|  আমতলীর হাত-পাবিহীন ফজলুল করিম: জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা এক অদম্য মানুষ
 ৩০ October ২০২৫  Thursday  ১০:৫১:৫৫ PM আমতলী ((বরগুনা) প্রতিনিধি:  জীবনে সংগ্রাম না থাকলে সফলতার মূল্য বোঝা যায় না; কিন্তু কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনের আসল অর্থ খুঁজে পান নিজের পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তিতে। তেমনই এক মানুষ বরগুনার আমতলী উপজেলার কেওয়াবুনিয়া গ্রামের ফজলুল করিম। জন্মগতভাবে সুস্থ হলেও এক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দুটি অঙ্গ হাত ও একটি পা। তবুও থেমে যাননি তিনি। অন্যের দয়ার ভিক্ষা নয়, নিজের পরিশ্রমেই জীবনের হাল ধরেছেন এই অদম্য মানুষটি। ফজলুল করিম আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কেওয়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। সাত ভাই বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ১৯৯৩ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় এক ভয়াবহ বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় তিনি একটি হাত ও একটি পা হারান। শৈশবেই এমন নির্মম পরিণতি তার জীবনের গতিপথ সম্পূর্ণ বদলে দেয়। বহুদিন চিকিৎসা ও কষ্টের পর তিনি সুস্থ হন ঠিকই, কিন্তু আর কোনোদিন পূর্ণভাবে হাঁটতে বা কাজ করতে পারেননি। তবে এ সীমাবদ্ধতা তার জীবনের লক্ষ্য থামিয়ে দিতে পারেনি। ফজলুল করিম বলেন, আমি কারও বোঝা হতে চাই না। নিজের পরিশ্রমেই বাঁচতে চাই। অঙ্গ হারিয়ে জীবন শেষ হয়ে যায়নি এটাই আমি প্রমাণ করতে চাই। আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন কখনো মাথা নিচু করে আমার জন্য হাঁটতে না হয়। তার এই অদম্য মানসিকতাই তাকে নতুনভাবে জীবন শুরু করার সাহস জুগিয়েছে। ২০০৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বর্তমানে দুই কন্যা সন্তানের জনক ফজলুল করিম নিজের পরিবার, সন্তানদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন প্রতিনিয়ত। নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য ফজলুল করিম সিদ্ধান্ত নেন স্বনির্ভর হওয়ার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি বাড়ির কাছেই পূর্ব কেওয়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি ছোট দোকান গড়ে তোলেন। দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন স্কুল শিক্ষার্থীদের নানারকম খাবার বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন সকালে দোকান খোলেন, স্থানীয় শিক্ষার্থী, স্কুলের শিক্ষক, কৃষক ও পথচারীরা তার ক্রেতা। নিজের পরিশ্রমে অর্জিত প্রতিটি টাকাই তার কাছে আত্মসম্মান ও গর্বের প্রতীক। তবে সম্প্রতি তার জীবনে নেমে এসেছে নতুন দুঃখের অধ্যায়। একবার নয়, দুইবার তার দোকানে চুরি হয়েছে। চোরেরা দোকানের প্রায় সব মালামাল নিয়ে যায়। এতে তার ক্ষতি হয় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। চুরির পর থেকে দোকানে বেশি মাল তুলতে পারছেন না। দোকানের টিনও ভেঙে গেছে, কিন্তু টাকার অভাবে সেটি ঠিক করতে পারেনি। খুব কষ্টে এখন দিন চলছে। বর্তমানে তার দোকানে মাত্র অল্প কিছু পণ্য রয়েছে। আর্থিক সংকটে তিনি দোকানটি নতুন করে সাজাতে পারছেন না। আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচএম কাওসার মাতবর বলেন, ফজলুল করিমের জীবন আমাদের শেখায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো সীমাবদ্ধতা নয়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, আত্মনির্ভরতা ও পরিশ্রমই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ। স্থানীয় সমাজসেবী, শিক্ষক ও প্রতিবেশীরাও তার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তারা মনে করেন, ফজলুল করিমের মতো মানুষ সমাজে অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তার মতো প্রতিবন্ধীদের পাশে সমাজকে আরও বেশি এগিয়ে আসা উচিত। পূর্ব কেওয়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ফজলুল করিমের জীবনকাহিনী শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প নয় এটি পুরো সমাজের জন্য এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি প্রমাণ করেছেন, হাত—পা হারানো মানে জীবনের সমাপ্তি নয়, বরং এটি হতে পারে নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর প্রেরণা। কুকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ মাসুম তালুকদার বলেন, হাত—পা না থাকলে যে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে সেটা কিন্তু আমরা ফজলুম করিমের ভিতর দেখি নাই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি তাকে সহযোগিতা করার। আমতলী সমাজসেবা অফিসার মঞ্জুরুল হক কাওসার বলেন, আমরা আমাদের নিয়ম অনুযায়ী ফজলুল করিমকে সহযোগিতা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তার কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই। হাত-পা না থাকলে যে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে সেটা কিন্তু তার মাথায় নাই। সে নিজে কিছু করে দেখিয়েছে সমাজকে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, সমাজের অনেক মানুষ আছেন এ অবস্থায় থেকে ভিন্ন পন্থায় জীবন পরিচালনা করেন কিন্তু তার একটি হাত এবং পা নেই; সে নিজের কিছু করতেছে এটা অবশ্যই ভালো। তিনি আবেদন দিলে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করা হবে। সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার    সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক 
		সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০।
		ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। | ||