খাল দখল করে ছাত্রলীগ সভাপতির মার্কেট নির্মাণ! নিজস্ব প্রতিবেদক
সাগরদী খাল দখল করে দোকানের নির্মাণ কাজ চলছে
বরিশালের সাগরদী খালের একটি অংশ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সাগরদী বাজার সংলগ্ন খালের লম্বালম্বি ১০০ ফুট দখল করে সেখানে তিনটি দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে রাতদিন সমানতালে চলছে খালের বুক ভেদ করে রড-সিমেন্টের কাজ।
সাগরদী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জন সাহা বাবু ওরফে সাহা বাবু জানান, ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে দোকান তিনটি নির্মাণ করছেন।
স্থানীয় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার রিজভী চৌধুরী আমাদের বরিশাল ডটকম’কে বলেন, ‘আগে খালের পাড় ঘেঁষে চারটি দোকান ছিলো। ১৯৭৫ সালে দোকান চারটি আব্দুল আজীজ হাওলাদার, বলাই সূর্য্যপাল ও হোসেন নামে তিন ব্যবসায়ীকে লিজ দেয়া হয়েছিলো।’
‘শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকাকালীন সাগরদী বাজার উন্নয়নের নামে দোকান চারটি ভেঙ্গে পূর্বের মালিকদের ওই দোকানগুলো পুনর্গঠন করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।’
‘কিন্তু উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর আগের মালিকদের কাছে লিজ না দিয়ে ওই চারটি দোকানের জমি সহ খালের মধ্যের আরো ২০ ফুট জমি তৎকালীন মেয়রের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিনের ভগ্নিপতি কামাল পাশা ও যুবলীগের আবুয়াল হোসেন অরুনের কাছে লিজ দেয় সিটি কর্পোরেশন।’
স্থানীয়রা জানান, দশম সংসদ নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে দোকান নির্মাণের কাজ শুরু করেন ছাত্রলীগ সভাপতি। তিনি সাগরদী এলাকার বাসিন্দা। ইতিমধ্যে ওই স্থানে তিনটি দোকানের জন্য পাকা মেঝে ও খালের মাঝে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘লীজ পেয়ে দোকান মালিকরা ভাঙ্গন রোধে খালের মাঝে বাঁধ দিচ্ছেন।’ এ ব্যাপারে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
খাল দখলের বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার রিজভী চৌধুরী।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী হুমাযুন কবির আমাদের বরিশাল ডটকম’কে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে খাল দখল বন্ধে একটি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। গত রোববার স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে নোটিশটি পৌঁছে দেয়া হয়েছে।’
রিজভী চৌধুরী জানান, ‘নোটিশ পৌঁছে দিতে এসে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বিসিসি’র কর্মচারীরা।’
‘বাঁধ দেয়া হয়ে গেছে, মেঝেও করা শেষ। যে কোন দিন ছাদের ঢালাই দেয়া হবে। এ অবস্থায় শুধু নোটিশ দিয়ে খাল দখল বন্ধ করা যাবেনা। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে’, বলেন রিজভী চৌধুরী।
খাল ও জলাভূমি পুনরুদ্ধার কর্মী এস এম শাহজাদা আমাদের বরিশাল ডটকম’কে বলেন, ‘বাংলার ভেনিস বলে খ্যাত বরিশালে এক সময় ৬০০ পুকুর জলাশয় ও ২২টি খাল ছিলো। কিন্তু নির্বিচারে দখল ও ভরাটের ফলে বরিশালে এখন মাত্র চারটি খাল (জেল খাল, ভাটার খাল, রায়ের খাল, সাগরদী খাল) রয়েছে। এখন এগুলোও দখল করার চেষ্টা চলছে। সাগরদী খাল দখল বন্ধে ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সিটি কর্পোরেশনকে আহ্বান জানান তিনি।
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |