বরিশাল-৫ (সদর ও নগর): গুরু-শিষ্যদের লড়াই থামাতে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ কেন্দ্রের
বিশেষ প্রতিনিধি:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের আসনগুলোর অন্যতম বরিশাল-৫ (সদর ও নগর)। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে চলছে গুরু-শিষ্যের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। অন্যবারের মতো এবারও এখানে আলোচনায় রয়েছেন একাধিকবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার। তবে দলের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তাঁর পথ বন্ধুর করে তুলেছেন তাঁরই কয়েকজন শিষ্য। এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন সরোয়ার।
তার ওপর সদর উপজেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া এবং নগর বিএনপি নিয়ে সরোয়ার অনুসারীদের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নেতারা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে গত বৃহস্পতিবার সরোয়ারসহ চার নেতাকে ডেকে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
সরোয়ারের সঙ্গে এবার দলের মনোনয়নপ্রাপ্তির দৌড়ে রয়েছেন জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন, নগর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এবং নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার। এই তিনজনই একসময় মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারী ছিলেন। অবশ্য জিয়া উদ্দিন জাতীয় নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মনোনয়ন চাননি। তবে তিনি তাঁর পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
এই তিনজন ছাড়াও এবারের নির্বাচনে সদর আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকও। তাঁকেও বিএনপিতে যুক্ত করেছিলেন সরোয়ার। এখান থেকে মনোনয়ন চান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহও।
এদিকে সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন এবং নগর বিএনপি নিয়ে সরোয়ার অনুসারীদের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ অনেকে।
সম্প্রতি নগর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এক কর্মিসভায় মজিবর রহমান সরোয়ারকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘মহানগর বিএনপির দিকে চোখ তুলে তাকালে আমরা রাজপথে জবাব দেব। আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের কমিটি ভাঙার পাঁয়তারা করছেন।’
এ বিষয়ে আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, বৃহস্পতিবার কেন্দ্র থেকে ডেকে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে কেউ যাতে কথা না বলে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানতে চেয়েছি, সরোয়ার ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কি না। ডা. জাহিদ বলেছেন, না। তাহলে সরোয়ারের লোকজন কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানগর বিএনপি ভাঙার কথা বলছেন? কেনই-বা নির্বাচনের সময় প্রশ্নবিদ্ধ সদর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি করা হলো?’
নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট না করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ঘরে বসে ছিলেন, দল তাঁদের স্থান দেয়নি। এখন মহানগর বিএনপি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলবে না।’
এদিকে সদ্য গঠিত সদর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম সাবু বলেন, ‘সদরের আহ্বায়ক নুরুল আমিন জামায়াত নেতা ছিলেন। তিনি এখনো জামায়াতের বিভিন্ন মাদ্রাসা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক। বরিশাল বিএনপিকে চূর্ণবিচূর্ণ করতেই জামায়াত নুরুল আমিনকে বিএনপিতে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালাম রাঢ়ী একসময় আওয়ামী লীগে সক্রিয় ছিলেন। সরোয়ার ভাই এ কমিটি করিয়ে এনেছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর বিএনপির একাধিক সদস্য বলেন, যুবদল নেতা চুন্নু মৃধা সদর উপজেলার মতো মহানগর বিএনপি ভাঙার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন। সরোয়ারের লোক চুন্নু। মনোনয়ন পাওয়ার আগেই সরোয়ারের অনেক অনুসারী মারামারি, দখলবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি মিছিল-সমাবেশে দলীয় নেতাদের পাশে ডাকেন না; বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করা অনেককে সরোয়ারের পথসভা, গণসংযোগে দেখা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, কেন্দ্র থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকেছিল। তাঁরা আগামী নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। তা ছাড়া নির্বাচনী মৌসুমে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যেন কোনো মন্তব্য না করে, সে বিষয়েও সংযত হতে বলা হয়েছে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে, একাধিক মিছিল হচ্ছে। এটা বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সদর উপজেলা কমিটি করার জন্য তাঁর কাছে কেন্দ্র থেকে নাম চেয়েছিল, তিনি প্রস্তাব করেছেন মাত্র। সভায় মহানগরের বিষয়েও কথা হয়েছে। নগর কমিটি না ভাঙলেও যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁদের নিয়ে ইউনিটি গড়া যেতে পারে।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, সভায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে কথা বলা যাবে না। অভ্যন্তরীণ কলহ রাখা যাবে না। সদর উপজেলা নিয়ে সমালোচনা কতটা যৌক্তিক, তা দেখতে হবে। তবে নির্বাচনের আগে মহানগর বিএনপিতে হাত দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আকন কুদ্দুস বলেন, আগামীকাল সোমবার বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৬০-৭০ জনকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি সভা করবেন। ওই সভায় তিনি নেতাদের নির্বাচনী গাইডলাইন দেবেন।
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণে ৪ জনের ফাঁসি
বরিশাল-৫ (সদর ও নগর): গুরু-শিষ্যদের লড়াই থামাতে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ কেন্দ্রের
বরিশাল বিভাগের ২১ আসন: গুলশানে ডাক পেলেন ৬০ মনোনয়নপ্রত্যাশী
আগামীকাল শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকে ১৫২তম শুভ জন্মবার্ষিকী
দক্ষিণাঞ্চলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে ২৭ অক্টোবর কথা বলবেন তারেক রহমান