Current Bangladesh Time
Tuesday December ৯, ২০২৫ ৫:০৯ AM
Barisal News
Latest News
Home » ইন্দুরকানী » পিরোজপুর » আকাশে মেঘ দেখলেই মলিন হয়ে যায় ইন্দুরকানীর ফরিদার মুখ
১০ August ২০২৫ Sunday ২:১৭:৫৯ PM
Print this E-mail this

আকাশে মেঘ দেখলেই মলিন হয়ে যায় ইন্দুরকানীর ফরিদার মুখ


ইন্দুরকানী ((পিরোজপুর) প্রতিনিধি:

‘বেড়ি বাঁধ না থাহায় মোরা ম্যালা বিপদে আছি। জোয়ার অইলেই উডান-বাড়ি সব তলাইয়া যায়। ভয়তে থাহি আবার কোন সময় সিডরের নাহান পানিতে সব ভাসাইয়া লইয়া যায়। মোর মতো আর যেন কেউর কোল খালি না অয়।’ 

চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কথাগুলো বলছিলেন ফরিদা বেগম। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়ার বলেশ্বর নদের পাড়ের চণ্ডিপুর গ্রামে তিনি বাস করেন। ঘূর্ণিঝড় সিডর তার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে সাত বছর বয়সের মিমি ও তিন বছরের রিনাকে। সেই দিনের ভয়াল স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারেন না ফরিদা। ভেসে গিয়েছিল তাদের বসতঘরও। আকাশে মেঘ দেখলেই মলিন হয়ে যায় ফরিদার মুখ।

এ চিত্র শুধু ফরিদা বেগমের নয়, কচাঁ ও বলেশ্বর নদীর পাড়ে বসবাস করা হাজার মানুষের। ছোট-বড় ডজনখানেক নদী নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। আর এ নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে লোকালয়, হাট-বাজার ও শিল্পকারখানা। 

ফলে এ জেলার অর্থনীতিতে যেমন নদীর রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা, ঠিক তেমনি মৌসুমে এর বিরূপ প্রভাবও পড়ে অর্থনীতিসহ সার্বিক জীবনে। বর্ষা মৌসুমে এসব নদীতীরবর্তী এলাকার পানি নামতে শুরু করে তখন নদীর স্রোত আরও বেড়ে যায়।

ভাঙতে শুরু করে নদীর পাড়, বেড়িবাঁধ আর আক্রান্ত হয় হাট-বাজার, লোকালয় এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরও। অনেক এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় এবং প্রয়োজনীয় স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে নদীপাড়ের মানুষ। 

বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে সেসব এলাকার ফসল ও মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে মানুষ পড়ে আর্থিক ক্ষতিতে। ফলে এ থেকে রক্ষা পেতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। 

জেলার ইন্দুরকানী উপজেলাটি তিন দিক থেকে নদীবেষ্টিত। তাই নদী তীরবর্তী বাসিন্দার সংখ্যাও এখানে অনেক বেশি। কিন্তু নদীতীরবর্তী অধিকাংশ এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে সেসব এলাকার বাসিন্দা। 

উপজেলার কালাইয়া, সাঈদখালী, খোলপটুয়া, চণ্ডিপুর, চরবলেশ্বর, গাজীরহাট, চাড়াখালী, লাউরী, ইন্দুরকানী বাজারসহ নদীতীরবর্তী এসব এলাকার বাসিন্দারা রয়েছে দুর্যোগ ঝুঁকিতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে এ উপজেলাটি বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছিল ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। তখন উপজেলায় প্রাণহানি ঘটে ৭২ জনের। বিধ্বস্ত হয় নদী তীরের প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। তারপর থেকে নামে মাত্র কয়েকটি স্থানে দুবার সংস্কার হয়েছে বেড়িবাঁধের। 

বর্ষায় সামান্য জোয়ারে লোকালয় পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। ডুবে যায় ফসলের ক্ষেত। আবার লবণাক্ত পানিও জোয়ারের সঙ্গে প্রবেশ করে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। 

জোয়ারের পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানা জমে যায় ফসলের ক্ষেতে। বর্ষাকাল এলেই বেড়িবাঁধ নিশ্চিহ্ন উপজেলার খোলপটুয়া গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এ গ্রামের কয়েকশ বিঘা জমি জোয়ারের পানি আর কচুরিপানায় ঢেকে যায়। ডুবে যায় যাতায়াতের পথ। পানির চাপে ভেঙে যায় বসতঘরের মাটির তৈরি মেঝে। ভেসে যায় মাছের ঘের। স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীদের বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাতায়াত। সব মিলিয়ে বেড়িবাঁধ সংকটে দিশেহারা স্থানীয়রা।

শুধু ইন্দুরকানী উপজেলাই নয়, মঠবাড়িয়া, ভান্ডাড়িয়া, কাউখালী ও পিরোজপুর সদরের শারিকতলা ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকা রয়েছে নদীভাঙনের ঝুঁকিতে।

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, গত ২৪ ও ২৫ অর্থবছরে টগড়া প্রান্তে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কালাইয়া থেকে কলারণ ফেরিঘাটের ১০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ বরাদ্দসাপেক্ষে নির্মাণ করা হবে। 

অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মানুষের জীবনমাল রক্ষায় আরও কিছু নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জেলার ৬টি পোল্ডারের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২ হাজার কোটি টাকা। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাকিগুলোও মেরামত করা হবে। পিরোজপুর জেলায় মোট ৩১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক

শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-০৪ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর বিদ্রোহী প্রার্থীর আর্বিভাব
বরিশাল মুক্ত দিবস আজ: ওয়াপদা কলোনির টর্চার সেল গণহত্যার নীরব সাক্ষী
আজ ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস
ব্যয়বহুল বরিশাল–ভোলা সেতুর নির্মাণে আর্থিক সংস্থান নিয়ে শঙ্কা উপদেষ্টার
জাতীয় নির্বাচনে ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়াল ইসি
Recent: Mayor Hiron Barisal
Recent: Barisal B M College
Recent: Tender Terror
Kuakata News

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
আমাদের বরিশাল ২০০৬-২০২০

প্রকাশক ও নির্বাহী সম্পাদক: মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্নু, সম্পাদক: রাহাত খান
৪৬১ আগরপুর রোড (নীচ তলা), বরিশাল-৮২০০।
ফোন : ০৪৩১-৬৪৫৪৪, ই-মেইল: hello@amaderbarisal.com