Home » কলাপাড়া » পটুয়াখালী » পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় মেগাপ্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসনের দাবিতেসংবাদ সম্মেলন
১২ May ২০২৫ Monday ৬:৪৬:০৪ PM
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় মেগাপ্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসনের দাবিতেসংবাদ সম্মেলন
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় মেগাপ্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন দাবিতে আজ ১২ মে ২০২৫ রোজ সোমবার সকাল ১১:০০টায় বরিশাল রিপোর্টাস ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রান্তজন এর সহযোগীতায় বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জন সুরক্ষা ফোরাম এবং কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চ যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে। বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জন সুরক্ষা ফোরাম এর সদস্য অধ্যাপক টুনু কর্মকার এর সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছনে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের সমন্বয়ক শুভংকর চক্রবর্তী। আলোচনা করেন সদস্য এড্যা। সুভাষ চন্দ্র দাস; আখতারুল কবীর, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মোঃ ফোরকান হাওলাদার; মোঃ রবিউল মোল্লা এবং প্রান্তজন এর ফিল্ড কোর্ডিনেটর সাইফুল্লাহ মাহমুদ।
লিখিত সংবাদ বিজপ্তির নিচে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরাম এবং কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চ এর পক্ষ থেকে আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন।
আপনারা সকলেই জানেন, বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় বঙ্গোপসাগরের তীরে কলাপাড়া উপজেলা অবস্থিত। সাগর তীরবর্তী দক্ষিণের জনপদ পর্যটন সমৃদ্ধ কলাপাড়া উপজেলায় আছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ত পানি প্রবেশ, কৃষি জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, আমাবস্যা এবং পূর্ণিমায় প্লাবিত হওয়া তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
সাংবাদিক বন্ধুগণ, বিগত সরকারের আমলে ২০১৩ সাল থেকে আরেকটি বিশেষ কারণে কলাপাড়া উপজেলা আলোচিত। এই উপজেলার অন্তর্ভুক্ত টিয়াখালী, ধানখালী, লালুয়া, বালিয়াতলী এবং চ¤পাপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছু মেগা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলমান আছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দর, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল), পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপারথার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আশুগঞ্জ) এবং বানৌজা শেরেবাংলা নৌঘাঁটিসহ অন্যান্য প্রকল্প।
উল্লেখিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য টিয়াখালী, লালুয়া, ধানখালী এবং বালিয়াতলী ইউনিয়নে ৬,৫৬২.২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ধানখালী ইউনিয়ন থেকে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১০০২.৭৭ একর; পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল) এর জন্য ৯১৫.৭৪ একর এবং ধানখালী ও চ¤পাপুর ইউনিয়ন থেকে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোঃ লিঃ এর জন্য ৯২৫.৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বানৌজা শেরেবাংলা নৌঘাঁটি নির্মাণের জন্য লালুয়া ইউনিয়নের ৫১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী আরও ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উল্লেখিত মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সর্বোমোট ৯,৯২৩.২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে।
এই সকল জমি অধিগ্রহণের আগে বলা হয়েছিল- জমির ন্যায্যমূল্য দেয়া হবে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে, কলাপাড়ার কেউ বেকার থাকবে না, সবাইকে প্রকল্পে কাজ দেয়া হবে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। প্রতিশ্রæতির কিছু কিছু বাস্তবায়ন হলেও, অধিকাংশ প্রতিশ্রæতির বাস্তবরূপ এখনো দেখা যাচ্ছে না। কলাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ আজ মানবেতরভাবে কোন রকমে বেঁচে আছে। দালালের সহায়তায় প্রকৃত জমির মালিকের বিরুদ্ধে ঠুকে দেওয়া হয় মামলা। অনেক জমির মালিকের ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে গেছে এমন ভুয়া মামলায়। এতে মিলছে না ক্ষতিপূরণ, ঠাঁই হচ্ছে না পুনর্বাসন কেন্দ্রে। আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ করা হয়েছে বহু পরিবারকে। আবার অনেককে পুনর্বাসন করা হলেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কৃষক ও জেলে পরিবার হঠাৎ হারিয়েছে মাছ ধরার জলাশয় এবং কৃষিজমি। তাঁরা এখন বেকার। কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পের কারণে ইলিশ প্রজননসহ প্রাণ-প্রকৃতিরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইনদের ২৩৯ বছরের পুরোনো ছয়ানীপাড়া পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভ‚মি অধিগ্রহণের ফলে কলাপাড়া উপজেলায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আমরা দীর্ঘদিন ধরে অধিকার বঞ্চিত এই সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পরিস্থিতি স¤পর্কে বিভিন্ন উপায়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়ে আসছি। সেই সাথে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির বিবেক সাংবাদিকদের জানিয়ে আসছি। এই ধারাবাহিকতায় স¤প্রতি আমরা বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জন সুরক্ষা ফোরাম এবং কলাপাড়া পরিবেশ ও জন সুরক্ষা মঞ্চ এর উদ্যোগে একটি দল ৩০ এপ্রিল এবং ০১ মে, ২০৫ সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেছি। এই পরিদর্শনের পরে আজকে আমরা আপনাদের সাথে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে চাই। আমাদের পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার আগে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পুনর্বাসনের অফিসিয়াল চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পুনর্বাসনের অফিসিয়াল চিত্র ঃ
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের অগ্রগতি রিপোর্ট অনুসারে জমি অধিগ্রহণের ফলে সর্বমোট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৪,২০০ টি। বাড়ি-ঘর অধিগ্রহণের আওতায় আসার কারনে ৩,৪২৩ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পুনর্বাসিত হয়েছে ২,৫০০-এর মতো পরিবার। পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং ঘর বিতরণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০টি পরিবারকে স্বপ্নের ঠিকানা নামক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল) এর ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১টি পরিবারকে ‘আনন্দপল্লী’ এবং ‘স্বপ্ননীড়’ নামে দুইটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোঃ লিঃ জন্য জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন আওতায় আনা হবে। বানৌজা শেরেবাংলা নৌঘাঁটি নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের কোন পরিকল্পনা নেই। তাই সঠিক কোন সংখ্যা পাওয়া যায়নি। উল্লেখিত মেগা প্রকল্পের ফলে কাগজ কলমে ক্ষতিগ্রস্ত চার হাজার পরিবারের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এই তথ্য অনুসারে অধিগ্রহণকৃত জমিতে যেসকল পরিবারের নিজস্ব মালিকানাধীন জমিতে বাড়ি-ঘর ছিল শুধুমাত্র তারাই পুনর্বাসনের আওতায় এসেছে। তবে অধিগ্রহণকৃত এলাকায় সরকারী খাস জমি, পতিত জমি, বেড়িবাঁধ বা রাস্তার ঢালে এবং অন্যের জমিতে অসংখ্য পরিবারের বসবাস ছিল যারা কোনভাবেই পুনর্বাসনের আওতায় আসেনি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, পুনর্বাসনের দুইটি ভিন্ন চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।
পুনর্বাসনের প্রথম চিত্রঃ দুই বছরেও পুনর্বাসনের ঘর পায়নি ১৭৫টি পরিবার।
কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ও চ¤পাপুর ইউনিয়নে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোঃ লিঃ এর জন্য জমি অধিগ্রহণের ফলে বাড়ি-ঘর হারানো ১৭৫টি পরিবারকে এখনো পুনর্বাসনের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এখন থেকে দুই বছর আগে এই সকল পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে উচ্ছেদের প্রতিশ্রæতি দিলেও দুই বছরেও পুনর্বাসনের ঘর হস্তান্তর করেনি। ফলে অনেক পরিবার চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অধিকাংশ পরিবার বেড়িবাঁধের ঢালে এবং খাস জমিতে বসবাস করছে। স¤প্রতি গত ২০ মার্চ এই সকল পরিবার দ্রæত পুনর্বাসন ঘর হস্তান্তরের দাবীতে পাঁচজুনিয়া গ্রামে পুনর্বাসন কেন্দ্রের সামনে একটি মানববন্ধন করেছেন।
উত্তাধিকার সূত্রে বহু বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিজের জমিতে বসবাস করতেন। গত ১৪ মার্চ, ২০২৩ অধিগ্রহণকৃত জমিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতায় অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারপর পর্যায়ক্রমে অধিগ্রহণকৃত সকল পরিবারকে উচ্ছেদ করা হলেও এখন পর্যন্ত পুনর্বাসনের ঘর হস্তান্তর করা হয়নি।
আমাদের পরিদর্শনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আমরা আমাদের বসতভিটা হারিয়েছি, এখন আশ্রয়ের জন্য পুনর্বাসনের ঘরগুলো দ্রæত হস্তান্তর করা না হলে আমরা আরও সংকটে পড়ব।”
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য পাঁচজুনিয়া গ্রামে ১৫ একর জমিতে ১৭৫টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মান কাজ চলমান আছে। তবে নির্মানকাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। বর্ষাকালের পূর্বে যদি এই ঘর হস্তান্তর করা না হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অবর্ননীয় কঠিন পরিস্থিতে পড়বে।
তাই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহŸান করছি, অতি দ্রæত পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্মান কাজ শেষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
পুনর্বাসনের দ্বিতীয় চিত্রঃ এক টুকরো খাস জমি ছাড়া কিছুই পাচ্ছে না ১৩৬টি ভূমিহীন পরিবার।
কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাস করে ভ‚মিহীন ১৩৬টি পরিবার। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এই বেড়িবাঁধ প্রশস্ত করে রাস্তা নির্মাণ করার ফলে পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ হতে হচ্ছে। উচ্ছেদ হতে যাওয়া এই সকল পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসন শুধুমাত্র এক টুকরো খাস জমি বরাদ্ধ করেছে। পায়রা বন্দরের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ ৩,৪২৩ টি পরিবারকে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করা হলেও এই ভ‚মিহীন পরিবারগুলোকে কোন ধরনের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না।
ইতিমধ্যে কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াই ২২টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরিবারগুলোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থের এক টুকরো জমি বরাদ্ধ করা হয়েছে। বরাদ্ধকৃত জায়গায় কোন টিউবেয়েল বা পুকুর নেই। খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। এমনকি পরিবারগুলো এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। চলাচলের কোন রাস্তা করা হয়নি। বর্ষার পানি যাওয়ার কোন ব্যবস্থাও নেই। ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার কারণে অধিকাংশ পরিবার এখনো ঘর তুলতে পারেনি। কোন মতে পলিথিনের ছাওনি দিয়ে মানবেতর ভাবে বসবাস করছে। একই সাথে উপজেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্ধকৃত জমি মৌখিকভাবে বুঝিয়ে দিলেও অনুমোদনের কোন কাগজ না দেওয়ায় তারা অনিশ্চয়তায় মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে বাকি পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্ধকৃত জমি নদীর তীরবর্তী হওয়া কারণে নদী ভাঙন এবং আমাবস্যা ও পূর্ণিমায় প্লাবিত হওয়া আশংকা রয়েছ।
দুই বছর আগে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ লালুয়ায় অবস্থিত প্রথম টার্মিনাল থেকে টিয়াখালীতে প্রশাসনিক ভবন হয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা আঞ্চলিক সড়কের সাথে যুক্ত হওয়ার বিকল্প সড়ক হিসাবে পায়রা বন্দরের গেট থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পর্যন্ত বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে সাড়ে পাঁচ কিঃমিঃ রাস্তা নির্মাণ করার কাজ শুরু করেছে। এই রাস্তা নির্মাণ করতে জিয়া কলোনীসহ বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসকারী আনুমানিক ১৩৬টি ভ‚মিহীন পরিবারকে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বাস্তুভিটাহীন হওয়ার কারণে ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকার এই পরিবারগুলোকে আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিল। যার পর জঙ্গল সাফ করে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও তারা বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাস করে আসছে। বেড়িবাঁধের বাইরের দিকে বসবাস করার ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তারপরও মাছ ধরে, ইট ভাটায় কাজ করে, নির্মাণ শ্রমিক এবং কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ করে বিভিন্ন টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করে আসছে। এই বসতিতে একটি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটা মাদরাসা এবং মসজিদ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতে পরিবারগুলো যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য দুই বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দাবী আদায়ের চেষ্টা করছিল। তাদের দাবী ছিল পায়রা বন্দরের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ ৩,৪২৩ টি পরিবারকে যেভাবে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করা হয়েছে একইভাবে এই ভ‚মিহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। কিন্তু পায়রা বন্দর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বরাদ্ধকৃত জমি ভরাট করে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি।
এই পরিস্থিতিতে প্রথম পর্যায়ের ২২টি পরিবারের জন্য অতি দ্রæত বিদ্যুৎ, টিউবয়েল, পুকুর, চলাচলের রাস্তা এবং পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেস ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বরাদ্ধকৃত জমির বরাদ্ধ অনুমোদনের কাগজ প্রদান করা। একই সাথে বাকি পরিবারগুলোর জন্য নদী থেকে যথেষ্ঠ দূরে এবং উঁচু জমিতে বরাদ্ধ দেওয়া প্রয়োজন।
পরিশেষে আমরা বলতে চাই যে, ভ‚মি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ বিবেচ্য বিষয় থাকা প্রয়োজন। অথচ কলাপাড়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ক্ষতির মুখে ফেলে জনস্বার্থের ধারণা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। অধিগ্রহণের ফলে ভ‚মি মালিকরা বিভিন্নভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাঁরা যাতে সহজে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ অতি জরুরি। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসন করা দরকার। প্রয়োজনে পুরোনো অনেক আইনকানুন-বিধি পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জনের করা যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে কলাপাড়া পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের পক্ষে থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি যে- ১. কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পে ভ‚মি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, যথাযথ পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ২. কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পে যেসকল খাল বা জলাশয় ভরাট হয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। একইসাথে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। ৩. উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমীক্ষা পরিচালনা করে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)