বিএম কলেজে কর্মপরিষদের অরাজকতা যোগদান করতে আসায় অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর!
 যোগদান করতে আসায় নবাগত অধ্যক্ষকে কিলঘুষি মারছে মেয়র হিরনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা (ছবিঃ আমাদের বরিশাল ডটকম)
বরিশাল :: বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দত্ত যোগদান করতে আসলে তাকে মারধর করেছে ছাত্র সংসদের আদলে সাবেক অধ্যক্ষের গঠন করে যাওয়া অস্থায়ী ছাত্র কর্ম-পরিষদের নেতাকর্মীরা। ১২ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ সংলগ্ন পেট্রোল পাম্প এলাকায় কর্ম পরিষদের সহসভাপতি ও ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষারের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা এ হামলা চালায়। ওই ঘটনায় দ্বিতীয়বারের মত অধ্যক্ষ যোগদান না করে রাস্তা থেকে ফিরে গেছেন। এদিকে সাবেক অধ্যক্ষর বদলী ঠেকাতে লাগাতার আন্দোলন করছে মেয়র হিরনের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে নিয়ে গঠিত অস্থায়ী ছাত্র কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা।
প্রতক্ষদর্শী সূত্র জানান, সকাল পৌনে বারোটার দিকে অধ্যক্ষ তার নতুন কর্মস্থালে যোগদানের জন্য যান। এ সময়ে কলেজের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে অস্থায়ী ছাত্র কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা প্রধান সড়কের টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেছিল। অধ্যক্ষ যোগদান করতে আসছে এ খবর শুনে কর্মপরিষদের সহসভাপতি ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহবায়ক মঈুন তুষারের নেতৃত্বে কলেজ সংলগ্ন পেট্রোল পাম্প এলাকায় অধ্যক্ষর গতিরোধ করে। এ সময়ে কর্মপরিষদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক জোবায়ের আলম, সদস্য সাদ্দাম হোসেন শোভন ও ছাত্রলীগ কর্মী সোহাগ অধ্যক্ষকে ঘিরে ধরে কিলঘুষি দেয়। এসময় মারধরে সাথে যোগ দেয় তাদের সাথে থাকা বহিরাগতরাও। অধ্যক্ষ দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেও রেহাইপাননি, তাকে পেট্রোল পাম্পের ভিতরে ধাওয়া করে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে ওই নেতাদের একটি মোটর সাইকেলে বসিয়ে নগরীর শীতলাখোলাস্থ তার বাসভবনে জোড় করে পৌছে দেয়। এরপর কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের সাথে নিয়ে লাঠি, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রসাশনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে মহড়া দেয়।
 যোগদান করতে আসায় নবাগত অধ্যক্ষের উপর হামলার পর অধ্যক্ষ দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে তাকে ধাওয়া করে পেট্রোল পাম্পে নিয়ে মারধর করে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা (ছবিঃ আমাদের বরিশাল ডটকম)
অধ্যক্ষ শঙ্কর চন্দ্র দাস আমাদের বরিশাল ডটকমকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিদের্শ দ্বিতীয়বারের মত কলেজে যোগদান করতে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের একাংশ নিয়ে গঠিত কর্মপরিষদের নেতারা আমার উপরে হামলা করে। এতে তিনি আহত হয়েছেন। বাহিরে একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এখন বাসায় অবস্থান করছেন। পুরো বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারী তিনি প্রথমবার কলেজে দোগদান করতে এসে বাঁধার মূখে পড়েন। ওই পুরো বিষয়টি জানিয়ে তিনি ফ্যাক্সের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে যোগদান পত্র পাঠিয়ে দেন।
ছাত্রলীগ কলেজ শাখার বহিষ্কৃত যুগ্ম আহবায়ক ও অস্থায়ী কর্মপরিষদের সহসভাপতি মঈন তুষার ওই ঘটনায় তার নিজের জড়িত থাকার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, ওই ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। শুনেছি নতুন অধ্যক্ষ বহিরাগতদের সাথে নিয়ে কলেজে প্রবেশ করার সময় সাধারন শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া করেছে।
কর্মপরিষদের সাধারন সম্পাদক (জিএস) নাহিদ সেরনিয়াত আমাদের বরিশাল ডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে সাধারন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করি সে জন্য সাধারন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাশে আমাদের থাকতে হয়। বহিরাগতদের সাথে নিয়ে ক্যম্পাসে ঢোকার চেস্টা করলে অন্দোলনকারীরা তাকে ধাওয়া করেছে।
ছাত্রলীগ কলেজ যুগ্ম আহবায়ক মাকসুদ আলম মাসুদ অধ্যক্ষকে মারধরের নিন্দা জানিয়ে বলেন, অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রলীগ নামধারী কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা মারধর করেছে। অবৈধ এ কর্মপরিষদের নেতাকর্মীদের পুলিশও কিছু বলেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরো জানান, অধ্যক্ষ মারধরের ঘটনায় তার সংগঠন ও কলেজের সাধারন শিক্ষার্থীরা লজ্জিত, ব্যাথিত ও ক্ষুদ্ধ।
অপরদিকে সাধারন শিক্ষার্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বরিশালের মেয়র হিরনের অনুসারী হওয়ায় তারা ক্যাম্পাসে অরাজকতা চালালেও কর্তৃপক্ষ বা প্রসাশন কিছু বলেনা। কর্মপরিষদ টানা ১৩ দিন কলেজের ভবন ও প্রধান ফটকগুলোতে তালা আটকিয়ে সশস্ত্র মহড়া দিলেও পুলিশ না দেখার ভান করছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শামসুদ্দিন আমাদের বরিশাল ডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্র দত্ত ক্যাম্পাসের বাইরে হামলার শিকার হয়েছেন। সকাল থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান।
এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার কলেজের ২ শতাধিক সাধারন শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলনের নামে অরাজকতা বন্ধ এবং কলেজের ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবীতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিএম কলেজের এক শ্রেনীর ছাত্রের অরাজকতার কারনে কলেজের শিক্ষার পরিবেশে নষ্ট হচ্ছে, সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অধ্যক্ষের বদলীজনিত কারনে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারেনা, তেমনি নতুন অধ্যক্ষের যোগদানও বিলম্বিত হতে পারেনা। এ অবস্থায় কলেজের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপি প্রদানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, কর্মপরিষদের কারনে কলেজে অচলাবস্থা চলতে থাকলে তারাও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
এদিকে সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ননী গোপাল দাসের বদলীর আদেশ বাতিল করতে অনুরোধ জানিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আর্থিক অনিয়ম ও অডিট আপত্তিসহ বিভিন্ন কারনে গত ৩০ জানুয়ারী বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসকে খুলনার বিএল কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শাস্তিমুলক বদলী করে। ৩ ফেব্রুয়ারী রোববারের মধ্যে তাকে বিএল কলেজে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ আদেশের খবর আসার সাথে সাথেই কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস তার মেয়াদকালে বিএম কলেজের ছাত্র সংসদ (বাকসু)’র সংবিধান সংশোধন করে বরিশালের প্রভাবশালী এক নেতার অনুগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিকল্প ছাত্র কর্ম পরিষদ গঠন করে বিতকির্ত হয়ে পড়েন। বিতর্কিত এ কর্মপরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অধ্যক্ষ কৌশলে ওই কমিটি বাতিল করেননি, আবার মেয়াদও বৃদ্ধি করেননি। আর এ সুযোগে কর্মপরিষদের নেতারা কলেজের ছাত্র সংসদের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে তুলে নিয়েছেন।
এ সম্পর্কিত পূর্বের সংবাদঃ
বিএম কলেজে আন্দোলনের নামে কর্মপরিষদের অরাজকতা!
অধ্যক্ষর বদলী ঠেকাতে
শ্রেনীকক্ষে তালা ঝুলিয়ে কর্মপরিষদের সড়ক অবরোধ, ভাংচুর
কলেজ ভবনে তালা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে আন্দোলনে কর্মপরিষদ !
বিএম কলেজ অধ্যক্ষকে বদলী, ছাত্রলীগের একাংশের বিক্ষোভ
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতারা
‘অবৈধ কর্মপরিষদ গঠনের জন্য মেয়র ও অধ্যক্ষ দায়ী’
বাকসু’র সংবিধান সংশোধন করে
অনিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষের কর্ম পরিষদ গঠন!
সম্পাদনা: সেন্ট্রাল ডেস্ক |