১৬ দিনে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে অন্তত ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিভাগের ৬ জেলায় অভিযান চালানো হয়েছে ২ হাজার ৩৯৭টি।
ইলিশ নিধনকারীদের মধ্যেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষ প্রতিনিধি:
বরিশালে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। আত্মরক্ষায় ফাঁকা গুলি করে অভিযানকারীদের ফিরে আসার মতো ঘটনাও ঘটছে। এদিকে হিজলা উপজেলায় জেলেদের হামলা প্রতিহতে নদীতে জলকামান ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথাও জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ দিনে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে অন্তত ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চলতি মাসের ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৯৭টি, মামলা করা হয়েছে ৮৭০টি, জেল হয়েছে ৫৮৯ জনের। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় অভিযানের সংখ্যা ৭৭৪টি, মামলা ৫০৬টি, জেল হয়েছে ৩৩৫ জনের।
শুধু অভিযানকারী দলের ওপরই হামলা নয়; ইলিশ নিধনকারী দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে এ কয়েকদিনে।
১৯ অক্টোবর হিজলার মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় অভিযানকারী দলের ১৫ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ৮টি গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগে ১৮ অক্টোবর বরিশাল ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নসংলগ্ন কালাবদর নদীতেও জেলেদের হামলার শিকার হয় আভিযানিক দল। ওই দিনের বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন বলেন, ‘জান নিয়ে কোনো রকমে পালিয়ে এসেছি। হামলাকারীদের মোকাবিলা করতে আনসার সদস্যরা ২০টি ফাঁকা গুলি করেছেন। তা না হলে আমরা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতাম না।’
এদিকে ১৩ অক্টোবর বাবুগঞ্জ উপজেলার সুগন্ধা নদীতে ইলিশ ধরাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের দুই গ্রুপ মৌসুমি জেলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়।
১১ অক্টোবর মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলার একাংশের গভীর মেঘনায় ইলিশ নিধনকারী জেলেদের হামলায় ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিনসহ ১০ জন আহত হন। ১০ অক্টোবর হাজিরহাট এলাকার কালাবদর নদীর লাল বয়াসংলগ্ন এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে শাকিল হাওলাদার (২৪) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।
মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘তাঁরা নদীতে নামবেন না। কিন্তু প্রায় এক মাস পেট চলবে কী করে? দেনা কীভাবে মেটাবেন? সব জেলে নদীতে নামে না। যারা এখন নামে তারা মৌসুমে এসেছে, এরপর আর তাদের দেখা যাবে না। কিন্তু মামলা আর জেলে পচে মরে সাধারণ জেলেরা।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, মা ইলিশ নিধন এবং অভিযানে হামলা করা দুঃখজনক ঘটনা। এভাবে মা ইলিশ ধ্বংস করলে জেলেরা একসময় বেকার হয়ে যাবে। মৌসুমি জেলেরা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে মৎস্য উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এক সভায় তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, নিরীহ জেলেদের জেল-জরিমানা না দিয়ে বিকল্প শাস্তি দিতে। জেল দিলে জেলেদের পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। উপদেষ্টাও এসব কথায় একমত পোষণ করেছেন।
জানতে চাইলে ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অধিকাংশ সাধারণ জেলে এই হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। কিছু আছে ডাকাতের মতো। অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এদের মদদ দিচ্ছে। বড় ট্রলারে সশস্ত্র হয়ে তারা হামলা করে আমার মাথাও ফাটিয়েছে। এজন্য সতর্ক হয়ে আমাদের এগোতে হয়।’ তিনি দাবি করেন, ‘অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছরের জেল দেওয়া দরকার। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার। হামলা এবং বেপরোয়াভাবে মাছ ধরলে আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কিছু করার নেই। তবে জেলেদের মাছ ধরায় বিরত রাখতে পারাটাই আমাদের সর্বাগ্রে প্রয়োজন।’
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ওমর সানি বলেন, এ বছর মেহেন্দীগঞ্জে হামলার ঘটনা কম, যত হামলা সব হিজলায় হয়েছে।
হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, জেলেদের ইটপাটকেল ও বাঁশের হামলা প্রতিহত করতে গতকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস নদীতে জলকামান ব্যবহার করছে।
অভিযানে জেলেদের হামলার প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, উভয়পক্ষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না সে বিষয় মাথায় রেখে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
আজ ৬ ডিসেম্বর, কলাপাড়ায় পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস