![]() বরিশাল-৫: মনোনয়ন লড়াইয়ে সরোয়ার-আলালসহ ৬ হেভিওয়েট
৬ October ২০২৫ Monday ৯:০৯:৫১ PM
অনলাইন নিউজ ডেস্ক: ![]() বরিশাল-৫ আসনটি বরাবরই আলোচনায়। স্থানীয় রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও এই আসনটি বারবার আলোচনায় উঠে আসে। এর কারণ আসনটি ঘিরে হেভিওয়েটদের লড়াই শুরু হয় প্রতি নির্বাচনেই। এবারও ব্যাতিক্রম নয়। ফ্যাসিবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসনে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে ব্যাপক পরিচিত অন্তত ৬ প্রার্থী মনোনয়ন লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন।তাদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। কথাই লড়াই থেকে তাদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেছে। বরিশাল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ে আছেন হাফ ডজনেরও বেশি নেতা। যদিও সাক্ষাতের জন্য এখন পর্যন্ত কেন্দ্রের ডাক পেয়েছেন ৩ জন। এই আসন থেকে এবারও নির্বাচন করতে চান ৫ বারের সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার।তিনি মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ দিন। ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিব পদে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ছিলেন। জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। দীর্ঘদিন রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্ব করায় বরিশালে সরোয়ারের ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি একসময় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আলাল। ওই সময় সরোয়ারের সঙ্গে আলালের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ছিল। এলাকায় দুই হেভিওয়েট নেতার আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আলালকে পরবর্তীতে ঢাকার একটি আসন থেকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন নেননি আলাল। তার যুক্তি ছিল খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার অর্থ হয় না। আলাল বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। আগে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে ছিলেন। আলালের সমর্থকরা চাচ্ছে তিনি বরিশাল -৫ থেকে এবার নির্বাচন করুক। এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের রহমতউল্লাহ। তিনি মনোনয়নের জন্য জোর লবিং করছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকও এই আসন থেকে ভোট করতে চান। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চাঁন স্থানীয় বিএনপির পোর খাওয়া নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জেল খেটেছেন।এবার তিনিও মনোনয়ন চাইছেন সরোয়ারের আসনে। বরিশাল (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন ও মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন ও এই আসন থেকে ভোট করতে চাইছেন। জানা গেছে, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দলকে ৭ খণ্ড করে চলছে এদের মনোনয়নের লড়াই। সভা-সমাবেশও চলছে আলাদাভাবে। তবে সম্প্রতি এসব নেতার কয়েকজন মেতেছেন একে অপরের প্রতি বিষোদ্গারে। নিজেকে সৎ প্রমাণ করতে গিয়ে অন্যের চরিত্র হননও করছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মনোনয়নপ্রার্থী রহমতউল্লাহর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির দুই নেতার দেওয়া বিবৃতি। যা নিয়ে এখন চলছে তোলপাড়। একটি অনলাইন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের জন্য নিজের ত্যাগের কথা বলেন রহমতউল্লাহ। আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা সম্পর্কে বলার পাশাপাশি বরিশালে রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে একটি বিবৃতি দেন জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন। বিবৃতিতে রহমতউল্লাহর বক্তব্য মিথ্যা ও বরিশালের আন্দোলনে তার তেমন ভূমিকা ছিল না দাবির পাশাপাশি তাকে জাতীয় পার্টির উচ্ছিষ্টভোগী বলে আখ্যা দেওয়া হয়। পালটা বিবৃতিতে রহমতউল্লাহ বলেন, বিবৃতির ভাষাই প্রমাণ করে যে, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। কোনো ভুল করলে দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কিংবা আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া যেত। হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি ভিউ পাওয়া একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে সবগুলো গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দলের ঐক্য বিনষ্টের মতো ক্ষতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা। বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে আবুল কালাম শাহিন বলেন, যেহেতু রহমতউল্লাহ মিডিয়ায় ওই বক্তব্য দিয়েছেন তাই আমরাও গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েই তার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কেবল রহমতউল্লাহ নয়, মনোনয়নপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ও মনিরুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধেও ভাইরাল হয়েছে আরেক বিএনপি নেত্রী আফরোজা নাসরিনের করা অভিযোগের ভিডিও। সম্প্রতি এক সভায় দেওয়া বক্তব্যে ওইসব অভিযোগ করেন নাসরিন। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মনোনয়নপ্রার্থী সরোয়ার ও ফারুকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ফ্যাসিস্ট তোষণের অভিযোগ করে বক্তব্য রাখছেন নাসরিন। দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সরোয়ারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তার দুই ভাই নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল দখল করেছে। এই ১৭ বছর আপনার ভাইয়েরা কোথায় ছিল? তারা আজ বাস টার্মিনাল দখল করে লাখ লাখ টাকা আয় করছে অবৈধভাবে। সরোয়ারকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, দরবেশ সেজে বসে আছেন? আপনারা চাঁদাবাজি করবেন, দখলবাজি করবেন আর বরিশালের মানুষ আপনাকে ভোট দেবে? তারা কি বোকা? অন্যদিকে মনিরুজ্জামান ফারুককে উদ্দেশ করে নাসরিন বলেন, আপনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন। উপস্থিত সবাইকে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম ও সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে ফারুকের ছবি দেখিয়ে নাসরিন বলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে আপনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন। বরিশালের মানুষ আপনাদের মতো চাঁদাবাজ-দখলবাজ সন্ত্রাসীদের আর প্রশ্রয় দেবে না। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পালটা অভিযোগ করে ফারুক বলেন, নাসরিনের আশপাশে এখন যারা আছে তারা কোন দলের? ফ্যাসিস্ট দলের কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের নিয়ে চলাফেরা করেন তিনি। ছবিসহ সব প্রমাণ রয়েছে আমাদের কাছে। ৫ আগস্টের পর কোন জাদুবলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে লাইনসহ বাস কিনলেন নাসরিন? এত টাকা তিনি পেলেন কোথায়? সাদিক ও জাহিদ ফারুকের সঙ্গে ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর আমার স্ত্রী মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে আরও অনেকের সঙ্গে সমবেদনা জানাতে বাসায় আসেন তৎকালীন মেয়র সাদিক। সে সময় তোলা ছবি দেখিয়ে আমাকে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ বলার মতো ঘৃণ্য মানসিকতা যাদের রয়েছে তাদের সম্পর্কে কী বলব? এছাড়া এলাকার একটি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছিলাম আমি। সেখানে এসেছিলেন জাহিদ ফারুক। এই ছবি দুটি দেখিয়েই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ফারুকের অভিযোগের জবাবে নাসরিন বলেন, পারিবারকিভাবে নানা ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে আমার। তাই দিয়েই বাস কিনেছি। আমার সঙ্গে ফ্যাসিস্ট কারও কোনো সম্পর্ক নেই। পারলে তারা দেখাক যে আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো এমপি-মন্ত্রী কিংবা নেতার ছবি আছে। দুই ভাইয়ের বাস টার্মিনাল দখল বিষয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হলো দলে চেইন অব কমান্ড না থাকা। যিনি এসব ফালতু কথা বলেছেন তিনি মহানগর বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা। কেন্দ্র থেকে এখানে মহানগরের নেতৃত্ব নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে চেইন অব কমান্ড নষ্ট হবে কেন? কেবল আমি নই, নিজ কমিটির আহ্বায়কের বিরুদ্ধেও তো আজেবাজে কথা বলেছেন তিনি। কেন্দ্রের উচিত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। এখানে দলে ৩-৪টি গ্রুপ, এটা কেন হবে? স্থানীয় রাজনীতির প্রশ্নে আমাকেও মহানগরের নেতাদের পরামর্শ শুনতে হবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বরিশালে এটা নেই। নিজের ভাইদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার দুই ভাই বাস টার্মিনালের মালিক সমিতি কিংবা শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো পদে নেই। তাদের একজনের বাসের ব্যবসা ছিল। ফ্যাসিস্ট আমলে ব্যবসা করতে দেওয়া হয়নি বলে বাস বিক্রি করে চলে এসেছিল। এখন আবার বাস কিনে ব্যবসা করছে। আমার ভাইয়েরা কোনোরকম চাঁদাবাজি করছে প্রমাণ করতে পারলে দল যে ব্যবস্থা নেবে তা আমি মেনে নেব। সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। |
||