পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা-বাহেরচর সড়কের বগা হোগলা সেতু থেকে বাহেরচর ডাকুরিয়া নদীর সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে অন্তত ৮১টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আছে। এসব বাঁকের একদিক থেকে অপর দিকে কিছুই দেখা যায় না। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত তিন বছরে এই সড়কে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন কমপক্ষে ৫জন, আহত অর্থশতাধিক। আঁকাবাঁকা সড়কে ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও যানবাহন নিয়ে চলাচলে চালকদের বেগ পোহাতে হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বগা বন্দর হোগলা সেতু থেকে সড়কের শুরু। ১৩ কিলোমিটার ওই সড়কের পাশে রয়েছে কুম্ভুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অভয়লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দরিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ জালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাছিপাড়া আবদুর রশিদ খান ডিগ্রী কলেজ, কাছিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই সড়ক দিয়ে কনকদিয়া, কাছিপাড়া, কালিশুরী, ধুলিয়া ও ফরিদপুর এই পাঁচ ইউনিয়নের হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কটির হোগলা সেতু থেকে বাঁক শুরু। একটু পরপরই আকা-বাকা বাঁক। বিশেষ করে শহীদ জালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দরিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন বাঁকগুলো খুবই ভয়ংকর। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঢাকাগামী বাস, ভ্যানগাড়ি, অটোরিকশা, ট্রাক, ট্রলি ও মোটরসাইকেলসহ এক হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। শহীদ জালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, তার বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়টির পাঁচশ ফুটের মধ্যে তিনটি ভয়ংকর বাঁক রয়েছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের যেসব জায়গায় বাঁক রয়েছে, ওইসব এলাকায় সড়কটি প্রশস্ত করা হলে একটু হলেও ঝুঁকি কমবে এবং দুর্ঘটনা কম হত। বাস চালক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, আকা-বাকা বাঁকে গাড়ি চালানো অনেক কঠিন। আর এই সড়কটি এক লেনের। এখানে বাঁক ঘোরার সময় বিপরীত দিকে কোনো যানবাহন চলে এলে বাসের নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে ঢাকায় আসা-যাওয়া বাসের পরিমান কমে গেছে। তিনিও বাঁক সোজাকরণের দাবি জানান। দরিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. আখি আক্তার বলেন, বগা-বাহেরচর সড়কের ১৩ কিলোমিটারে সড়কে ৮১ টি বাঁক। এর মানে হল পুরো সড়কেই বাঁক আর বাঁক। তার বিদ্যালয় এলাকায় একশ মিটারের মধ্যে পাঁচটি বাঁক রয়েছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি নিয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক পার হয়ে তার বিদ্যালয়ের কোমলমতি শির্ক্ষার্থীদের আসা যাওয়া করতে হয়। সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহণ করে সড়কটির বিশেষ করে বিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো যেন সোজা করা হয়। সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ শিল্পী আক্তার (৩৮) নামের এক গৃহবধু ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন। একই বছরের ১৫ এপ্রিল মো. নিজাম রাঢ়ী (২২) নামে এক যুবকের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান এবং একই সময় তরিকুল ইসলাম (২৯) নামে আরেক যুবকের ডান পা ভেঙে গুরুতর আহত হন। এখনও তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলা করতে পারেন না। ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি খিজির হায়াত ওরফে লিজু (২৪) নামে এক কলেজ ছাত্রের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে দুর্ঘটনায় বিগত তিন বছরে পাঁচ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। দুর্ঘটনার শিকার মো. ফারুক হোসেন কাছিপাড়া আবদুর রশিদ মিয়া ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তার বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলবিলাস গ্রামে। তিনি নিয়মিত মোটরসাইকেলে করে কলেজে আসা-যাওয়া করেন। দেড় বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। বাঁক ঘোরার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা টমটম তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে তার বাঁ পায়ের হাঁটুর গোলাকার বাটি ভেঙে কয়েক টুকরা হয়ে যায়। অস্ত্রোপচার করে বাটির এক তৃতীয়াংশ ফেলে দিতে হয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলা করতে পারেন না। আমরণ এই কষ্ট ভোগ করতে হবে। কাছিপাড়া কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু হাসান মিরন বলেন, এমনিতেই সড়কটিকে বাঁক আর বাঁক। এরপরে অবৈধ ট্রলিগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। ঢাকাগামী বাস আসা-যাওয়া করে। এক রকম জীবন হাতে নিয়ে জীবনের প্রয়োজনে ভয়ংকর বাঁকের এই সড়কে তারা চলাচল করতে বাধ্য। তিনি বাঁক নিরুপনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে পটুয়াখালীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর বলেন,‘আসন্ন নতুন একটি প্রকল্প হবে। ওই প্রকল্পে এই সড়কটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি আশা করেন তখন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো থাকবে না।’
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।