Home » বরিশাল » সংবাদ শিরোনাম » বরিশাল বিভাগের যেসব আসনে শক্ত অবস্থানে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন
২৭ September ২০২৫ Saturday ১২:৪৯:৩২ PM
বরিশাল বিভাগের যেসব আসনে শক্ত অবস্থানে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন
অনলাইন নিউজ ডেস্ক:
ত্রয়োদশ সংসদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশালের সাতটি আসনে শক্ত অবস্থানে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। এসব আসনে ঝুঁকির মুখে বিএনপি।
প্রার্থী নির্বাচনে ভুল কিংবা ভোটারদের আস্থা ফেরানো না গেলে এ সাতটি আসনে ধানের শীষের জয় পাওয়া কঠিন হবে। দলের কিছু নেতাও স্বীকার করেছেন বিষয়টি।
বিএনপির ভোটের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত বরিশাল-৫ (সদর) আসনে গোল বাঁধাতে পারেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। এখানে অনেকেই বিএনপির মনোনয়ন চাইলেও কেন্দ্রের ডাকে ঢাকায় গিয়ে সাক্ষাৎ দিয়ে এসেছেন মাত্র ৩ জন।
তারা হলেন ৫ বারের এমপি, সাবেক মেয়র, হুইপ ও জেলা মন্ত্রী মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মো. রহমতউল্লাহ এবং বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। নিরপেক্ষ নির্বাচনে এখানে প্রায় সবসময় আওয়ামী লীগকে ৩০-৪০ হাজার ভোটে হারিয়ে জয়ী হতো ধানের শীষ।
এক্ষেত্রে জামায়াতসহ আওয়ামী-বিরোধী ভোটও পড়ত ধানের শীষে। তবে এবারের হিসাব সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাসিনার আমলে ভোট ডাকাতির সিটি নির্বাচনে তীব্র প্রতিরোধের পরও ৩৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন ফয়জুল করিম। বিএনপির ভোটাররা তখন যাননি কেন্দ্রে।
তাছাড়া জামায়াতেরও ভোট ব্যাংক রয়েছে এখানে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জোট হলে ঘুরে যাবে ভোটের হিসাব। তাই যতটা সহজে জয় পাওয়া যাবে বলে ভাবছে বিএনপি ততটা সহজ হবে না।
তবে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. আবুল কালাম শাহিন জানান, দুটি আসনই (বরিশাল-২ ও ৫) বিএনপির ঘাঁটি। ধানের শীষের বিজয় প্রশ্নে কাউকে তারা হুমকি মনে করছেন না। নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দলের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবেন।
পিরোজপুর-১ ও ২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মরহুম আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই পুত্র মাসুদ সাঈদী ও শামিম সাঈদী। সদর আসনে পরপর দুবার এমপি হয়েছিলেন সাঈদী। তার নিজের উপজেলা জিয়ানগরে মাসুদ সাঈদী হয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
পিরোজপুর-৩ আসনে গোল বেঁধেছে বারংবার দলপালটে ৩ বার এমপি হওয়া রুস্তম আলী ফরাজীকে নিয়ে। সর্বশেষ জাতীয় পার্টির এমপি থাকা এই নেতা এবার ধরেছেন হাতপাখা।
পিরোজপুর সদর আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন নজরুল ইসলাম খান, আলমগীর হোসেন, এলিজা জামানসহ কয়েকজন। পিরোজপুর-২ আসনে ধানের শীষ পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন মাহমুদ হোসেন ভিপি মাহমুদ, ফখরুল ইসলাম ও সুমন মঞ্জুর। অন্তর্কোন্দলের ষড়যন্ত্রে বহিষ্কার হলেও পিরোজপুর-৩ আসনে এখনো বিএনপির সবচেয়ে শক্তিশালী মনোনয়ন প্রার্থী রুহুল আমিন দুলাল।
এছাড়াও দলের মনোনয়ন চাইছেন এআর মামুন খান ও শামিম মৃধা। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে এই জেলার ৩টি আসনের কোনোটিতেই নিরপেক্ষ নির্বাচনে কখনো জয় পায়নি বিএনপি।
ধানের শীষের হয়ে একবার রুস্তম আলী ফরাজী এমপি হলেও সে সময় দলবদল পদ্ধতিতে তিনি এসেছিলেন বিএনপিতে। আগামী নির্বাচন প্রশ্নেও এই ৩টি আসনে ভালো অবস্থায় নেই বিএনপি। পিরোজপুর সদরে মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে চরম অন্তর্দ্বন্দ্ব। পিরোজপুর-২-এ সবচেয়ে বেশি ভোটারের এলাকা স্বরূপকাঠীতে, বলতে গেলে মুখ দেখাদেখি বন্ধ নেতাদের।
অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে এখানে দলীয় শাস্তির শিকার নেতাদের একজন ছিলেন প্রভাবশালী মনোনয়ন প্রার্থী। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে নেপথ্যে মাঠে আছেন তিনি। ৩ নেতার দ্বন্দ্বে এখানে ত্রিধাবিভক্ত ভোটাররা। তাছাড়া ৫ আগস্টের আগে চরম বিপদেও স্থানীয় মনোনয়ন প্রার্থী কাউকে কাছে না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে কর্মী সমর্থকদের।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত বলেন, ‘পরিস্থতি এখন আর আগের মতো নেই। জেলে থেকে নাজিরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম খান। সদর উপজেলায়ও অবস্থান খুব একটা শক্ত নয় জামায়াতের। তাছাড়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আর তার ছেলেরা এক নয়। একই কথা প্রযোজ্য রুস্তম আলী ফরাজীর ক্ষেত্রে। বারবার দল পালটে জনসমর্থন হারিয়েছেন তিনি। পুরো জেলাতেই বিএনপি এখন অনেক সংগঠিত। প্রয়োজন কেবল সঠিক প্রার্থী নির্বাচন।’
আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে কখনোই ভোটে জিততে পারেনি বিএনপি। আরেক এলাকা পটুয়াখালী-২-এ মাত্র একবার জয় জুটেছিল দলটির ভাগ্যে। আগামী নির্বাচনে এ আসন দুটিতে জয়ের স্বপ্ন দেখলেও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন।
বাউফলে জামায়াতের প্রার্থী ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। নির্বাচনী এলাকায় এরই মধ্যে তিনি গড়েছেন শক্ত অবস্থান। কলাপাড়া-রাঙ্গাবালীতে বিএনপির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বিএনপিরই সাবেক নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।
৫ আগস্টের পর দল ছেড়ে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেওয়া মোস্তাফিজ ছিলেন কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি। আওয়ামী লীগ আমলে ভোটে লড়ে হয়েছিলেন চেয়ারম্যান। গরিবের ডাক্তার হিসাবে বহু মানুষ পছন্দ করেন তাকে। প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে বিএনপির বহু নেতা-কর্মী যোগাযোগ রাখছেন তার সঙ্গে। নির্বাচনী এলাকায়ও রয়েছে হাতপাখার শক্ত অবস্থান।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে দেশে ৭ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর ব্যতিক্রম কলাপাড়া। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার কয়েকজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে দখল ও চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। এসব ঘটনার প্রতিবাদে কলাপাড়ায় সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দল। ফলে বিপুল সংখ্যক ভোটারের আস্থা হারিয়েছে ধানের শীষ।’
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. মজিবর রহমান টোটন বলেন, ‘অভিযোগ যে আমাদের কাছে আসছে না তা নয়, তদন্ত সাপেক্ষে সব অভিযোগের বিষয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী-৪ আসনে যেহেতু কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন নির্বাচন করবেন, তাই তাকে এলাকার বিষয়গুলো জানানো হচ্ছে। যে দুটি আসনের কথা বলা হচ্ছে সেখানে বিএনপি এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের ভোটাররাও আমাদের সঙ্গে আছে।’
বরিশালের উজিরপুর আর বানারীপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সরফুদ্দিন সান্টু, দুলাল হোসেন, রওনাকুল ইসলাম টিপু ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল। তবে এদের সবাইকে ছাপিয়ে এখন আলোচনায় সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি।
একসময়ের ছাত্রদল নেতা অভি জেপির (মঞ্জু) প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন এই আসনে। মডেল তিন্নি হত্যা মামলার আসামি হয়ে দেশ ছাড়া এই নেতা এখন আছেন কানাডায়। সম্প্রতি তিন্নি হত্যা মামলায় তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন এমনটাও জানিয়েছেন। ফেরার পর যদি নির্বাচনে নামেন, তাহলে বিএনপি প্রার্থীর জন্য জয় পাওয়া মুশকিল হবে।
কেননা সংসদ সদস্য থাকার ৫ বছরে নির্বাচনি এলাকায় তার করা ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে এখনো অন্য সবার চেয়ে বেশি জনপ্রীয় অভি। তাছাড়া কানাডায় থেকেও নানাভাবে এলাকার উন্নয়ন আর সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করে চলেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।
উজিরপুর-বানারীপাড়ার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেছে, অভির প্রতি সমর্থন প্রশ্নে এখনো তারা একাট্টা।
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
বরিশাল বিভাগের যেসব আসনে শক্ত অবস্থানে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন
দুর্গাপূজায় বরিশালে র্যাবের তিন স্তরের নিরাপত্তা, চলছে সাইবার মনিটরিং
বরিশাল ৫: জামায়াত-ইসলামি আন্দোলনের একক প্রার্থী, সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বিএনপি
বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম পরিদর্শনে বরিশাল আদালত চত্বরে প্রধান বিচারপতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল
জেলায় প্রায় ২ হাজার মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন