সাগরে জলদস্যুদের গুলিতে ১ জেলে নিহতঃ আহত ৩, নিখোঁজ ৭
পাথরঘাটার বিএফডিসি ঘাটে জলদস্যুদের হাত থেকে ফিরে আসা ১৬ জেলে (ছবিঃ আমাদের বরিশাল ডটকম)
পাথরঘাটা থেকে আমিন সোহেল :: বঙ্গোপসাগরের গঙ্গামতি এলাকায় ৬ জানুয়ারী শুক্রবার রাতে জলদস্যুদের সশস্ত্র হামলায় কক্সবাজারের মাহাবুব মিয়ার মালিকানাধীন এফবি আসলী ট্রলারের গুরা মিয়া (১২) নামে এক জেলে জলদস্যুদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় জলদস্যুদের গুলিতে এফবি আসলী ট্রলারের অপর চার জেলে গুলিবিদ্ধ ও এফবি জাবেদ ট্রলারের সাত জেলে নিখোঁজ হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ চার জেলেরা হলেন- আবদুল হাকিম, নূর আলম ও আমিন এবং নিখোঁজ সাত জেলেরা হলেন, তৈয়ব আলী, হাসান, মনজুর ও অপর একজনের নাম জানা যায়নি। এদের সবার বাড়ি কক্সবাজারের পাহাড়তলী এলাকায়।
বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে ৭ জানুয়ারী শনিবার বিকেলে সশস্ত্র জলদস্যুদের হাত থেকে ফিরে আসা কক্সবাজারের পাহাড়তলী এলাকার এফবি জাবেদ ট্রলার ও মাহাবুব মিয়ার মালিকানাধীন এফবি আসলী ট্রলারের ২৫ জেলে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
ফিরে আসা জেলেরা জানান, পাথরঘাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের গঙ্গামতি এলাকায় ৬ জানুয়ারী শুক্রবার রাতে জেলে বহরের ২৫ থেকে ৩০টি ট্রলারে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গণডাকাতি করেছে জলদস্যু জিয়া রফিক বাহিনী। কক্সবাজারের পাহাড়তলীর এফবি জাবেদ ট্রলারের ওপর জলদস্যু বাহিনীর একটি বড় ট্রলার ওঠিয়ে দিলে ওই ট্রলারটি সাগরে ডুবে যায়। এতে এফবি জাবেদ ট্রলারের সাত জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। অপরদিকে ওই একই সময় জলদস্যুদের হামলায় পাহাড়তলীর এফবি আসলী ট্রলারে গুরা মিয়া (১২) নামে এক জেলের মৃত্যু ও ওই ট্রলারের অপর চার জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় এফবি জাবেদ ও এফবি আসলী ট্রলারের অপর ২৫ জেলে সাগরে ভাসতে থাকলে পাথরঘাটার তম্ময় ট্রলারে ট্রলারে তাদের পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে নিয়ে আসে।
জলদস্যু বাহিনী পাথরঘাটার এফবি বারেক ট্রলারের মনু মিয়া মাঝিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল করে রেখে যায়। এতে ওই ট্রলারের থাকা অপর ১২ জেলের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
তবে জলদস্যুদের হাত থেকে ফিরে আসা এক জেলে জানান, ৬ জানুয়ারী শুক্রবার রাতে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি হওয়া পাথরঘাটার ৭টি ট্রলারে এর আগেও গত তিন মাসে তিন বার একই সাথে ডাকাতি করেছে জলদুস্যরা। এ সময় সশস্ত্র ওই জলদস্যূ বাহিনী মুক্তিপণের দাবিতে ৩০ জেলেকে অপহরণ করে সুন্দরবনের গহীণে নিয়ে যায় ও মুক্তিপণের দাবিতে ৩০ জেলেকে অপহরণ মাছ, জাল, রসদ, নগদ টাকাসহ ৩৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট জলদস্যু বাহিনী।
ফিরে আসা জেলেরা হলেন- ইউনুছ, ইলিয়াছ, আবদুল হামিদ, তৈয়ব, খায়রুল বাশার, হাসান, রহমত উল্লাহ, নূরু মিয়া, ফরিদ আলম, হাকিম আলম, ইলিয়াছ মিয়া, ফরিদ উদ্দিন, আবদুল হালিম, নূর আলম, মামুন রশীদ, ইসমাইল, ইসমাইল মিয়া, ফারুক, হাসান, আবুল কালাম, লালু মিয়া, আবুল কাসেম, ফারুক, শফিউল্লাহ ও আবদুল হাকিম। এদের সকলের বাড়ি কক্সবাজারের পাহাড়তলী এলাকায়।
অপহৃত জেলেদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন, এফবি আসলী ট্রলারের আমানুল্লাহ মাঝি ও হামিদ মিস্ত্রী, এফবি জাবেদ ট্রলারের রফিক মাঝি ও রফিক মিস্ত্রী, এফবি তরিকুল ট্রলারের জিয়া মাঝি, এফবি মোর্শেদ ট্রলারের জয়নাল মাঝি, এফবি ইকরা ট্রলারের আবদুল আজিজ মাঝি, এফবি ওলি ট্রলারের আবদুল জলিল মাঝি, এফবি সিরাজুল হক ট্রলারের নাসির মাঝি, এফবি তম্ময় ট্রলারের শহ আলম মাঝি, এফবি বারেক ট্রলারের মনু মিয়া মাঝি। এদের বাড়ি, বরগুনার পাথরঘাটা, কালমেঘা, ও নিশানবাড়িয়া গ্রামে।
বরগুনা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মন্নান মাঝি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের বারোবাম এলাকায় গত বুধবার জলদস্যূদের হামলায় চার জেলে গুলিবিদ্ধ পর আবারও শুক্রবার রাতে জলদস্যূরা গণডাকাতি চালিয়ে জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মাছ শিকার করতে সাগরে যেতে জেলেরা এখন আতংকিত হয়ে পরেছেন।’
বঙ্গোপসাগর বিশেষ একটি অভিযান থেকে ফেরার সময় ৭ জানুয়ারী শনিবার দুপুরে কোস্টগার্ডের দক্ষিণ জোনের পাথরঘাটা ষ্টেশন কমান্ডার লেঃ হারুন অর রশিদ মুঠোফোনে আমাদের বরিশাল ডটকমকে বলেন, ‘জলদস্যূদের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে অপহৃত ট্রলার মালিক ও জেলেরা সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে আরো দ্রুত জলদসুস্যদের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব।’
–
(আমাদের বরিশাল ডটকম/পাথরঘাটা/আসো/তাপা)
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |