![]() বরিশালে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত বিএনপি
২৯ September ২০২৫ Monday ৪:০২:৫১ PM
কে কার লোক বিরোধে মুখ দেখাদেখি বন্ধবিশেষ প্রতিনিধি: ![]() মনোনয়ন দ্বন্দ্বে গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বরিশালের বিএনপি। ৬ জেলার ২১ আসনের মধ্যে হাতে গোনা ২/১টি ছাড়া সবকটিতেই এমন পরিস্থিতি। কে কার লোক, সেটাই বাছাই চলছে নেতাদের মধ্যে। নেতার বিরাগভাজন হওয়ার শঙ্কায় অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না কেউ। কোনো কোনো এলাকায় এক পক্ষের সঙ্গে অন্য পক্ষের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় পালটাপালটি আয়োজনে। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে মনোনয়নের আশায় মাঠে আছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ-সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। মনোনয়ন নিয়ে ৩ নেতার দ্বন্দ্ব যেমন দীর্ঘদিনের, তেমনই দুই উপজেলার নেতাকর্মীরাও বিভক্ত ৩ গ্রুপে। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে স্বপন আর কুদ্দুস সমর্থকদের একে অপরের চরিত্রহননের চেষ্টা। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সোবাহান। নিজের মতো করে তিনি লড়াই চালাচ্ছেন। দুই উপজেলার নেতারা জানান, স্বপন-কুদ্দুসের মনোনয়ন কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্বে অনেকটাই দা-কুমড়ো সম্পর্ক তাদের অনুসারীদের। নির্বাচনে এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে স্বপন বলেন, ‘বিএনপিসহ বড় দলগুলোয় এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এখানে যোগ্যদের পাশাপাশি অযোগ্যরাও নেতৃত্ব আর মনোনয়ন চাইতে পারে। এটাই দলীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে কিন্তু সবাই এক, তা হচ্ছে ধানের শীষ।’ বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে মনোনয়নের আশায় মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন সান্টু ও কাজী দুলাল হোসেন এবং সাবেক ছাত্রনেতা সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এখানে অন্যরা খানিকটা সহিষ্ণু হলেও গোল বেধেছে সান্টুকে নিয়ে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, মনোনয়নের লড়াইয়ে থাকা অন্য নেতাদের তো দূর, তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও সহ্য করতে পারেন না সান্টু। মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতাদের সঙ্গে ছবি আছে-এমন কর্মী-সমর্থকদেরও তিনি নিজের তালিকা থেকে বাদ দেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন রয়েছে ক্ষোভ, তেমনই মনোনয়ন পাওয়া-না-পাওয়া প্রশ্নে কীভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেন সান্টু, তাই নিয়েও রয়েছে আলোচনা। এসব বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি সান্টু। রওনাকুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমরা তো ধানের শীষ আর বিএনপির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি। মনোনয়ন কে পাবে না বা পাবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। মনোনয়ন যিনিই পান, আমরা ধানের শীষকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করব।’ বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মনোনয়ন নিয়ে চলছে ৩ নেতার জমজমাট লড়াই। তারা হলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার খান। এখানে সাত্তার খানকে নিয়ে জটিলতা না থাকলেও দুই গ্রুপে বিভক্ত সেলিমা আর জয়নাল সমর্থকরা। দুই পক্ষের এই বিরোধ প্রশ্নে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করব। আমাদের কাছে জরুরি হচ্ছে ধানের শীষ।’ বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান আর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মেসবাহউদ্দিন ফরহাদে বিভক্ত দল। দুই পক্ষের প্রায়ই চলে শোডাউন। কেবল নেতাকর্মীই নন, দুই উপজেলা বিএনপির পদধারী নেতারাও বিভক্ত রাজিব-মেসবাহ গ্রুপে। সংঘাত-সংঘর্ষ না হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা। রাজিব আহসান বলেন, ‘আমি দলের জন্য কাজ করছি। ধানের শীষ জিতলেই তো আমার জয়।’ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘দলের দুর্দিনে আমি এখানে সংসদ-সদস্য হয়েছি। আশা করি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’ বরিশাল-৫ (বরিশাল সদর) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন চাইছেন হাফ ডজনের বেশি। তবে কেন্দ্রের ডাক পেয়েছিলেন ৩ জন। তারা হলেন-সাবেক মন্ত্রী, পাঁচবারের এমপি, সাবেক মেয়র ও হুইপ অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। কেবল এ তিনজনই নন, এখানে বিএনপির ভেতরে রয়েছে ‘যত মত তত পথ’-এর মতো ৪-৫ খণ্ডের বিভক্তি। মহানগরের ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিনের রয়েছে নিজস্ব গ্রুপ। আহ্বায়ক-সদস্যসচিব বাদ দিয়ে চলেন তিনি। ফারুকের সঙ্গে আছেন মহানগরের সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদারসহ ৩০ ওয়ার্ড কমিটির নেতারা। সরোয়ার চলেন পদ-পদবি না থাকা সাবেক নেতাদের নিয়ে। মহানগর কমিটির সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবিরেরও রয়েছে নিজস্ব অনুসারী। আবু নাসের অবশ্য নেই এসব জটিলতায়। নির্বাচনি এলাকার ১০ ইউনিয়নসহ মহানগরে রয়েছে তার আলাদা বলয়। অন্য এলাকাগুলোর মতো এখানেও সরোয়ার সমর্থকরা মিশতে পারেন ফারুক-জিয়া বা আবু নাসেরের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘এখন আমরা অনেকেই যেমন মনোনয়ন চাইছি, তেমনই যখন প্রশ্ন আসবে ধানের শীষ, তখন দেখবেন সবাই মিলেছি এক মোহনায়। তখন কোনো বিভেদ থাকবে না। তারপরও যদি কেউ সিদ্ধান্তের বাইরে যায়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে দল।’ একটিমাত্র উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) নির্বাচনি এলাকায় মনোনয়ন দ্বন্দ্বে এরই মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষ। মনোনয়নের লড়াইয়ে এখানে সবচেয়ে আলোচিত দুই নেতা হলেন বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) আহ্বায়ক সাবেক সংসদ-সদস্য আবুল হোসেন খান এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশে আসা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম রাজন। তার আসার আগে ছিল আবুলের একক আধিপত্য। সেই আধিপত্য নিয়ে এরই মধ্যে হয়েছে একাধিকবার দুপক্ষের সংঘাত-সংঘর্ষ। রাজনের সঙ্গে আছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেবুল। জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন বলেন, ‘চূড়ান্ত মনোনয়নের ঘোষণা হলে এসব বিরোধ থাকবে না। তখন সবাই মাঠে নামবে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে।’ কেবল বরিশাল নয়, ২১ আসনের অন্তত ১৮টিতেই একে-অপরের বিরুদ্ধে দলের নেতারা। সৃষ্টি হচ্ছে দলীয় কোন্দল-গ্রুপিং। তবে এসবকিছুকে দলীয় গণতন্ত্র আর নিরপেক্ষ রাজনীতির সৌন্দর্য আখ্যা দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘যে দলে লাখ লাখ নেতাকর্মী, সেখানে এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে আপনারা জিজ্ঞেস করে দেখুন, এদের কেউ-ই বলবে না যে তারা ধানের শীষের বিরুদ্ধে। আগের নির্বাচনগুলোয়ও মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রশ্নে সবাই মিলেছে এক মোহনায়। এবারও তাই হবে।’ সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। |
||