি চাষে খরচ তেমন নেই। এটি মাছের খাবার হিসেবে খুবই ভালো এবং দামেও স্বস্তা । ইতিমধ্যে ওই এলাকার বেশ কয়েকজন মাছ চাষী এই খাবার তার মাছ কেও খাইয়েছেন । এবং ভালো ফলাফল পেয়ে এই লার্ভা মাছের খাবার হিসেবে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মিজানুর রহমান জানান,প্রতিদিন এ খামারে এখন ১০০-১৫০ কেজি লার্ভা উৎপাদন হচ্ছে । তবে এ খামারে প্রতিদিন ১ টন পর্যন্ত মাছির লার্ভা উৎপাদন সম্ভব। বানিজ্যিক ভাবে মাছের খাবার হিসোবে লার্ভা বিক্রি করা হচ্ছে এ খামার থেকে। প্রতিকেজি ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এই লার্ভা। এই খামার দেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে, এই খামারে মিজানুর রহমানের পাশাপাশি তার আরো কয়েকজন ভাই এই খামার দেখাশোনা করেন।তারাও স্বপ্ন দেখে এই খামার নিয়ে।একদিন হয়তো এই খামার অনেক বড় হবে। এ নিয়ে কথা হয় মিজানুর রহমানের ছোট ভাই আরিফুল ইসলামের সাথে।তিনি জানান,আমার ভাইয়ের সাথে আমি এই খামারের দেখাশোনা করি। শুরুতে অনেক চ্যালেন্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।অনেক ভালো সম্ভাবনা দেখছি এই মাছি চাষে। অনেক লাভজনক এই মাছি চাষ। সব মিলিয়ে ভালো আছেন বলে জানান তিনি।

এ খামারে ১০-১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। এখানে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব ভালো আছেন তার।এমনি এক শ্রমিক মেহেদী হাসান।তিনি বলেন, এখানে কাজ করে ভালো টাকা মাসে বেতন পান তিনি।তার মতো এমন বেশ কিছু শ্রমিক এখানে কাজ করেন।এখানে চাকুরী করে যে টাকা উপার্জন করেন তারা তাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব ভালো আছেন বলে জানান।

অন্যদিকে ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে একজন মোঃ ইউনুস । তিনি মাছি চাষ নিয়ে বলেন,এই মাছি চাষ ভবিষ্যতে এ এলাকার জন্য একটি আশির্বাদে রূপ নিবে। এটি হওয়াতে অনেক বেকার ছেলের চাকুরীর ব্যবস্থা হয়েছে।ভবিষৎতে আরো বড় হলে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমনটাই তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে নিয়ে কথা হয় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব’এর সাথে। তিনি জানান, মাছির লার্ভা মাছের খাবার হিসেবে খুবই উত্তম একটি খাবার।এটিতে প্রচুর পরিমানে আমিষ রয়েছে যা মাছের বৃদ্ধিতে ভালো ভূমিকা পালন করে। এটিকে খুবই ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছেন এই জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

যেখানে মানুষ মাছি তারায় রোগ জীবানু ছড়ায় এটা ভেবে। আর সেখানে মাছি পালন করা হচ্ছে পরম যত্নে।অন্যদিকে আমিষের যোগান দিয়ে যাচ্ছে এ মাছি । এমন অভাবনীয় উদ্যোগ এবং উদ্যোগক্তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক

শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
বছর ঘুরতেই ইলিশের দাম বেড়ে দ্বিগুণ
খাল খননের নামে ঠিকাদার ইতালী শহিদের বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ
‘নির্বাচনে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে কিন্তু প্রতিহিংসা যেন না থাকে’
গৌরনদীতে মেরীর সমর্থন মনিরকে, আশাবাদী হারিছও
বরিশালে ধানের বাম্পার ফলন, খুশি কৃষক
Recent: Mayor Hiron Barisal
Recent: Barisal B M College
Recent: Tender Terror
Kuakata News

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
আমাদের বরিশাল ২০০৬-২০২০

প্রকাশক ও নির্বাহী সম্পাদক: মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্নু, সম্পাদক: রাহাত খান
৪৬১ আগরপুর রোড (নীচ তলা), বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, ই-মেইল: hello@amaderbarisal.com