আমতলীর ১৬ গ্রামের বাসিন্দাদের ভরসা ৩টি বাঁশের সাঁকো
জাকির হোসেন, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি ::: আমতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়ার খাল, রামনা বাদের শাখা খাল ও রামজীর খালে সেতু না থাকায় ২০ বছর ধরে ওই এলাকার ১৬ গ্রামের মানুষের ভরসা এখন ৩ টি বাঁশের সাঁকো। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষর চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলার সীমান্ত ভাগকারী পচাকোড়িালিয়া খালের উপর প্রায় ২০ বছর পূর্বে স্থানীয়রা তাদের চলাচলের জন্য বাঁশ দিয়ে একটি সাঁকো নির্মান করেন। এই খালটি আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন এবং তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে দুই উপজেলাকে ভাগ করে প্রবাহিত হয়ে পায়রা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে।
খালের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের কলা রং গ্রাম, কলারং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কচুপাত্রা বাজার। খালের অপর প্রান্তে আমতলীর আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন। এখানে রয়েছে পূর্ব চরকগাছিয়া, দক্ষিণ চরকগাছিয়া, ঘোপখালী ও চান্দখালী গ্রাম। এখানে রয়েছে চরকগাছিয়া ড. শহীদুল ইসলাম কলেজ, চরকগাছিয়া সরকরী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোপখালী আল আমিন দাখিলী মাদরাসা, চরগগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব চরকগাছিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় এবং স্কুল কলেজ গামী ছোট ছোট শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়ত করতে হয় এই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে। এছাড়া এই এলাকার আশ পাশের প্রায় ১৬ হাজার মানুষের হাট বাজার এবং অফিসিয়াল কাজের জন্য আমতলী সদর, তালতলী সদর ও বরগুনা জেলা শহরে যেতে হয় এই সাাঁকো পাড় হয়ে। এতে তাদের ভোগান্তি আর বিরম্বনার শেষ থাকে না। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসী এখানে এটি সেতু নিমানের দাবী জানালেও জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন কেউ কর্নপাত করছে না বলে স্থানীয়নের অভিযোগ।
কলারং গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন সিকদার জানান, ‘২০ বছর ধরে পচাকোড়ালিয়া খালে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রায় দুই প্রান্তের ১৬ হাজার মানুষ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়াপার হচ্ছে কিন্ত সেতু নিমানে কেউ এগিয়ে আসছে না। এখানে একটি সেতু নির্মান অত্র অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবী’।
আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম নুরুল হক তালুকদার বলেন, ‘সাঁকোর জায়গায় সেতু নির্মানের জন্য আমি এলজিইডির সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি’।
অন্যদিকে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের রামজীর খালে ১৫ বছর ধরে একটি সেতু না থাকায় স্থানীয় গুরুদল, হলদিয়া, চিলা এবং নাচনা পাড়াসহ ৪ গ্রামের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে এবং চলাচলের সুবিধার জন্য একটি বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছে। এই গ্রামের ৪ হাজার মানুষ প্রদিনিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করছে। সাঁকের দক্ষিণ প্রান্তে গুরুদল গ্রামে রয়েছে গুরুদল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যলয়সহ একটি দাখিলী মাদরাসা। এই ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন শতাধিক কোমল মতি শিশু শিক্ষার্থীরা বই খাতা নিয়ে পারাপার হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অফিসিয়াল কাজের জন্য আমতলী সদর, পটুয়াখালী, বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের যে কোন প্রান্তে চলাচলের এক মাত্র ভরসাই হচ্ছে এই বাঁশের সাঁকে। সাঁকোর কারনে অনেক সময় প্রসূতি মায়েদের এবং মুমুর্ষ রোগীদের চিকিৎসার জন্য গ্রামের বাইরে অন্যত্র নেওয়া যায় না ফলে তাদের চিকিসার জন্য অদিম যুগের মত ওঝা কবিরাজই এক মাত্র ভরসা।
চিলা গ্রামের ষাটোর্ধ নারী আম্বিয়া খাতুন বলেন, ‘বাবাগো বাঁশের এই হাক্কা পারাইতে গেলে পরানডা উইলডা যায়’। মোগো দয়া হইর্যা এই হানে একটা ব্রীজ বানাইয়া দ্যান। হলদিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মামুন জানান, ‘রামজীর খালে সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকোই প্রায় ৪ হাজার মানুষে ভরসা। এই এলাকার মানুষের দু:খ কষ্টের কথা বিবেচনা করে এখানে জরুরী বিত্তিতে একটি সেতু নির্মান করা প্রয়োজন’।
এদিকে আমতলীর হলদিয়া ইউনিয়নের পূর্বসীমানায় রয়েছে টেপুরা গ্রাম। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রামনাবাদ নদীর শাখা খাল। এই খালের পূর্ব প্রান্তে রয়েছ কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রাম। দুই উপজেলার সীমান্ত ভাগ কারী রামনাবাদ শাখা খালের উপর রয়েছে একটি বাঁশের সাঁকে। খালের দুই পার মাছুয়াখালী এবং টেপুরা গ্রাম। এই দুই গ্রামে প্রায় ৫ হাজার মানুণ বসবাস করে। প্রতিদিন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় হাট বজারে যাওয়া আসা এবয় অফিস আদালতে যাওয়ার জন্য এই বাঁসের সাকোটিই হচ্ছে তাদের এক মাত্র ভরসা। এছাড়া আমতলী প্রান্তে টেপুরা গ্রামে রয়েছে মধ্য টেপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে সেতু পার হয়ে মাছুয়াখলী গ্রামের শতাধিক ছেলে মেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাাঁকে পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়া করে। বর্ষার দিনে বাঁশ পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া অনেক ছেলে মেয়ে সাঁকো থেকে পানিতে পরে আহত হয়েছে। তাই এ সময় অনেক ছেলে মেয়ে পড়ে যাওয়ার ভয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
মাছুয়া খালী গ্রামের শিক্ষার্থী মো: আরিফ বিল্লাহ জানান, ‘বর্ষার সময় সাঁকো থেকে পানিতে পরে যাই ভয়ে এখন আর স্কুলে যাই না’। মধ্য টেপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলম মল্লিক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কোম মতি শিমুদের কথা বিবেচনা করে রামনাবাদ শাখা খালের উপর জরুরী ভিত্তিতে একটি সেতু নির্মান প্রয়োজন’।
আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে উল্লেখিত খাল ৩টিতে সেতু নির্মানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সম্পাদনা: বরি/প্রেস/মপ |