" />
AmaderBarisal.com Logo

চরফ্যাশনে পৌরসভার শতকোটি টাকার জমি উদ্ধারে নোটিশ


আমাদেরবরিশাল.কম

২৮ September ২০২৫ Sunday ১২:৩১:০৬ AM

চরফ্যাশন ((ভোলা) প্রতিনিধি:

শতকোটি টাকা মূল্যের খাস জমি উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার জন্য নোটিশ দিয়েছে ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভা। বিগত আওয়ামী স্বৈরশাসকের আমলে চরফ্যাশন শহরে পৌরসভার মালিকানাধীন ১৫ শতাংশ জমি সেখানকার সাবেক এমপির লোকজনের দখলে ছিল।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যায়ভাবে সাবেক ওই এমপি তার লোকদের মাঝে জমিগুলো ভাগ করে দেওয়ার পর সেখানে তারা মার্কেট নির্মাণ করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।

গত বছরে জুলাই বিপ্লবের পর ওইসব দখলবাজরা পালিয়ে গেলেও পুরনো দুর্বৃত্তরা নতুন মোড়কে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরা পৌরসভার জমিতে নির্মিত ১২টি চলমান দোকানসহ পুরো একটি মার্কেট ফের নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। 

সেখানকার পৌরসভার এমন বহু সম্পত্তি পুরনো ভূমিদস্যুদের হাত বদল হয়ে নতুন দস্যুদলের কব্জায় চলে এসেছে। ফলে সরকারের বেহাত ওইসব সম্পত্তি উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় পৌর প্রশাসক ও ইউএনওকে বেকায়দায় ফেলতে মাঠে নেমেছেন ভূমিখেকো দখলবাজরা।

সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে গেলে চরফ্যাশন পৌর কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তারা গণমাধ্যমের কাছে পৌর সম্পত্তি দখল সন্ত্রাসের এমন চাঞ্চল্যকর বহু ঘটনা তুলে ধরেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, জুলাই বিপ্লবের পর চরফ্যাশন পৌরসভার সেই বেদখল জমি উদ্ধার নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে থানা মসজিদ সংলগ্ন সোনালী পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে পৌরসভার জমিটি ফের দখল করেছে। সেখানে ফ্যাসিস্ট আমলের দখলবাজদের ১২টি আধাপাকা টিনশেড দোকান নির্মাণ করা আছে। মার্কেটের দোকানগুলো হাত বদল হওয়ার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভাড়া নিয়ে সেখানে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। 

জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে পৌর সম্পত্তিটি আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে সেগুলো এখন অন্যদের দখলে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এটি নিয়ে পূর্ব থেকেই আদালতে একটি মামলা ছিল। জমিটি সরকারি খাস সম্পত্তি হওয়ায় গত বছর সুপ্রিমকোর্ট এটি চরফ্যাশন পৌরসভার তত্ত্বাবধানে দেন। সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে সেখানে কিচেন মার্কেট নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে।

টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ৪২ লাখ ৪১ হাজার টাকায় কাজটি লটারির মাধ্যমে মেসার্স ইব্রাহিম ডাকুয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পায়।  গত ১৫ জুন সেটির কার্যাদেশও দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের কারণে এখনো কিচেন মার্কেটের কাজ শুরু করতে পারেনি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

পৌর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই তাদের বেহাত ওই সম্পত্তি ছেড়ে দিতে দখলবাজদের নোটিশ দিয়েছে। তবুও এসব দখলবাজরা যেন প্রশাসনের সেই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। তারা সরকারি সম্পত্তি নিজেদের কব্জায় রাখতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছে। তারা উল্টো কিচেন মার্কেট তৈরির টেন্ডারের ৪৪ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে পৌর কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মুদি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুস সাত্তার মিঠু গণমাধ্যমকে বলেন, পৌরসভার এই জমিটি আওয়ামী লীগের লোকেরা এতদিন ভাগাভাগি করে খাচ্ছিল। দেশের পটপরিবর্তন হলে এ সম্পত্তি এখন হাত বদল হয়ে অন্যদের কাছে চলে যায়।

এ বিষয়ে ওই কিচেন মার্কেট নির্মাণের ঠিকাদার ইব্রাহিম ডাকুয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, টেন্ডার দেওয়ার নামে যে লুটপাটের বিষয়টির প্রচার করা হচ্ছে- তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। পৌরসভার বেহাত জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় এখনো কাজ শুরু সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ যখনই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে আমাদেরকে জমিটি বুঝিয়ে দেবে, তখনই আমরা কাজ শুরু করব।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আহমেদ বলেন, সোনালী পুকুর পাড়ে পৌরসভার শত কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল দখলে নিয়ে যে যার মতো অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে পরিবেশ নষ্ট করছিল। এ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিট শুনানিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজারের ওই জমিটি চরফ্যাশন পৌরসভাকে দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়ত্ব দিয়ে সুপ্রিমকোর্ট একটি আদেশ দেন।

তিনি বলেন, সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের জায়গাটি খালি করে দিতে একাধিকবার নোটিশ দিলেও কোনো ফল পায়নি। তাই উন্নয়নের স্বার্থে ওই স্থানে একটি কিচেন মার্কেট তৈরির উদ্যোগ নেয় পৌরসভা। সেই অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাসে একটি ই-জিপি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। 

শামীম আহমেদ আরও বলেন, পৌর প্রশাসক ও ইউএনওর শক্ত হস্তক্ষেপে আমরা অভিযানের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারের সব প্রস্তুতি নিয়েছি।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পৌর-প্রশাসক রাসনা শারমীন মিথি বলেন, পৌরসভার সোনালী পুকুর পাড়ের ওই জমিটি পৌরসভার। এ জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে তা বাজার সমিতির নাম করে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য নির্মিত স্থাপনা ভেঙে সেখানে পৌরসভার অর্থায়নে একটি আধুনিক কিচেন মার্কেট নির্মাণ করার লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সরকারের এ খাস জমি পৌরসভার আয়ত্বে রাখার উদ্দেশ্যে এ মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে পৌর মার্কেট তৈরি করা না হলে এ জমি ফের বেদখল হয়ে যাবে এবং পৌরসভা তার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।



সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার    সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০। ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।