বরগুনা-১ আসনে মনোনয়ন বিতর্ক: ২ বিএনপি নেতার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ (বরগুনা সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বরগুনা সদর উপজেলা থেকে প্রার্থী ঘোষণা করায় আমতলী ও তালতলীবাসী ক্ষুব্ধ। ২ লাখ ৯২ হাজার ভোটারের এই অঞ্চলের দাবি উপেক্ষা করে সদর উপজেলা থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার এবং প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ক্ষুব্ধ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অবিলম্বে প্রার্থী পরিবর্তন করে আমতলী-তালতলী থেকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ হলেও ২০০১ সালে সেই দুর্গে হানা দেন সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা মতিউর রহমান তালুকদার। ওই সময় এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে মতিয়ার রহমান তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৫ হাজার ভোটে হেরে যান। শেখ হাসিনা এই আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে মতিয়ার রহমান তালুকদার বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় আমতলী-তালতলী উপজেলার উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন হয়।
২০০৮ সালে সেনাশাসিত সরকার বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনকে দুটি আসনে রূপান্তর করে। বরগুনা সাবেক-৩ আসন (আমতলী-তালতলী) বিলুপ্ত হয়ে বরগুনা সদরের সঙ্গে একীভূত হয়। আমতলী-তালতলী উপজেলার ৪ লাখ মানুষের ভাগ্যে নেমে আসে অন্ধকার। ২০০৯ সাল থেকে এই আসনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তিন-তিনবার সংসদ সদস্য হলেও আমতলী-তালতলীর কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদারের রেখে যাওয়া উন্নয়নই তিনি (শম্ভু) ওলটপালট করে উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছেন। গত ১৬ বছর নানাভাবে উন্নয়নবঞ্চিত হয় আমতলী-তালতলী উপজেলার মানুষ।
পায়রা নদীর পূর্ব পারে আমতলী-তালতলী উপজেলা। পশ্চিম পারে বরগুনা সদর উপজেলা। দুই পার মিলিয়ে এই আসনে ভোটার ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৮ ও তালতলী উপজেলার ভোটার ৯৩ হাজার ৭২৫ জন। এই দুই উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ জন। বরগুনা সদর উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪১ জন। বরগুনা সদর উপজেলার চেয়ে পায়রা নদীর পূর্ব পারে আমতলী-তালতলী উপজেলায় ২৬ হাজার ৩৯২ ভোটার বেশি।
এবার আমতলী-তালতলী থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার, তৌহিদুল ইসলাম গাজী, ওমর আব্দুল্লাহ শাহীনসহ একাধিক নেতা মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। কিন্তু দুই উপজেলার প্রায় ৫২ শতাংশ ভোটারকে বঞ্চিত করে সোমবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বরগুনা সদর উপজেলা থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লাকে মনোনয়ন দেয়।
আমতলী-তালতলী থেকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ায় দুই উপজেলার মানুষ ক্ষুব্ধ হয় এবং সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার এবং ওমর আব্দুল্লাহ শহীন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রায়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বলেন, ‘আমতলী-তালতলীর ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ জন ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের দাবি পূরণে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।’
সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আগামী নির্বাচনে লড়ব। জনগণ আমার মূল শক্তি। আমতলী-তালতলীর মাটি ও মানুষের নেতা আমি। আমার হারানোর কিছু নেই। হারলে এই দুই উপজেলার জনগণকে নিয়ে হারব।’
আমাদের বরিশাল ডটকম -এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। amaderbarisal.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে amaderbarisal.com কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)