বিএম কলেজের অধ্যক্ষকে পেটালো ছাত্রলীগ চার যুবক আটক, জড়িতদের গ্রেপ্তারে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ
 যোগদান করতে আসায় নবাগত অধ্যক্ষকে কিলঘুষি মারছে মেয়র হিরনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা (১২ ফেব্রুয়ারী তোলা ছবি)
বরিশাল :: সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের নতুন অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্র দত্তকে মারধরের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন বহিরাগত চার যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তবে অধ্যক্ষকে মারধরের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাতকে নিয়ে মেয়র মারধরের পরপরই একসাথে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও তাদের পুলিশে দেননি তিনি। এতে অধ্যক্ষের উপর হামলায় মেয়রের পরোক্ষ সমর্থনের কথাও তুলেছেন অনেকে।
পুলিশে দেয়া চার যুবক হলো- সোহাগ ওরফে পাসপোর্ট সোহাগ, মো. সোহেল, মিরাজ ও জহিরুল ইসলাম।
এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুরে অধ্যক্ষ শংকর দত্ত কারো নাম উল্লেখ না করে কোতোয়ালি মডেল থানায় পিটিয়ে আহত ও লাঞ্চিত করার বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ জমা দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে নবাগত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়। তিনি এতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ প্রধানকে নির্দেশও দিয়েছেন।
জানাগেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ সংলগ্ন পেট্রোল পাম্প এলাকায় সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ননী গোপাল দাসকে বহাল রাখার দাবিতে ছাত্র সংসদের আদলে সাবেক অধ্যক্ষের গঠন করে যাওয়া অস্থায়ী ছাত্র কর্ম-পরিষদের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্র দত্তকে মারধর করে। এসময় অস্থায়ী কর্মপরিষদের সহসভাপতি মঈন তুষার নতুন কলেজ অধ্যক্ষকে কর্মপরিষদের নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের দেখিয়ে দিয়ে দুরে সরে যায়।
 অধ্যক্ষকে পেটানোর পর মেয়র হিরনের সাথে টাউন হল চত্বরে বসে আছে ছাত্রলীগ ক্যাডার মঈন তুষার, নাহিদ সেরনিয়াবাদ ও জোবায়ের আলম (১২ ফেব্রুয়ারী দুপুর ৩টায় তোলা ছবি)
মেয়র শওকত হোসেন হিরন চারজনকে ধরে কোতোয়ালি মডেল থানায়ে নিয়ে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় ছবি দেখে চারজনকে কৌশলে ডেকে বাসায় আনা হয়। পরে তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। তবে ছবিতে বি এম কলেজের ছাত্র ও কর্মপরিষদের নেতাদের দেখা গেলেও তাদের পুলিশে দেননি তিনি। এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, হামলাকারীরা সকলে বহিরাগত বলে দাবি করেন মেয়র হিরন।
তবে হামলার সময়ের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখে হামলার সাথে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার বহিষ্কৃত যুগ্ম আহবায়ক ও অস্থায়ী কর্মপরিষদের সহসভাপতি মঈন তুষার, কর্মপরিষদের সাধারন সম্পাদক (জিএস) নাহিদ সেরনিয়াত, কর্মপরিষদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক জোবায়ের আলম ও সদস্য সাদ্দাম হোসেন শোভনকে চিহ্নিত করা গেছে। আর অধ্যক্ষকে মারধরের পর এসকল চিহ্নিত হামলাকারীদের নিয়ে মেয়র দুপুর আড়াইটার দিকে অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে প্রায় ঘন্টাখানেকের মত ছিলেন।
 অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করছে মেয়র হিরন সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ছবিতে লাল বৃত্ত চিহ্নিত বিএম কলেজের অস্থায়ী কর্মপরিষদের ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক জোবায়ের আলম (ছবিঃ আমাদের বরিশাল ডটকম)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দায়িত্বশীল শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, সাবেক অধ্যক্ষের বদলী প্রত্যাহারে কর্মপরিষদের এই আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত রয়েছে। তারা সাবেক অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসের অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই মুহুর্তে সাবেক অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস চলে গেলে ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীসহ শিক্ষকরা সমস্যায় পড়বেন। তাই তারা কলেজে অচলবাস্থা সৃষ্টি করে। আর এই আন্দোলনে পিছন থেকে সমর্থন দিচ্ছেন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ।
অধ্যক্ষ শংকর দত্তের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ৩০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে বিএম কলেজের আগের অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসকে খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক পদে এবং তাকে (শংকর দত্ত) বিএম কলেজের বদলি করা হয়। মঙ্গলবার কলেজে যাওয়ার পথে অজ্ঞাত পরিচয় কিছু যুবক তাকে লাঞ্ছিত করেছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার আবেদন জমা দিয়েছেন।
সহকারী পুলিশ কমিশানার অশোক কুমার নন্দী বলেন, লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে রজ্জু করা হবে। সেই মামলায় চার জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
উল্লেখ্য, আর্থিক অনিয়ম ও অডিট আপত্তিসহ বিভিন্ন কারনে গত ৩০ জানুয়ারী বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাসকে খুলনার বিএল কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শাস্তিমুলক বদলী করে। ৩ ফেব্রুয়ারী রোববারের মধ্যে তাকে বিএল কলেজে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ আদেশের খবর আসার সাথে সাথেই কর্মপরিষদের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। অধ্যক্ষ ননী গোপাল দাস তার মেয়াদকালে বিএম কলেজের ছাত্র সংসদ (বাকসু)’র সংবিধান সংশোধন করে বরিশালের প্রভাবশালী এক নেতার অনুগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিকল্প ছাত্র কর্ম পরিষদ গঠন করে বিতকির্ত হয়ে পড়েন। বিতর্কিত এ কর্মপরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অধ্যক্ষ কৌশলে ওই কমিটি বাতিল করেননি, আবার মেয়াদও বৃদ্ধি করেননি। আর এ সুযোগে কর্মপরিষদের নেতারা কলেজের ছাত্র সংসদের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে তুলে নিয়েছেন।
এ সম্পকির্ত পূর্বের সংবাদঃ
যোগদান করতে আসায় অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর!
বিএম কলেজে আন্দোলনের নামে কর্মপরিষদের অরাজকতা!
অধ্যক্ষর বদলী ঠেকাতে
শ্রেনীকক্ষে তালা ঝুলিয়ে কর্মপরিষদের সড়ক অবরোধ, ভাংচুর
কলেজ ভবনে তালা, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
অধ্যক্ষের বদলী ঠেকাতে আন্দোলনে কর্মপরিষদ !
বিএম কলেজ অধ্যক্ষকে বদলী, ছাত্রলীগের একাংশের বিক্ষোভ
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতারা
‘অবৈধ কর্মপরিষদ গঠনের জন্য মেয়র ও অধ্যক্ষ দায়ী’
বাকসু’র সংবিধান সংশোধন করে
অনিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষের কর্ম পরিষদ গঠন!
সম্পাদনা: বরিশাল ডেস্ক |