অধ্যক্ষকে মারধর: হামলাকারী সেই ছাত্রলীগ নেতাদের বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র!
 ছবি: ১ – ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষারের (হলুদ বৃত্তে চিহ্নিত) নেতৃত্বে অধ্যক্ষকে ধাওয়া করা হচ্ছে, পাশে আরেক ক্যাডার জোবায়ের আলম (লাল বৃত্তে)। ছবি: ২ – অধ্যক্ষকে লাঞ্চিত করছে ক্যাডাররা, পিছেন জোবায়ের (লাল বৃত্তে)। ছবি: ৩ – অধ্যক্ষকে কিলঘুষি মারছে জোবায়েরসহ অন্যান্য ক্যাডাররা। ছবি: ৪ – এ ছবিটি অধ্যক্ষেকে মারধরের দু’ঘন্টা পরের। অধ্যক্ষকে মারধরের পরে টাউন হলের সামনে হামলাকারীদের নিয়ে তৎকালিন মেয়র হিরন (ফাইল ফটো)
বরিশাল :: বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্র দত্তকে মারধরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মূল হামলাকারীদের বাদ দিয়েই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে পুলিশ। আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্রে মূল হামলাকারী বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক ও অস্থায়ী ছাত্র কর্মপরিষদের সহ-সভাপতি মঈন তুষার, সাধারন সম্পাদক নাহিদ সেরনিয়াবাত এবং ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক জোবায়ের আলম কারোই নাম নেই। অখচ অধ্যক্ষকে মারধর ও ধাওয়ার সময় সংবাদকর্মীদের তোলা ছবিতে এদের দু’জনকে স্পষ্ট করে চিহ্নিত করা গেছে।
মূল হামলাকারীদের বাদ দিয়ে গত ২৫ জুন এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হলেও বিষয়টি এতদিন চাপিয়ে রাখা হয়। ৮ জুলাই সোমবার মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ পায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন শেখ শুধুমাত্র সাবেক মেয়র হিরনের সোপর্দ করা যুবকদের অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হল- সোহাগ ওরফে পাসপোর্ট সোহাগ, সোহেল, মিরাজ ও জহিরুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে বেআইনীভাবে পথরোধ করে সরকারী কাজে বাঁধা দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা এবং হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আমাদের বরিশাল ডটকমের অনুসন্ধানে, হামলার সময়ের তোলা ছবি ও ভিডিও দেখে হামলার সাথে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার বহিষ্কৃত যুগ্ম আহবায়ক ও অস্থায়ী কর্মপরিষদের সহসভাপতি মঈন তুষার, কর্মপরিষদের সাধারন সম্পাদক (জিএস) নাহিদ সেরনিয়াত, কর্মপরিষদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক জোবায়ের আলম ও সদস্য সাদ্দাম হোসেন শোভনকে চিহ্নিত করা গেছে। আর এরা সকলেই সাবেক বিসিসি মেয়র হিরনের অনুগত বলে বরিশালে পরিচিত।
চিহ্নিত হামলাকারীদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়ার ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘ছবি দেখেতো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া যায়না। যাদের নাম এজহারে ছিল, তাদের নাম অভিযোগপত্রে এসেছে। মঈন তুষার, নাহিদ, জোবায়ের আলম এদের নাম এজহারে ছিলনা তাই তদন্তেও আসেনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, অভিযোগপত্রে মুল হামলাকারীদের নাম বাদ দিয়ে পরোক্ষভাবে এই বার্তা দেয়া হল যে, রাজনৈতিক প্রশ্রয় থাকলে শিক্ষকদের মারধর করলেও এখন থেকে আর কোন শাস্তি পেতে হবেনা। এতে ছাত্র নামধারী এসব সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, আর্থিক অনিয়ম ও অডিট আপত্তিসহ বিভিন্ন কারনে গত ৩০ জানুয়ারী বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসকে খুলনার বিএল কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শাস্তিমুলক বদলী করে। ৩ ফেব্রুয়ারী রোববারের মধ্যে তাকে বিএল কলেজে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ আদেশের খবর আসার সাথে সাথেই কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস তার মেয়াদকালে বিএম কলেজের ছাত্র সংসদ (বাকসু)’র সংবিধান সংশোধন করে বরিশালের তৎকালীন মেয়র হিরনের অনুগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিকল্প ছাত্র কর্ম পরিষদ গঠন করে বিতকির্ত হয়ে পড়েন। বিতর্কিত এ কর্মপরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অধ্যক্ষ কৌশলে ওই কমিটি বাতিল করেননি, আবার মেয়াদও বৃদ্ধি করেননি। আর এ সুযোগে কর্মপরিষদের নেতারা কলেজের ছাত্র সংসদের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে তুলে নিয়েছেন। অধ্যক্ষকে বদলী করার পরপরই কলেজের ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলনে নামে তৎকালীন মেয়র হিরন সমর্থিত কর্মপরিষদ। এদিকে পুরাতন অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন হিরন। এর মাঝে সরকারী আদেশ মোতাবেক কলেজে যোগদান করতে এসে হিরন সমর্থিতদের হাতে মারধরের শিকার হন বিএম কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্র দত্ত।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদঃ
মূলহোতা তুষার-নাহিদকে বাঁচাতে ‘জজ মিয়া’ নাটক!
চার যুবক আটক, জড়িতদের গ্রেপ্তারে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ
যোগদান করতে আসায় অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর!
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |