| কলাপাড়ায় মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটের বেহাল দশা, বরফকল বন্ধ, নষ্ট হচ্ছে মালামাল
বন্ধ হয়ে আছে কলাপাড়ায় মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরফকল (ছবিঃ আমাদের বরিশাল ডটকম)
কলাপাড়া থেকে মেজবাহউদ্দিন মাননু :: শুধুমাত্র নদীর লোণা পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর পরীক্ষা করেই কলাপাড়ার মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট এর যুগ পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোন নতুন জাতের মাছ উদ্ভাবন করতে পারেনি এখানকার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। প্রয়োজনীয় লোকবল সঙ্কট, যন্ত্রপাতি ও সদিচ্ছার অভাবে প্রতিমাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখতে। কিন্তু সরকারের উদ্যোগ বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। পায়নি মৎস চাষীরা তেমন কোন সুফল। মাঝখান থেকে প্রতিষ্ঠানের ১৩টি নৌযান গায়েব হয়ে গেছে। বরফকলটি এক ভাড়াটে কয়েক বছর চালিয়ে অকেজো করে দিয়েছে। এখন এটি বন্ধ হয়ে আছে। চুরি হওয়ার পর অবশিষ্ঠ যন্ত্রপাতি এখন নষ্ট হচ্ছে অযত্নে অবহেলায়। অথচ পূর্বের ভাড়াটিয়া এই প্রতিষ্ঠানের পাশে নিজে আরেকটি বরফকল করে জমিয়ে ব্যবসা করছে।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক সহায়তায় চার কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিএফডিসি’র উদ্যোগে উপকূলের মৎস্যজীবীদের মাছ আহরণ, সংরৰণ, মৎস্য রফতানী এবং ন্যায্যমূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি নির্মান করা হয়। এখানে একটি হিমাগার, মৎস্য অবতরন কেন্দ্র, বিক্রয়কেন্দ্র, মাছ ধরার ১৩ টি নৌযান, ন্যায্যমূল্যে জেলেদের জন্য বরফ উৎপাদন কল, নৌযান মেরামতের জন্য মিনি ডক, ওয়ার্কশপ, তেল সংরক্ষনের জন্য একটি অয়েল ট্যাঙ্কার স্থাপন করা হয়। তৎকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, চরম অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর অনিয়মের কারনে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০০ সালে মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের কাছে এ প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি বিএফডিসি’র উদ্যোগে কোটি টাকা ব্যয় গবেষণার জন্য স্থাপন করা হয় ল্যাবরেটরী। নিয়োগ দেয়া হয় জনবল। খনন করা হয় বিরাট পুকুর ও সেড। কিন্তু এ পর্যন্তই। নতুন মাছের কোন জাত উদ্ভাবন না করে বছরের পর বছর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ৩৩ জাতের মাছের মধ্যে তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেল ও শরপুটি এই ৫টি মাছ স্থানীয় মৎস্য চাষীদের চাষ করার জন্য উৎসাহিত করছে। তাও আবার উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া গ্রামের ৩০ জন মৎস্যচাষীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। উপজেলার অন্য ইউনিয়নের মৎস্যচাষীরা জানেই না মাছ চাষের জন্য এখানে কি ধরনের সহায়তা পাওয়া যায়।
এখানকার কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে আন্ধারমানিক নদীর বিভিন্ন মোহনা থেকে পানি সংগ্রহ করে লবণাক্ততা পরীক্ষা করে কাজ শুরু করেছেন বছর খানেক আগে থেকে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তারা জানান, জনবল সংকট, প্রযোজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকার পাশাপাশি ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর অভাবে এখানে নতুন কোন কার্যক্রম করা যায়না। এখানে একজন উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, দুইজন গবেষণা সহকারী কর্মকর্তা ও এক জন এমএলএসএস পদ রয়েছে। কিন্তু কর্মরত রয়েছে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, একজন গবেষণা সহকারী কর্মকর্তা ও এমএলএসএস। গবেষণার জন্য ল্যাবরেটরীতে নেই কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি। ২০-২৫টি পুকুর দরকার হলেও এখানে রয়েছে মাত্র চারটি ছোট পুকুর ও একটি খাল। বর্তমানে তাও পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া মৎস্য গবেষনা ইনিষ্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাজী মোহাম্মদ আজিমুদ্দিন আমাদের বরিশাল ডটকমকে জানান, মূলত এটি একটি নদী ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাই নদীতে কিভাবে খাঁচায় মাছ চাষ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে। এছাড়া গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, ল্যাবরেটরীতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো সংকটের কারনে বর্তমানে গবেষনা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
–
(আমাদের বরিশাল ডটকম/কলাপাড়া/মেমা/তাপা)
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক | |