অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনায় নিন্দার ঝড় মূলহোতা তুষার-নাহিদকে বাঁচাতে ‘জজ মিয়া’ নাটক!
ডেস্ক রিপোর্ট :: বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দত্তকে মারধরের ঘটনায় দেশজুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। এ ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ প্রধানকে নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনার মুলহোতা অস্থায়ী কর্ম পরিষদের সহসভাপতি ও ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদ সেরনিয়াবাতকে বাঁচাতে রচিত হয়েছে আরেক ‘জজ মিয়া’ নাটক। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় জজ মিয়ার কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও অধ্যক্ষের উপর হামলার ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী মুলহোতাদের বাদ দিয়ে আটক করা হয়েছে শুধু চুনোপুটিদের।
অধ্যক্ষকে মারধরের কিছুক্ষন পরই মূলহোতা ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাত এবং মেয়র হিরনকে একটি অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে দেখা গেছে।
তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশে দেওয়ার পর বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন নিজেই পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ন হন। মূলহোতাদের আড়াল করতে তিনি বহিরাগত চার যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তার এই অতি উৎসাহী আচরন সুশীল সমাজ দেখছেন ভিন্ন ভাবে। মূলহোতাদের আড়াল করতেই তিনি এটা করেছেন বলে সুশীল সমাজ মনে করছেন। অন্যদিকে, অধ্যক্ষের উপর হামলায় মেয়রের প্ররোক্ষ সমর্থনের কথাও তুলেছেন অনেকে।
 কর্মপরিষদের নেতাকর্মী ও বহিরাগত ক্যাডারদের নিয়ে অধ্যক্ষকে ধাওয়া করছেন মঈন তুষার (ডান দিকের বৃত্তে) ও যোবায়ের (বাম দিকের বৃত্তে)
প্রতক্ষদর্শী সূত্র জানান, ১২ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার সকাল পৌনে বারোটার দিকে অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্র দত্ত তার নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে যান। এ সময়ে অস্থায়ী ছাত্র কর্মপরিষদের সহসভাপতি মঈন তুষারের নেতৃত্বে কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ সংলগ্ন পেট্রোল পাম্প এলাকায় অধ্যক্ষর গতিরোধ করে। অধ্যক্ষকে গালাগাল দিয়ে ও কর্মীদের উস্কানী দিয়ে কিছুটা দুরে অবস্থান নেয় মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাত। এ সময় কর্মপরিষদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক জোবায়ের আলম, সদস্য সাদ্দাম হোসেন শোভন ও ছাত্রলীগ কর্মী সোহাগ অধ্যক্ষকে ঘিরে ধরে কিলঘুষি ও মারধর শুরু করে। অধ্যক্ষ দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেও রেহাই পাননি, তাকে ধাওয়া করে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক একটি মোটর সাইকেলে করে তাকে বাসভবনে পৌছে দেয় হামলাকারীরা।
 অধ্যক্ষকে মারধর করছে তুষারের সাথে আসা ক্যাডাররা, পিছনে যোবায়ের (লাল বৃত্তে)
মঈন তুষার অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আমাদের বরিশাল ডটকমকে বলেন, ওই ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। শুনেছি নতুন অধ্যক্ষ বহিরাগতদের সাথে নিয়ে কলেজে প্রবেশ করার সময় সাধারন শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া করেছে।
তবে অধ্যক্ষকে ধাওয়া করার সময় তোলা ছবিতে তাঁর থাকার ব্যাপারটি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান ।
এদিকে অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনাটি সচিত্র আমাদের বরিশাল ডটকমসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠে।
 অধ্যক্ষকে মারধর করছে তুষারের সাথে আসা ক্যাডাররা, সাথে যোবায়ের (লাল বৃত্তে)
শিক্ষামন্ত্রী এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন। আর এর পরপরই বুধবার দুপুরে বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন বহিরাগত চার যুবককে নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায়ে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় ছবি দেখে সোহাগ ওরফে পাসপোর্ট সোহাগ, মো. সোহেল, মিরাজ ও জহিরুল ইসলামকে কৌশলে ডেকে বাসায় আনা হয়। পরে তাঁর (মেয়রের) নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে থানায় সোর্পদ করা হয়।
তবে ছবিতে বিএম কলেজের ছাত্র ও কর্মপরিষদের নেতাদের স্পষ্ট দেখা গেলেও তাদের পুলিশে দেননি কেন এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, হামলাকারীরা সকলে বহিরাগত বলে দাবি করেন মেয়র হিরন। এরপর এ ব্যাপারে আর কোন প্রশ্নেরও উত্তর দেননি তিনি।
আমাদের বরিশাল ডটকমের অনুসন্ধানে, হামলার সময়ের তোলা ছবি ও ভিডিও দেখে হামলার সাথে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার বহিষ্কৃত যুগ্ম আহবায়ক ও অস্থায়ী কর্মপরিষদের সহসভাপতি মঈন তুষার, কর্মপরিষদের সাধারন সম্পাদক (জিএস) নাহিদ সেরনিয়াত, কর্মপরিষদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক জোবায়ের আলম ও সদস্য সাদ্দাম হোসেন শোভনকে চিহ্নিত করা গেছে। আর এরা সকলেই বিসিসি মেয়র হিরনের অনুগত বলে বরিশালে পরিচিত। এছাড়া অধ্যক্ষকে মারধরের প্রায় দু’ঘন্টা পর এসকল চিহ্নিত হামলাকারীদের নিয়ে মেয়র দুপুর আড়াইটার দিকে অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে একাত্তর মঞ্চে বসেছিলেন।
 অধ্যক্ষকে পেটানোর দু’ঘন্টা পর মুলহোতা মঈন তুষার, নাহিদ সেরনিয়াবাদ ও জোবায়ের আলমকে সাথে নিয়ে টাউন হল চত্বরে বসে আছেন মেয়র হিরন (১২ ফেব্রুয়ারী দুপুর ৩টায় তোলা ছবি)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএম কলেজের এক দায়িত্বশীল শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, সাবেক অধ্যক্ষের বদলী প্রত্যাহারে কর্মপরিষদের এই আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত রয়েছে। তারা সাবেক অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসের অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই মুহুর্তে সাবেক অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস চলে গেলে ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীসহ শিক্ষকরা সমস্যায় পড়বেন। তাই তারা কলেজে অচলবাস্থা সৃষ্টি করে। আর এই আন্দোলনে পিছন থেকে সমর্থন দিচ্ছেন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ।
অধ্যক্ষের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে মামলা করেছে। অধ্যক্ষ নিজে বাদী না হওয়ায় এ মামলা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, মুলহোতাদের বাঁচানোর জন্য পুলিশকে বাদী করা হয়েছে এ মামলায় ।
অপরদিকে মামলার বাদি উপ-পরিদর্শক আবু তাহের আমাদের বরিশাল ডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ হয়তো মানসিকভাবে মামলা করার জন্য প্রস্তুত নন, তাই মামলা করেননি। কিন্তু এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলায় মুলহোতা ও অন্যান্য চিহ্নিতদের কেন নামোল্লেখ করা হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু ছবি দেখে তো সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়না।’
উল্লেখ্য, আর্থিক অনিয়ম ও অডিট আপত্তিসহ বিভিন্ন কারনে গত ৩০ জানুয়ারী বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসকে খুলনার বিএল কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শাস্তিমুলক বদলী করে। ৩ ফেব্রুয়ারী রোববারের মধ্যে তাকে বিএল কলেজে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ আদেশের খবর আসার সাথে সাথেই কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস তার মেয়াদকালে বিএম কলেজের ছাত্র সংসদ (বাকসু)’র সংবিধান সংশোধন করে বরিশালের প্রভাবশালী এক নেতার অনুগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিকল্প ছাত্র কর্ম পরিষদ গঠন করে বিতকির্ত হয়ে পড়েন। বিতর্কিত এ কর্মপরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অধ্যক্ষ কৌশলে ওই কমিটি বাতিল করেননি, আবার মেয়াদও বৃদ্ধি করেননি। আর এ সুযোগে কর্মপরিষদের নেতারা কলেজের ছাত্র সংসদের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে তুলে নিয়েছেন।
এ সম্পকির্ত পূর্বের সংবাদঃ
চার যুবক আটক, জড়িতদের গ্রেপ্তারে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ
যোগদান করতে আসায় অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর!
বিএম কলেজে আন্দোলনের নামে কর্মপরিষদের অরাজকতা!
অধ্যক্ষর বদলী ঠেকাতে
শ্রেনীকক্ষে তালা ঝুলিয়ে কর্মপরিষদের সড়ক অবরোধ, ভাংচুর
কলেজ ভবনে তালা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে আন্দোলনে কর্মপরিষদ !
বিএম কলেজ অধ্যক্ষকে বদলী, ছাত্রলীগের একাংশের বিক্ষোভ
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতারা
‘অবৈধ কর্মপরিষদ গঠনের জন্য মেয়র ও অধ্যক্ষ দায়ী’
বাকসু’র সংবিধান সংশোধন করে
অনিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষের কর্ম পরিষদ গঠন!
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |