" />
AmaderBarisal.com Logo

অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে

বিএম কলেজে আন্দোলনের নামে কর্মপরিষদের অরাজকতা!


আমাদেরবরিশাল.কম

৩ February ২০১৩ Sunday ৯:৪৭:২৭ PM

বিএম কলেজের সামনের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে মেয়াদোত্তির্ণ কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা (ছবিঃ আমাদের বরিশাল)বরিশাল ডেস্ক :: বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসের বদলি ঠেকাতে আন্দোলনে নেমেছে কলেজ ছাত্র সংসদের আদলে গড়া অস্থায়ী কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের নামে প্রশাসনিক ভবনসহ কলেজের ২১টি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসে অরাজকতা চালাচ্ছে তাঁরা। পাশাপাশি শিক্ষক কর্মচারীদের কার্যালয়ে ও ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাঁধা দিচ্ছেন তাঁরা। এর ফলে ভেঙ্গে পড়েছে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিদ্যাপীঠ বিএম কলেজের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম। এদিকে বিদায়ী অধ্যক্ষের গঠন করা কর্মপরিষদের এ অরাজকতাকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করেছে ছাত্রলীগের একাংশ, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল সকল ছাত্র সংগঠন।

৩ ফেব্রুয়ারী রোববার বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, কলেজের সকল একাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক কার্যালয়ে কর্মপরিষদের লাগানো তালা ঝুলছে। কর্মপরিষদের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী কলেজের শহীদ মিনার গেটে টায়ার জ্বালিযে ঘন্টাব্যাপী রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। এরপর তারা শহীদ মিনার চত্বরে এসে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। এদিকে ৪ দিন ধরে শিক্ষকরাও বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসে এসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অরাজকতার কারণে কলেজে বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের ক্লাস এবং পরীক্ষা।

ছাত্রবাসে থাকা সাধারন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, মেয়াদউত্তীর্ন কর্মপরিষদ নেতারা হলে হলে গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহনের জন্য চাপ দিচ্ছেন, অন্যথায় হল ছেড়ে দিতে বলছেন। আর কর্মপরিষদের নেতাকর্মীদের বরিশালের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরনের লোক বলে পরিচিতি থাকায় প্রশাসনও তাদের বাঁধা দিচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, যারা অধ্যক্ষের সহায়তায় বিনা নির্বাচনে ছাত্র কর্ম পরিষদের নেতা ও সদস্য হয়েছিলেন, মূলত তারাই আন্দোলন করে অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে চেষ্টা করছেন। তাদের ধারনা, নতুন অধ্যক্ষ এসে কর্মপরিষদ অবৈধ ঘোষনা করতে পারেন। তাই তারা যে কোন মুল্যে বদলী ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে।

তবে মেয়াদোত্তির্ণ অস্থায়ী কর্মপরিষদের সহ-সভাপতি ও শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ন-আহ্বায়ক মঈন তুষার সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষের বদলী সাধারন শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছেনা। তাঁরা অধ্যক্ষের বদলি প্রত্যাহারের দাবীতে আন্দোলন করছে, আর কর্মপরিষদ এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘অধ্যক্ষকে পুনর্বহালে প্রয়োজনে কলেজ অচল করে দেয়া হবে।’

বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন-আহ্বায়ক মাকসুদ আলম মাসুদ জানান, দূর্ণীতিবাজ এ অধ্যক্ষের বদলীতে সাধারন শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগ খুশী। অধ্যক্ষ তার মেয়াদকালে সাধারন ছাত্রছাত্রীদের আশা-আকাঙ্খার বাস্তবায়ন করতে পারেননি। অধ্যক্ষের আর্থিক ও বিভিন্ন অনিয়মে যারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন, তারাই নিজেদের স্বার্থে বদলী ঠেকাতে আন্দোলন করছেন।

ছাত্রমৈত্রী বিএম কলেজ শাখার সভাপতি শাহরুখ তমাল বলেন, তার সংগঠন এ আন্দোলনের সাথে নেই। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছেন।

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রেজাউল ইসলাম খোকন বলেন, অযৌক্তিক আন্দোলনের নামে নিজেদের দুর্ণীতি ঢাকতে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করছে মেয়াদউত্তীর্ন অবৈধ কর্মপরিষদের নেতারা।

কলেজ ছাত্রলীগের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রফিক সেরনিয়াবাত অভিযোগ করেন, ‘বিদায়ী অধ্যক্ষ ৬৪ লাখ টাকার দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত রয়েছেন। এছাড়া অবৈধভাবে গঠিত ছাত্র কর্ম পরিষদ অধ্যক্ষের সাথে যোগসাজশে বাকসু তহবিল থেকে বিপুল অংকের টাকা লোপাট করেছে। অধ্যক্ষ বদলী হলে বিষয়টি জানাজানি হবে এমন আশঙ্কায় কর্মপরিষদ নেতারা আন্দোলন করছেন।’

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে অস্থায়ী কর্মপরিষদের সাধারন সম্পাদক নাহিদ সেরনিয়াবাদ বলেন, ‘অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, আমরা আমাদের প্রিয় অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে আন্দোলন করছি।’

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ননী গোপাল দাস আন্দোলনের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে আমাদের বরিশাল ডটকমকে জানান, ‘আন্দোলনের কারনে আমি প্রশাসনিকভাবে অবমুক্ত হতে পারিনি। কিন্তু তিনদিন অতিবাহিত হওয়ায় সরকারী নিয়মঅনুযায়ী আজ (৩ ফেব্রুয়ারী) সয়ংক্রিয়ভাবে অবমুক্ত হয়ে গেছি। তবে কবে বিএল কলেজে যোগ দিব; নাকি ‘মেডিকেল লিভ’ নিব তা এখনো ঠিক করিনি।’

বিএম কলেজের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস ছিলেন বরিশালের প্রভাবশালী এক নেতার অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যাক্তি। তার ও তার অনুসারীদের বিভিন্ন অন্যায় আবদার পূরন করতে গিয়েই তাকে এমন শাস্তিমূলক বদলী হতে হয়েছে।

এদিকে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ননী গোপাল দাসের বদলীর আদেশ বাতিল করতে অনুরোধ জানিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, আর্থিক অনিয়ম ও অডিট আপত্তিসহ বিভিন্ন কারনে গত ৩০ জানুয়ারী বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসকে খুলনার বিএল কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শাস্তিমুলক বদলী করে। ৩ ফেব্রুয়ারী রোববারের মধ্যে তাকে বিএল কলেজে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ আদেশের খবর আসার সাথে সাথেই কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস তার মেয়াদকালে বিএম কলেজের ছাত্র সংসদ (বাকসু)’র সংবিধান সংশোধন করে বরিশালের প্রভাবশালী এক নেতার অনুগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিকল্প ছাত্র কর্ম পরিষদ গঠন করে বিতকির্ত হয়ে পড়েন। বিতর্কিত এ কর্মপরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অধ্যক্ষ কৌশলে ওই কমিটি বাতিল করেননি, আবার মেয়াদও বৃদ্ধি করেননি। আর এ সুযোগে কর্মপরিষদের নেতারা কলেজের ছাত্র সংসদের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে তুলে নিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত পূর্বের সংবাদঃ
অধ্যক্ষর বদলী ঠেকাতে
শ্রেনীকক্ষে তালা ঝুলিয়ে কর্মপরিষদের সড়ক অবরোধ, ভাংচুর
কলেজ ভবনে তালা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে আন্দোলনে কর্মপরিষদ !
বিএম কলেজ অধ্যক্ষকে বদলী, ছাত্রলীগের একাংশের বিক্ষোভ
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতারা
‘অবৈধ কর্মপরিষদ গঠনের জন্য মেয়র ও অধ্যক্ষ দায়ী’
বাকসু’র সংবিধান সংশোধন করে
অনিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষের কর্ম পরিষদ গঠন!
ছাত্রলীগ ক্যাডারদের তান্ডব
কলেজ অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে কক্ষ ভাংচুর, শিক্ষক লাঞ্চিত



সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক


প্রকাশক: মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার    সম্পাদক: মো: জিয়াউল হক
সাঁজের মায়া (২য় তলা), হযরত কালুশাহ সড়ক, বরিশাল-৮২০০। ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, মুঠেফোন : ০১৮২৮১৫২০৮০ ই-মেইল : hello@amaderbarisal.com
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।