![]() বাকেরগঞ্জের গোমা সেতুর এক স্প্যানের দিকে লাখো মানুষের চোখ
৪ November ২০২৫ Tuesday ১১:৩৪:১৯ PM
বাকেরগঞ্জ ((বরিশাল) প্রতিনিধি: ![]() সব গার্ডার বসানো, পিলার দাঁড়িয়ে গেছে, অ্যাপ্রোচ সড়কও প্রস্তুত। তবু বরিশালের বাকেরগঞ্জের চরাদি ও দুধল ইউনিয়নের মানুষকে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। কারণ, মাঝের দুটি স্প্যান না বসানোয় রাঙামাটি নদীর গোমা সেতুটি এখনো চলাচলের অযোগ্য। অবশেষে মঙ্গলবার একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। আরেকটি স্প্যান আগামী বৃহস্পতিবার উঠলেই ছয় বছরের অপেক্ষার অবসান হবে তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের। এর আগে সেতুটি নির্মাণে ত্রুটি নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালের ৩ জুলাই পত্রিকাটির শেষ পাতায় ‘অপরিকল্পিত সেতুতে বন্ধ হবে নৌপথ!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এলজিইডির তত্ত্বাবধানে চলমান গোমা সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় বিআইডাব্লিউটিএ। ২০২২ সালের ১৪ জুন নির্মাণাধীন সেতুর উচ্চতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হয়। এরপর সংশোধিত নতুন নকশায় সেতুটির বাকি কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। উচ্চতা নিয়ে দ্বন্দ্ব, সেতুর কাজ বন্ধ: গোমা সেতুর নির্মাণকাজে দেরির পেছনে মূল কারণ ছিল সেতুর উচ্চতা নিয়ে দুই সরকারি সংস্থার মতবিরোধ। ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর বিআইডাব্লিউটিএর কাছে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায়। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিআইডাব্লিউটিএ জানায়, বর্ষা মৌসুমের পানির উচ্চতা থেকে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৬২ মিটার উঁচুতে সেতুটি নির্মাণ করতে হবে। সেই অনুযায়ী নকশা তৈরি করে দরপত্র আহ্বান ও নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে ২০১৯ সালের ৮ মে বিআইডাব্লিউটিএ নতুন এক চিঠিতে আগের অনুমোদন বাতিল করে। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়, রাঙামাটি নদী এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথ—এখানে বড় নৌযান চলাচল করবে। তাই সেতুর উচ্চতা বাড়িয়ে বর্ষা মৌসুমের পানির স্তর থেকে ১২ দশমিক ২০ মিটার করতে হবে। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই এক দপ্তর বলছে পুরনো নকশায় ঝুঁকি নেই, আরেক দপ্তর বলছে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাবে। এই টানাপড়েনে থেমে যায় পুরো প্রকল্প। বরিশাল জোনের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি রাউৎ বলেছিলেন, উচ্চতা বাড়ালে ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া অংশে অতিরিক্ত চাপ পড়বে, যা নকশায় ধরা হয়নি। তাই বিআইডাব্লিউটিএর সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধান খোঁজা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিআইডাব্লিউটিএর দক্ষিণ বদ্বীপ অঞ্চলের তৎকালীন যুগ্ম পরিচালক এস এম আজগর আলী বলেছিলেন, নৌপথ সচল রাখতে সেতুটি ১২ দশমিক ২০ মিটার উঁচুতে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পুরনো নকশায় কাজ চললে নৌপথটি কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘসূত্রতা আর জটিলতায় থেমে থাকা প্রকল্প: ২০১৮ সালে রাঙামাটি নদীর ওপর দুই হাজার ৫৪০ ফুট দীর্ঘ গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকায়, যা প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে ৩৪ কোটির বেশি। এদিকে, নদী পারাপারে এখনো একটিমাত্র ফেরির ওপর নির্ভর করতে হয় এলাকাবাসীকে। প্রতি ঘণ্টায় একবার ফেরি চলে। কোনো কারণে ফেরি বন্ধ থাকলে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পার হন অনেকে। চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের বাসিন্দা রাছেল হাওলাদার বলেন, রোগী অসুস্থ হলে সহজে এপার থেকে ওপারে নেওয়া যায় না। আরেকজনের মন্তব্য, ফেরি গেলে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, সেতু থাকলে দুই মিনিটেই যাওয়া যেত। নকশা আর অনুমোদনের জট সওজের তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ে সেতুর ৪৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছিল। কিন্তু উচ্চতা নিয়ে বিআইডাব্লিউটিএর আপত্তির পর পুরো প্রকল্পই থমকে যায়। পরে নকশা পরিবর্তন ও নতুন বাজেট অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় কেটে যায় আরো দুই বছর। সম্প্রতি একনেক সভায় নতুন নকশা অনুমোদনের মাধ্যমে প্রকল্পটি আবার গতি পেয়েছে। বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, নদীর ধারা পরিবর্তন ও জমি অধিগ্রহণের কারণে বারবার নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এখন কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে একটি স্প্যানটি বসানো হয়েছে। আশা করছি দ্বিতীয় স্প্যানটি বৃহস্পতিবার বসাতো পারবো। আগামী ডিসেম্বরের মাসের মধ্যেই সেতুটি চালু করতে পারব। বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক শুভংকর শুভ বলেন, একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। অপরটি দ্রুত স্থাপনের মাধ্যমে সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। তা না হলে মানুষ কবে এর সুফল ভোগ করতে পারবে, বলা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, গোমা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ এসেছিল সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দেওয়া চাহিদাপত্রে (ডিও লেটার) অনুমোদনের মাধ্যমে। জাসদ নেতা মোহাম্মদ মোহসীনসহ এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই সেতু। সেতুটি চালু হলে বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে যাতায়াত, চিকিৎসা, বাণিজ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা স্থানীয়দের। সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। |
||

