| ইউটিউব পরিসংখ্যান’র তথ্য ৫৫ দেশে দেখা হয়েছে নৃ’র টিজার বিনোদন ডেস্ক
ভা্র্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে সাড়া ফেলেছে আর্থিক সঙ্কটে স্যুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নৃ’র অফিসিয়াল টিজার। বিশ্বের ৫৫টি দেশ থেকে দেখা হয়েছে এ টিজারটি। বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বেশী দেখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ভারত থেকে। ইউটিউব পরিসংখ্যান এ তথ্য জানিয়েছে। সম্প্রতি এ সাইটে নৃ’র টিজারটি আপলোড করা হয়।
সঙ্কট কাটবে, সিনেমাটিও শেষ হবে – এমনটাই প্রত্যাশা টিজারের দর্শকদের। চলচ্চিত্রটি নিয়েও দারুণ আশাবাদী তারা। ইউটিউব থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগেও শেয়ার হয়েছে টিজারটি। সব জায়গাতেই এটির ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত এসেছে। শেয়ার হয়েছে কয়েক হাজার বার।
আরো যেসব দেশ থেকে টিজারটি বহুবার দেখা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, ইতালি, সুইডেন, ফ্রান্স, রোমানিয়া, গ্রীস, জাপান, সাউথ কোরিয়া, মালয়শিয়া ও জার্মানি অন্যতম। নৃ’র ফেসবুক পেইজে মোট ৪২ দেশের অনুসারী রয়েছে বলে জানা গেছে।

ওদিকে নৃ’র ব্যাপারে নিউইয়র্ক প্রবাসী লেখক কূলদা রায় ফেসবুক এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মাধবপাশা বরিশাল শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমি বহুবার গেছি। এই পথে গুঠিয়া , চাখার, বানারীপাড়া স্বরূপকাঠি যেতে আসতে মাধবপাশায় নেমে পড়তাম। আমার পিঠে শিবকালী ভট্টাচার্যের এগার খণ্ড। আমি ঔষধী গাছ খুঁজতে বেরিয়েছি। গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দুর্গাসাগর। শান্তশ্রী এই দীঘির সিঁড়িতে বসে থেকে দেখেছি–জলের উপরে পাখি এসে নামে। তার ছায়া উড়ে যায়। মাঝখানে একটুকু দ্বীপ। হাওয়ায় কাঁপে। এই মাধবপাশায় স্বদেশি আন্দোলনের সময়ে অনশন করেছিল গ্রামের মানুষ। পঞ্চাশের দাঙ্গায় একদিনে মেরে ফেলা হয়েছিল ২০০ জনকে। কিন্তু দুর্গাসাগর এখনো সুন্দর হয়ে আছে। হয়তো সুন্দর এরকমই। সুন্দরকে সুন্দরই থাকতে হয়। তাকে শ্রী বলে ডাকি। দুর্গাসাগর নিয়ে একটি ফিল্ম হচ্ছে। নাম নৃ। কোনো তরুণ করছেন। আমি তাকে চিনি না। কিন্তু দুর্গাসাগরকে চিনি বলেই তাকে অচেনা মনে হয়না। ফিল্মটি আটকে আছে ৮৫ ভাগ হওয়ার পর। টাকা নেই। ভালো কাজে টাকা থাকে না- এটা খুব স্বাভাবিক। তবু তাকিয়ে আছি দুর্গাসাগরের দিকে। কেউ হয়তো আসবেন। তখন নৃ ফিল্মটি দুর্গা সাগরকে নিয়ে শ্রী হয়ে উঠবে।’
একইভাবে টিজারটি ফেসবুকে শেয়ার করতে গিয়ে নৃ’র শুভানুধ্যায়ী অনার্য তাপস লিখেছেন, ‘শুভেচ্ছা রাসেল আহমেদ এবং তার দলকে। যারা অনেক মমতা নিয়ে, অনেক যত্ন করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। আমার ব্যক্তিগত ভালোলাগা এবং আগ্রহ আছে চলচ্চিত্র নৃ কে নিয়ে। এই দলটির ক্যাপ্টেন রাসেল আহমেদ, গুরুত্বপূর্ণ কাণ্ডারি ঈয়নসহ নৃ এর সাথে যুক্ত অনেকেই আমার ব্যক্তিগত বন্ধু। চলচ্চিত্র নিয়ে তাদের চিন্তা, আগ্রহ, কর্মকাণ্ড আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি খুব কাছ থেকে তাদের প্রসব বেদনার কষ্ট প্রত্যক্ষ করেছি, করছি। দীর্ঘ দিন ল্যাপটপ বন্দী হয়ে থাকতে থাকতে নৃ যখন বিধ্বস্ত ঠিক তখনই নৃর এই অফিসিয়াল ট্রেলার আমাকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছে। ৮৫% স্যুটিং শেষ হওয়া এই চলচ্চিত্রটির পুরো টিম যে বিপুল জী বনী শক্তির অধিকারী সেটা আবারও প্রমাণিত হলো। এখন অপেক্ষা, কবে আর্থিক দৈন্য তা কাটিয়ে এই চলচ্চিত্রটি শতভাগ কাজ শেষ করে দর্শকদের সামনে আসতে পারে- তার জন্য। কাল-কলা-কৌশলে নৃ কতটা পরিপক্ক, আধুনিক তা জানার জন্যও এর পুরো কাজ শেষ হওয়া দরকার। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা থাকলো নৃ’র জন্য। সেই সাথে থাকলো কিছুটা দুশ্চিন্তা। কবে কাটবে আঁধার? অর্থনীতির চাকা কবে সচল হবে রাসেল আহমেদের?’
এদিকে টিজারের ব্যাপারে মো: খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমি অভিভূত। অসাধারণ ক্যামেরা শট, এ্যানিমেশন, অভিনয়, মেকিং। এটা বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে একটা মাইলস্টোন হতে পারে। ফুল ভার্সন দেখে পরিতৃপ্ত হতে চাই। অধীর আগ্রহে থাকলাম।’ সৈয়দ হিমু বলেছেন, ‘ওয়ান অব দ্যা বেস্ট আই এভার সিন।’ তপন গোস্বামী বলেছেন, ‘শুরু দেখে মনে হচ্ছে, একটি অসাধারণ ছবির জন্ম হতে চলেছে।’ তাওফিক নেওয়াজ বলেছেন, ‘অপু আর দূর্গার কথা মনে পড়ে গেলো।ট্রেইলার দেখে মনে হচ্ছে অসাধারণ একটা ছবি হয়েছে নৃ।দেখার অপেক্ষা রইলো।নৃ ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য শুভকামনা । মঙ্গল হোক সবার, জয় হোক বাংলা চলচ্চিত্রের।’
আরেক দর্শক রাজীব হাসান বলেছেন, ‘কিছু ভালো কাজ হোক। জীবনের আয়তন বেড়ে হোক মহান জীবন, মানুষ মানুষকে দেখুক। দেখুক জীবন, অনাদরে ভেসে আসা ভেসে যাওয়া নিশ্চুপ, নিষ্ফল রাত-দিন, আরো আরো কাজ হোক। মানুষ প্রেরণা পাক।’ ফয়জে হাসান লিখেছেন, ‘অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফী এং কম্পোজিসন।’ এছাড়া ওপার বাংলার দর্শক সৌমিক ঘোষ বলেছেন, ‘অসামান্য কয়েকটা শট তারকোভস্কি মনে পড়াল!’
এর আগে ইস্টিশন ব্লগের ডা. আতিকুল হক লিখেছেন, ‘নৃ মানে মানুষ। মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়ও মানুষ। সেই মানুষের গল্প, মানবতার জয়গানের গল্প নিয়ে রাসেল আহমেদ তৈরি করছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “নৃ”। ট্রেইলার দেখে মুগ্ধ হলাম।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘এমনিতে রাসেল ভাইয়ের কাজ আগে দেখিনি। ফেসবুকে উনার কিছু কিছু স্থিরচিত্র দেখে মুগ্ধতার সূচনা। নৃ চলচ্চিত্রের ট্রেইলার দেখে আমি খুব আশাবাদী অত্যন্ত ভালো মানের একটি চলচ্চিত্র যোগ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ভাণ্ডারে। অধীর হয়ে অপেক্ষায় আছি মানুষের জয়গান দেখার জন্য। “নৃ” চলচ্চিত্রের সফলতা কামনা করছি…।’
মানুষ শুধু ‘ভা্র্চুয়ালি’ নয়, ‘একচুয়ালি’ও সাড়া দিচ্ছেন বলে আমাদের বরিশাল ডটকমকে জানিয়েছেন নৃ’র নির্মাতা রাসেল আহমেদ। এ নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘অবাক হইনি। বরং বারংবার নিষিক্ত হয়েছি ভালোবাসায়। টাকার জন্য আটকে আছে চলচ্চিত্র- নৃ এর শেষভাগের শুটিং; এরকম একটা খবর ভার্চুয়ালি প্রচার হবার পর প্রচুর মানুষের এগিয়ে আসা টের পাচ্ছি। ভালোলেগেছে তাদের মুখে- এরকম একটা ভালো কাজ আটকে থাকতে পারে না শুনে। যে যার মতো করে সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছে। যার যার সামর্থ্যের সিমানায় দাঁড়িয়ে।’ নতুন করে বুঝতে পারছি- মানুষ ও মনুষত্ব্য এখনো ফুরিয়ে যায়নি। একা একা মানুষগুলো এগিয়ে আসছে একাকার হবার বাসনায়।’
উল্লেখ্য, নির্মাতা রাসেল আহমেদসহ নৃ’র কলা-কুশলীদের অধিকাংশই ‘বরিশাইল্যা’ এবং এ সিমেনার পুরোটাই বরিশালে চিত্রায়িত হচ্ছে।এর টিজার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘স্যুটিং বাকি আছে আরও। এডিটিং, ডাবিং/সাউন্ড/মিউজিক ডিজাইন ইত্যাদি আরও পরের পদক্ষেপ। এর মাঝেও টিজার এর আদলে কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হলো মূলত অনেকের দাবির প্রেক্ষিতেই। এটাকে আবার ফুল প্রোমোশনাল ট্রেইলার ভেবে ভুল করবেন না।’
পূর্ববর্তী সংবাদ
ইউটউবে চলচ্চিত্র নৃ’র টিজার
ফের সংকটে নৃ
| |