বরিশালে অপসো স্যালাইন লিমিটেড কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পর চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে এক পক্ষের আন্দোলনের মধ্যে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মালিকপক্ষ। আজ মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে গেলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা তাঁদের বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
২০ দিন ধরে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে নগরের কবি জীবনানন্দ দাশ (বগুড়া রোড) সড়কে অবস্থিত অপসো স্যালাইন কারখানার সামনের সড়ক অবরোধ করে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে শ্রমিকদের একটি পক্ষ। মালিকপক্ষ কারখানা চালুর উদ্যোগ নিলে আজ সকালে শ্রমিকদের অপর একটি পক্ষ কাজে যোগ দিতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, নতুন শ্রমিকেরা কারখানায় ঢুকতে চাইলে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা তাঁদের বাধা দেন। এরপর তাঁরা ব্যানার নিয়ে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আন্দোলনকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে সড়কে অবস্থান নেন। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকলে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনানন্দ দাশ সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে।
কাজে যোগ দিতে যাওয়া শ্রমিকেরা বলছেন, সকালে তাঁরা কোম্পানিতে ঢুকতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। যাঁদের চাকরি আছে, তাঁরা যেন কাজ করার সুযোগ পান, সে দাবি জানান তাঁরা। অন্যদিকে চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা বলছেন, চাকরি পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
অপসো স্যালাইন কারখানা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিব মিয়া বলেন, ‘স্টোরিপ্যাক (সিরিঞ্জ ও স্যালাইন সেট প্রস্তুতকারক) শ্রমিকদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করে নতুন শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছে মালিকপক্ষ।’
এ ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলন করেছে অপসো স্যালাইন লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ কুমার সরকার বলেন, শ্রম আইন মেনে অপসোনিনের স্টোরিপ্যাক বিভাগের ৪৪৪ জন শ্রমিককে অবসান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ শ্রমিক অবসানকালীন বেতন–ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার টাকা বুঝে নিয়েছেন। কিন্তু কিছু শ্রমিক ও বহিরাগত ব্যক্তিরা অন্য বিভাগের শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন। এতে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ আছে। যেহেতু বর্তমানে সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েছে, তাই উৎপাদন বন্ধ থাকলে সামনে স্যালাইনের সংকট প্রকট হতে পারে।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন দিনের ছুটি ঘোষণা দিয়ে ডাকযোগে ৫৭০ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুতির চিঠি পাঠানো হয়। গত ২৯ অক্টোবর চিঠি পাওয়ার পর থেকেই তাঁরা লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি করছেন। তাঁরা কারখানাটির সামনের সড়কে ২০ দিন ধরে অবস্থান নিয়ে আছেন। এতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
শ্রমিকদের আন্দোলনে শুরু থেকেই সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সম্প্রতি অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু হয়েছে। মূলত এ কারণে শ্রমিকদের অপসারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কম বেতনে নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটা শ্রম আইনের পরিপন্থী ও অমানবিক।
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)